সংঘাতপূর্ণ দেশে হস্তক্ষেপে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন -জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশ

(রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। এরপরই সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: ফোকাস বাংলা >প্রথম আলো) বাংলাদেশ গতকাল বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপকারীর ভূমিকা পালনে জাতিসংঘকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএন হাই-লেভেল ইনডিপেনডেন্ট প্যানেল অন পিস অপারেশন যৌথভাবে ঢাকা সেনানিবাসের কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ‘এশিয়া রিজিওনাল কনসালটেশনস অন ইউএন পিস অপারেশনস’ শীর্ষক দুই দিনের পরামর্শ সভার উদ্বোধনী বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ওই আহ্বান জানান।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার লিখিত বক্তৃতায় বলেন, বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দেয়াকে বাংলাদেশ তার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি পিসবিল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে হাই-লেভেল প্যানেলের সঙ্গে কাজ করাকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এবং এই হাই-লেভেল প্যানেল যেসব বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দেবে সে বিষয়ে তার ভাষায় ব্যাপকভিত্তিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে তিনি পাঁচ দফা তুলে ধরেন, যা নিচে তুলে ধরা হলো-
প্রথমত, অতীতের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্য ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
দ্বিতীয়ত, আমরা বিশ্বাস করি যে, হাই-লেভেল প্যানেল বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা কেবল পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন আনবে না। চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে যেটা ভাল খাপ খায় সে রকমই তারা পদক্ষেপ নেবে। প্যানেলের মনোযোগ দেয়া উচিত, সেসব এলকায় যেখানে ব্যবধান বা ব্যর্থতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে।
তৃতীয়ত, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম যাতে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রভাব ফেলতে পারে সেজন্য জাতিসংঘের তদারকিতে একই সঙ্গে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পও হাতে নিতে হবে। শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যে সমন্বয় সাধনের স্বার্থে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা-সংক্রান্ত ব্যবস্থাবলীর পর্যালোচনাও প্রয়োজন।
চতুর্থত, শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও সর্বোচ্চ উদ্বেগের বিষয় রয়ে গেছে। হাই-লেভেল প্যানেলের এসব সুপারিশ বিবেচনায় নিতে হবে যে, যাতে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা রক্ষাকবচ দৃঢ় থাকে। এই লক্ষ্যে যে কোন বেসরকারি সশস্ত্র গ্রুপের দ্বারা হুমকি প্রদানকারীদের বিচার, শাস্তি ও নিরস্ত্রকরণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পঞ্চমত, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চিরাচরিত দায়িত্ব থেকে সংঘাতপূর্ণ কোন দেশে হস্তক্ষেপকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে জাতিসংঘকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এটা করতে গিয়ে জাতিসংঘের মূল মূল্যবোধ যাতে অক্ষুণ্ন থাকে। আর সেটা হলো [সদস্য রাষ্ট্রের] সম্মতি গ্রহণ, নিরপেক্ষতা এবং আত্মরক্ষা ব্যতিরেকে শক্তি প্রয়োগ না করার নীতি বজায় রাখা।
শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী কিংবা নিরাপত্তার হুমকির সঙ্গে জড়িত বেসরকারি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আইনি প্রক্রিয়ায় এনে শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হোসে রামোস হোর্তা ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। মাহমুদ আলী বলেন, ঐকমত্য, নিরপেক্ষতা, আত্মরক্ষার্থে শক্তির ব্যবহার-জাতিসংঘ সনদের এসব মূলনীতিকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.