টালমাটাল পরিস্থিতিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে -টাইম ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রতিবেদন

রাজনৈতিক টালমাটালে বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের সিনিয়র এক নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রাজপথে প্রতিবাদ দানা বেঁধেছে। অবনতি হয়েছে সহিংস পরিস্থিতির। অজ্ঞাত হামলাকারীদের গুলিতে আহত হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তিনি। তার ওপর চালানো হামলাকে পণ্ড হত্যাচেষ্টা বলা হচ্ছে। এর একদিন পর গতকাল সকালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। সরকারবিরোধী প্রতিবাদকারীরা কমপক্ষে দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রিয়াজ রহমানের ওপর হামলায় আন্তর্জাতিক মহল থেকে সমালোচনা এসেছে। টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় তিনি স্তব্ধ এবং ব্যথিত।’ রিয়াজ রহমানের ওপর ওই হামলার প্রতিবাদে খালেদা জিয়ার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গতকাল হরতাল ডাকে। এর আগে বুধবার সরকারবিরোধী প্রতিবাদকারীরা একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়ে। এতে এক শিশুসহ নিহত হন চার যাত্রী। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে এ মাসের শুরুতে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয় যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কোন ধরনের সরকারবিরোধী সমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলকে বাধা দেয়। গত বছরের নির্বাচনের বছরপূর্তিতে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি ও তাদের জোট। ওই নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়া ও তার সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছে বারবার। এদিকে কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে নতুন নির্বাচনের আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে। একই রকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিরোধীদলীয় এক সিনিয়র নেতাকে গুলি করার পর সরকারবিরোধীরা রাজপথের আন্দোলন তীব্র করেছে। বুধবার সকালে একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলায় এক শিশুসহ কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মাসে সরকার তাকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রেখে সব ধরনের বিরোধী রাজনৈতিক দলের র‌্যালি নিষিদ্ধ করেছে। পুলিশ বলেছে, সহিংসতার কারণে তারা আটক করেছে বিরোধী দলের শ’ শ’ কর্মীকে। অন্যদিকে বিরোধীদের ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে সরকার। বিএনপি নেতারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তারপর থেকে তাদের রাজপথ বেছে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বিএনপি গত বছরের নির্বাচন বর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিএনপির পূর্ব পরিকল্পিত জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজন রিয়াজ রহমানকে গুলি করেছে। তাকে চার রাউন্ড গুলি করা হয়েছে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি নামকরা হোটেলের কাছে। এরপর হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ বলেছে, তারা এ ঘটনা তদন্ত করছে। অন্যদিকে এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এ হামলার জন্য সরকারের এজেন্টদের দায়ী করেছেন। তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে। ওদিকে রিয়াজ রহমানের ওপর হামলায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ।

No comments

Powered by Blogger.