সঙ্কট উত্তরণে ফের সংলাপের তাগিদ কূটনীতিকদের

রাজনৈতিক সঙ্কটের উত্তরণে ফের সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন ঢাকাস্থ বিদেশী কূটনীতিকরা। একই সঙ্গে চলমান সহিংসতার নিন্দাও জানিয়েছেন তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ডিপ্লোমেটিক ব্রিফিংয়ে ওই তাগিদ দেয়া হয়। দেশের সামপ্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশী দূতদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, জাপান অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাস বা হাইকমিশনের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা’য় দুপুরে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে ফিরে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক এক বিবৃতিতে দেশের চলমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে গঠনমূলক রাজনৈতিক সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বলেন, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাস করে, গঠনমূলক সংলাপই বাংলাদেশের উন্নতি নিশ্চিত করবে। বিবৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের কথাও বলা হয়। বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিয়ে গতকাল এবং সম্প্রতি সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে তার মতবিনিময়ের কথাও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার। ৫ই জানুয়ারির বহুল আলোচিত নির্বাচনের বছরপূর্তিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে বিরোধী ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে দেশব্যাপী চলা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ, সেই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা, বিরোধী নেতাদের ওপর আক্রমণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যৌথবাহিনীর অভিযানে জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল বিভিন্ন রাষ্ট্র, জোট ও সংস্থার তরফে  এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে ওই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানানো হয়েছে। সহিংস ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সঙ্কটের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান’ বিশেষ করে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছে বিশ্ব সমপ্রদায়। গত ১৪ই জানুয়ারি ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের জোটের ঢাকাস্থ প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দেশের সংঘাতময় ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ এবং ‘গণতন্ত্র চর্চার স্থান সঙ্কুচিত হওয়া’য় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেদিনের আলোচনায় ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার, আন্দোলন-সমাবেশ’-এর পথ রুদ্ধ না করতে ইউরোপের দূতরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারা সব রকম সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে এ পথ পরিহার করে ‘কার্যকর সংলাপ’-এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, গতকালের ব্রিফিংয়ে পর্ব ও পশ্চিমের দূতরা সেই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থা নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। মানুষের জান, মাল ও নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্র দপ্তরে ফিরে সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানে তিনি বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার গতকালের পর্বে গত এক বছরে সরকারের সাফল্য ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। কূটনীতিকরা সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এগুলো গণতন্ত্র পরিপন্থি। সহিংস কর্মকাণ্ড করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায় না। গত ১৪ই জানুয়ারি ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আলোচনার বিষয়েও গণমাধ্যমকে অবহিত করেন পররাষ্ট্র সচিব। এ সময় সচিবের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান ব্রিফিংয়ে সংলাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা? জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘নানান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ পররাষ্ট্র সচিব জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা ও জামায়াতকে ত্যাগ করার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে যে দু’টি রেজ্যুলেশন নিয়ে এসেছিলো তা ব্রিফিংয়ে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী। সচিব বলেন, ‘সমপ্রতি গণমাধ্যমে আসা বিএনপির দু’টি জালিয়াতি নিয়ে কূটনীতিকরা জানতে চাইলে সেগুলো ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে স্পষ্ট করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’ কূটনীতিকরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির প্রশংসা করেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, অগ্রগামী দেশ হিসেবে  বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন তারা। আজ ওআইসি, সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত  দেশের কূটনীতিকদের মন্ত্রী ব্রিফ করবেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.