মাঠে নেমেই কিরণকে কেজরিওয়ালের গোল

মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ডে যা করা হয়নি, দিল্লিতে তা কেন করা হলো? কেন সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষিত হলো সদ্য বিজেপিতে ঢোকা কিরণ বেদীর নাম? তাও আবার রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে? দিল্লি নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজধানীর রাজনৈতিক অলিন্দে এখন এই প্রশ্নগুলোই ঘুরেফিরে উঠছে। বিশেষ করে বিজেপিতে। কারণ, কিরণ বেদীকে নিয়ে যা ঘটে গেল দলটিতে, তেমনটা কখনো হয়নি।
সংক্ষেপে বলা যায়, দেশের প্রথম নারী আইপিএসকে নিয়ে বিজেপিতে উৎসাহ যতটা, আশঙ্কাও ততটাই। এক বছর আগেও তিনি ছিলেন নরেন্দ্র মোদির তিক্ত সমালোচক। তা ছাড়া অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে তাঁকে দলে নেওয়ার প্রশ্নেও দ্বিমত তীব্র। তার ওপর কিরণের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কোনোকালেই কোনো সংশ্রব ছিল না। শেষ পর্যন্ত এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়, কিরণকে দলে নেওয়া হোক, কিন্তু জিতলে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে এই ঘোষণা যেন না করা হয়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি তাও মানেননি।
মোদি-শাহ জুটির যুক্তি, আম আদমি পার্টির (এএপি) মোকাবিলা করতে গেলে কিরণের মতো একজন পরিচিত অরাজনৈতিক মুখের প্রয়োজন আছে। দিল্লিতে বিজেপির নেতাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সামলাতে উপযুক্ত। কিরণ বেদী কতটা উপযুক্ত সে পরের কথা, গতকাল মঙ্গলবারই কিন্তু কেজরিওয়াল তাঁকে এক গোল দিয়ে দিলেন। কিরণ বেদীকে দ্বৈরথে স্বাগত জানিয়ে সাতসকালেই কেজরিওয়াল প্রস্তাব দিলেন, ভোটের আগে ঘণ্টা দুয়েকের টেলিভিশন বিতর্কে কিরণ বেদী তাঁর সঙ্গে বসুন। মানুষ দেখুক, বিচার করুক, সিদ্ধান্ত নিক। কিরণ বেদী প্রথমে রাজি হয়েও এক ঘণ্টার মধ্যেই মত বদলালেন। পিছু হটে বললেন, বিতর্ক হলে তা বিধানসভায় হবে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রার্থী অজয় মাকেন অবশ্য বিতর্কে রাজি। কিন্তু কেজরিওয়ালের টার্গেট কিরণ বেদী!
রাজধানীর রাজনীতি গতকাল গমগম করেছে সারাটা দিন ধরেই। আগের রাতেই কেজরিওয়াল জেনে গেছেন, বিজেপি নতুন দিল্লি কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে কিরণ বেদীকে দাঁড় করায়নি। প্রার্থী করেছে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্নাতক ৩০ বছরের নূপুর শর্মাকে। ঠিক ছিল, মঙ্গলবারই সকাল ১০টায় ‘রোড শো’ শুরু করবেন কেজরিওয়াল। নরেন্দ্র মোদি যেখান থেকে স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেছিলেন, সেই বাল্মীকি মন্দির থেকেই শুরু হয় রোড শো। সেখান থেকে জামনগর হাউস মাত্র সাত কিলোমিটার। কিন্তু কেজরিওয়ালকে ঘিরে যে জনপ্লাবন দেখা দিল, যে উন্মাদনা, অনেক দিন তা অদৃশ্য ছিল। ফলে সময়মতো জামনগর হাউসে পৌঁছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াই তাঁর হলো না। আজ বুধবার জমা দেবেন। এই রোড শো থেকেই অবশ্য কেজরিওয়াল বেঁধে দিলেন নির্বাচনের আবহ সংগীতের সুর। উদ্বেলিত জনতাকে বললেন, এটা সাধারণ কোনো ভোট নয়। এটা ধর্মযুদ্ধ। এই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে সত্য, অন্যদিকে অসৎ ও দুর্নীতিবাজেরা। পাশাপাশি কিরণ বেদী বলছেন, লড়াই উন্নয়ন বনাম নৈরাজ্যের।

No comments

Powered by Blogger.