নেপালি পার্লামেন্টে মারামারি

নেপালের পার্লামেন্টের ভেতরে হাতাহাতি। মারামারি। পার্লামেন্ট সদস্যরাই এ সংঘর্ষ শুরু করেন। এখানেই শেষ নয়। প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্ট সদস্যরা চেয়ার, টেবিল, মাইক্রোফোন তুলে তা ছুড়ে মারতে থাকেন। বিরোধীরা তা নিয়ে আক্রমণ করেন সরকারদলীয় সদস্যদের ওপর। চরম এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় পার্লামেন্ট অধিবেশন চলা অবস্থায়। বাধ্য হয়ে স্পিকার গতকাল পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন। কিন্তু ততক্ষণে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে রাজপথে। ভাঙচুর শুরু হয়েছে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার। এতে ক্ষমতাসীন দল নেপালি কংগ্রেসের নেতা খড়গ প্রসাদ ওলি সহ কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন পার্লামেন্টারিয়ান। এর প্রতিবাদে মাওবাদীরা গতকাল  হরতাল আহ্বান করে। এতে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানের খসড়া নিয়ে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে চলতে থাকে অধিবেশন। এতে ওই সংবিধান ভোটে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬০৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীনদের রয়েছে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন। ফলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এ বিল পাস করতে পারে। এতে বাদ সাধে মাওবাদীরা। তারা পার্লামেন্টে সংখ্যালঘিষ্ট হলেও তাদের দাবি সংবিধান পাস হতে হবে সর্বসম্মতিক্রমে। প্রস্তাবিত সংবিধানে মাওবাদীদের অধিকারকে খাটো করা হয়েছে। তাই এতে নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করে তাদেরকে দিতে হবে অধিকতর ক্ষমতা। প্রস্তাবিত সংবিধানটি আগামীকাল পাস হয়ে আইনে পরিণত হওয়ার কথা। এ সংবিধান নিয়ে ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধীরা যখন উত্তপ্ত তর্কে মত্ত তখনই পার্লামেন্টের স্পিকার তা ভোটে দেয়ার প্রস্তাব করেন। এ ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাওবাদী নেতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা পার্লামেন্টের মাইক্রোফোন তুলে ছুড়ে মারতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা চেয়ার, টেবিল শূন্যে তুলে তা ছুড়ে মারেন। উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নেপাল। ওই বছর মাওবাদীরা গেরিলা যুদ্ধে ইস্তফা দিয়ে শান্তির পথে, মূলধারার রাজনীতির পথে ফিরে আসে। তারপর থেকে নেপাল পেয়েছে ৬ জন প্রধানমন্ত্রী। হয়েছে দুটি জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন সংবিধানের বিষয়ে সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। আগামীকালের মধ্যে নতুন সংবিধান প্রণয়নের শেষ সময়। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল পর্যন্ত পার্লামেন্ট মুলতবি হয়ে যায়। ফলে এ সময়সীমার মধ্যে নতুন সংবিধান চূড়ান্ত আকার না পাবার আশঙ্কাই বেশি। এবার যখন নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখন মাওবাদীরা বলছে, তাদের অধিকারকে খর্ব করে দেখা হচ্ছে। সোমবার রাতে পার্লামেন্টের  ভেতরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর অধিবেশন মুলতবি করা হয়। তবে সংঘর্ষ থেমে থাকে নি। তা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে। সঙ্গে সঙ্গে মাওবাদী দলগুলো হরতাল আহ্বান করে। সব স্কুল, কলকারখানা, মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করে তারা। দেশটির পুলিশ বলেছে, তারা বাস, ট্রাক, প্রাইভেট গাড়ি ভাঙচুরের কারণে কমপক্ষে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নেপালের মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রাজধানী কাঠমান্ডুর পথে পথে জ্বলন্ত টায়ারের স্তূপ। গাড়িশূন্য রাস্তা। এ আন্দোলনে মাওবাদীদের নেতৃত্বে রয়েছে ১৯ দলীয় জোট। তারা  আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।  এর মধ্যে রয়েছে ইউসিপিএন-মাওবাদী, জয়েন্ট মধেশী ফ্রন্ট ও অন্যান্য দল। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে সিপিএন-ইউএমএল নেতৃত্বাধীন জোট। বিরোধীদের আহূত হরতালে গতকাল নেপালের স্কুল, কলেজ, মার্কেট ছিল বন্ধ। কোন পরিবহন চলাচল করে নি। হরতাল উপেক্ষা করে রাজপথে নামার কারণে কাঠমান্ডুর কাছে ললিতপুর শহরে একটি ট্যাক্সি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

No comments

Powered by Blogger.