অপহরণ করে দুই শিশুছাত্রকে হত্যা

মোস্তফা কামাল,আব্দুর রহিম
(লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শিশু নিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আবদুর রহিমের হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী–অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করা হয় l ছবি: প্রথম আলো) গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অপহরণের পর দুই স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। কালিয়াকৈরে অপহরণের পাঁচ দিন পর গত সোমবার মোস্তফা কামালের (৮) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিন হাতীবান্ধায় অপহরণের চার ঘণ্টা পর আবদুর রহিম ওরফে উল্লাসের (৭) লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মোস্তফা কামাল কালিয়াকৈরের মাউন্ট এভারেস্ট মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম জয়নাল আবেদিন। আর আবদুর রহিম হাতীবান্ধা শিশু নিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। র‌্যাব, পুলিশ ও নিহত শিশুদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈরের সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন জয়নাল আবেদিন। তিনি উপজেলার রতনপুর এলাকার করণী িনট কম্পোজিট কারখানার সেম্পলম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৪ জানুয়ারি বিকেলে চাচাতো ভাই রুবেল হোসেন (২৫) চকলেট খাওয়ানের কথা বলে মোস্তফাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ওই দিন রাতে জয়নাল আবেদিনের কাছে মুঠোফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার জয়নাল বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই সঙ্গে বিষয়টি র‌্যাবকে জানানো হয়। র্যাবের সদস্যরা মুঠোফোন কলের সূত্র ধরে সোমবার রাতে উপজেলার সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকা থেকে রুবেলকে আটক করেন। রুবেল ওই এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ঘরের সিলিংয়ের ওপর থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মোস্তাফার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই বাড়ির মনসুর আলী মাতব্বর (৫৫), জাহাঙ্গীর আলম (৪২) ও এক নারীকে (৩৪) আটক করে র‌্যাব। মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় নিহত শিশুর বাবা মামলা করেছেন।
হাতীবান্ধায় স্কুলছাত্র আবদুর রহিম হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলো দক্ষিণ সিংগীমারী গ্রামের জুয়েল (১৭), সজীব (১৬), সোহাগ (১২), আলমগীর (১৪) ও সৌখিন (১৪। তারা জানায়, তারা আবদুর রহিমকে খুঁজতে গিয়েছিল। তার ঝুলন্ত লাশ দেখে তারাই এলাকার লোকজনকে বিষয়টি জানিয়েছে। পুলিশ ও নিহত শিশুর পারিবারিক সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় রহিম। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকার জন্য একটি ব্যাংকের হিসাব নম্বর দিয়ে আরেকটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়। টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা রহিমকে হত্যা করে। পরে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত দোতলা ভবনের একটি জানালার রডের সঙ্গে রহিমের ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন সরকার জানান, সোমবার রাত ১০টায় রহিমের বাবা নুরুজ্জামান অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় দক্ষিণ সিঙ্গীমারী গ্রামের পাঁচজনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ওই রাতেই আটক করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.