উদীয়মান বাজারের সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি করেছে

বিশ্ব অর্থনীতিতে উদীয়মান বাজারগুলোর সামগ্রিক সূচকে অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। ‘২০১৫ অ্যাজিলিটি এমার্জিং মার্কেটস লজিস্টিকস ইনডেক্স’-এ বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়ে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছে। সূচকে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। এক ধাপ এগিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছে সৌদি আরব। বাজার আকৃতি ও বিকাশ, সুসংগতি (কমপ্যাটিবিলিটি) ও সংযোগ ব্যবস্থা (কানেকটেডনেস) এ তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সূচকে ৪৫টি উদীয়মান বাজার পর্যালোচনা ও র‌্যাংকিং করা হয়ে থাকে। সোমবার ‘অ্যাজিলিটি’র ওয়েবসাইটে ৭৫ পৃষ্ঠার বিস্তারিত সূচক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ নিয়ে বলা হয়, অব্যাহত অর্থনৈতিক বিকাশ এবং উন্নতি হতে থাকা সামাজিক সূচক বাংলাদেশকে ৩১তম অবস্থান থেকে ২৮-এ নিয়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতির নির্দেশক-বাজার উপযুক্ততা, সংযোগ এবং অবকাঠামো ও বাণিজ্য যোগসূত্র উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য উন্নতি হয়েছে। কয়েক বছর ধরে দেশটির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ। চীনের পর দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রপ্তানিকারক। আর ভারতের উদাহরণ ব্যবহার করে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার উন্নয়ন শিল্প গড়ে তুলছে। বাজার সংযোগ অবস্থান সহ-সূচকে গত বছরের সর্বশেষ অবস্থান থেকে এবার কিছুটা এগিয়েছে  এ দেশ। শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটি পোশাক আমদানির জন্য ক্রেতাদের শীর্ষ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। এ ক্রমবিকাশ ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে। ৪৫টি দেশের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়েছে এমন ১০টি রাষ্ট্রের পৃথক তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে। প্রধান সূচকে চীন ও সৌদি আরবের পর যথাক্রমে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান। আর তালিকার শেষ তিন দেশ হলো- কেনিয়া, কম্বোডিয়া ও উগান্ডা। সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ ও ২০১৩ তে ব্রিকস ভুক্ত (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) রাষ্ট্রগুলোর নৈপুণ্য ছিল হতাশাজনক। এবারের সূচকে আধিপত্য দেখা গেছে এশিয়ার দেশগুলোর। শীর্ষ দশে রয়েছে এশিয়ার চার দেশ। আর শীর্ষ বিশে সাতটি। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ওমান সেরা বাজার সংগতির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাজার সংযোগের ভিত্তিতে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, চীন, ওমান, সৌদি আরব ও চিলি। এতে ইঙ্গিত মেলে অগ্রসরমান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এ দেশগুলোতে। পরবর্তী সারির অর্থনীতি বাজার বলে বিবেচিত বাংলাদেশ সহ ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানও সূচকে ওপরে উঠেছে। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সূচকে অবনতি হয়েছে কুয়েত ও বাহরাইনের। দেশ দুটি যথাক্রমে ৩ ও ২ ধাপ পিছিয়ে ২১ ও ২৪-এ রয়েছে। সূচকে সব থেকে অবনতি হয়েছে লিবিয়ার। সাত ধাপ নিচে নেমে তাদের অবস্থান ৪০-এ। অর্থনীতির বাজারের অগ্রগতি নিরূপণে উল্লিখিত তিনটি মানদণ্ডের পাশাপাশি পর্যালোচনা করা হয় বিশ্বের প্রায় হাজারো বাণিজ্য ও লজিস্টিকবিষয়ক পেশাদার নির্বাহী পরিচালিত জরিপসমূহের তথ্য। সূচক গঠনে তথ্য-উপাত্ত নেয়া হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও তার অঙ্গ সংগঠন, প্রতিটি দেশের সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে। এ বছর নিয়ে এটা ষষ্ঠ বার্ষিক সূচক। প্রতিবেদনে অগ্রসরমান রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আইএমএফ’র পরামর্শ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অগ্রসরমান বাজারে বিস্তৃত ও দ্রুত প্রগতির চাবিকাঠি হলো ‘উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান সরিরে ফেলে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে ভ্যালু চেইনের ওপরের দিকে উঠতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।

No comments

Powered by Blogger.