পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে -নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করলেন খালেদা

চলমান অবরোধ কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। টানা ১৬ দিন নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর গতকাল সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। রোববার গভীর রাতে অকষ্মাৎ পুলিশ তার কার্যালয়ের সামনে থেকে ব্যারিকেড তুলে নিলে গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। খালেদা জিয়া অবরোধ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি এবং দ্রুত সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সারা দেশে বিভিন্ন নৈরাজ্যের ঘটনায় সরকার জড়িত অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিরোধী জোটের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশ-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ সরকার রুদ্ধ করে দেয়ার পর আমরা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। কর্মসূচি চলছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। সব প্রতিকূলতার মধ্যে, নির্যাতন সয়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য বিএনপিসহ ২০ দলের সব স্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা যদি শুভবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে আমার কার্যালয় থেকে গতকাল (রোববার) গভীর রাতে বিনা ঘোষণায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে থাকে তাহলে আমি তা স্বাগত জানাই। আমি তাদের হিংসা ও নাশকতা, অন্তর্ঘাত ও জুলুমের পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই। অত্যাচার, দমন অভিযান, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা বন্দিদের মুক্তি দিন। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর থেকে সব বাধা তুলে নিন। যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তা স্বাভাবিক করুন। মানুষকে স্বস্তি ও শান্তি দিন। উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতি বন্ধ করুন। জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিন এবং অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনারা জানেন, আমাকে এখানে অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই ক্ষমতাসীনরা সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল সব যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। এরপর আমি গত ৫ই জানুয়ারি এই কার্যালয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করলে আমাদের তালাবন্দি করে রাখা হয়। ট্রাক, জলকামান, সাঁজোয়া যান দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় আমাদের ওপর নিষিদ্ধ পেপার স্প্রে ছোড়া হয়। এর বিষক্রিয়ায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কি অমানবিক আচরণ আমাদের ওপর করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমি বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাই না। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা জানেন- অতীতের ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ধরে আমাদের এবং দেশবাসীর ন্যূনতম অধিকারগুলো কিভাবে হরণ করা হয়েছে। কিভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা চালানো হয়েছে। কেমন জঘন্য ও উস্কানিমূলক ভাষায় আমাদের ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে। তার পরেও আমরা বারবার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেছি। তারা আমাদের আহ্বান ও প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে অস্ত্রের ভাষায় সব দমিয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করেছে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মিছিলের ওপর গুলি করেছে। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। কর্মসূচি চলছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কোন সুযোগ না দিতে ক্ষমতাসীনরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতাসীনদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরাও হামলা করছে। এর মধ্যে গুলিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশ-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশি প্রহরার মধ্যে নারী, শিশু, ছাত্রছাত্রীদের বহনকারী যানবাহনে পেট্রল বোমা মেরে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হতাহত ও দগ্ধ করা হয়েছে। এসব পৈশাচিক বর্বরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি ও ২০ দল নিরীহ নিরপরাধ জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর আক্রমণে বিশ্বাস করে না। জনগণকে পুড়িয়ে মারার নৃশংস অপতৎপরতায় বিশ্বাস করে না। মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না। কখনও করিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগই অতীতে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে ও লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং পুলিশ খুনের অপরাজনীতি করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখনও তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও অত্যাচারের পথ প্রশস্ত করছে। খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বোমাবাজদের গ্রেপ্তার না করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে। মহিলাসহ পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে। এসব হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের আগামী দিনে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতীত নিরপেক্ষ ঐতিহ্য বহাল রেখে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনও তালাবন্ধ। দলের নেতাকর্মীরা কেউ নিরাপদে বাসায় থাকতে পারে না। হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের ওপর গুলি করা হয়েছে। তার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবিহউদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। আমাদের দলের অফিস অনেক জায়গায় পোড়ানো হয়েছে। কাউকে ধরা হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অনেক জায়গায় অস্ত্র, বোমা ও গুলিসহ ধরা পড়েছে। তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতি আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের চলমান সঙ্কট নিছক কোন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এটি রাজনৈতিক সঙ্কট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি প্রথমেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গত ১৬ দিন ধরে আমার এই অফিসের সামনে খোলা আকাশের নিচে তীব্র শীত, বৃষ্টি ও কুয়াশা উপেক্ষা করে রাস্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পেশাগত কর্তব্য পালন করেছেন। নানা কড়াকড়ি ও সেন্সরশিপ উপেক্ষা করে সবাইকে দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। টিভি সেটের সামনে বসে কিংবা সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার জন্য উৎকণ্ঠিত দেশবাসীর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশী-বিদেশী বন্ধুরা, অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠন উদ্বেগ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমাদের দল-জোটের নেতাকর্মী সারা দেশে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন ধন্যবাদ তাদেরকেও।
পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খালেদার
কার্যালয়ের সামনে থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দল কোন সমাবেশের অনুমতি চাইবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের একটি কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচি চলবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কি দাবি সেটা আমি আমার বক্তব্যে বলেছি। আমরা চেয়েছি সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন। আর ভোট দেয়ার অধিকার। আমরা ভোট দেয়ার অধিকার ছিনিয়ে আনতে চেয়েছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রভাবিত হয়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বলে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার ব্যাপারে খালেদা জিয়া বলেন, কোন সাংবাদিক আমাকে পীড়াপীড়ি করেনি। সাংবাদিকদের যে দায়িত্ব তারা তা পালন করেছেন। আমাদের অবরোধ কর্মসূচি দিতে বাধ্য করেছে সরকার, সাংবাদিকরা নয়। অবরোধ তুলে নেয়ার পর এখন বাসায় যাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এটা আমার অফিস। অফিসে আমার কাজ আছে। আমি আমার কাজ করব। এছাড়া আমার যখন যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাব। যদি যেতে পারি, যদি বাধা দেয়া না হয় তখন বোঝা যাবে অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে কি না। ২০ দল অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার আগে কিছু হয়নি কিন্তু পরে সারা দেশে জ্বালাও পোড়াও হচ্ছে তাই তার দায়ভার জোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে তিনি কেন নেবেন না? একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগই সব সময় এসব কাজ করে। কেন, তারা আগে করেনি? আওয়ামী লীগ আগেই বিভিন্ন জেলায় আমাদের কার্যালয় পুড়িয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যা করেছে, রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও করেছে। করেনি? আমরা কখনও গানপাউডার ও বোমা ব্যবহার করি নি। আওয়ামী লীগ অতীতেও এসব করেছে, এখন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে করছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সারওয়ারী রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
হঠাৎ সরে গেল ব্যারিকেড
গতরাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ করেই দীর্ঘ ১৬ দিন পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থেকে বিনা ঘোষণায় ব্যারিকেড তুলে নিয়েছে পুলিশ। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কয়েক গজ উত্তর দিকে আড়াআড়িভাবে রাখা দুটি পুলিশভ্যান ও দক্ষিণ দিকে রাখা একটি জলকামানের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ। প্রত্যাহার করা হয় কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্যদের। ৮৬ নম্বর সড়কের দুই প্রান্তে পুলিশের তল্লাশি চৌকিও সরানো হয়। তবে মোতায়েন রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ। পুলিশে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়ার পর কার্যালয়ের ভেতর থেকে একটি ও বাইরে থেকে আরেকটি গাড়ি গেটের সামনে আড়াআড়ি করে দাঁড় করায় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিএসএফ। এদিকে ভোর ৫টার দিকে ফের পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। তবে এবার পুলিশ উত্তর দিকে ১০০ মিটার দূরে পার্কের কোনায় ও দক্ষিণে একটি গলির ভেতরে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি বাসে করে নারী পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। তারাও কার্যালয়ের কিছুদূরে অবস্থান নেন। এর পর থেকে কার্যালয়টির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা। দিনভর তারা ছিলেন সতর্ক অবস্থানে। দিনভর গুমোঢ় পরিস্থিতির মধ্যে পার হলেও সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। দীর্ঘদিন পর সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। কার্যালয়টিতে অবস্থানরত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, গতরাত ৪টা পর্যন্ত ম্যাডামের সঙ্গে আমরা জেগে ছিলাম। কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের ব্যারিকেড সরালেও বিরোধী জোটকে দমন করতে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৭৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি চলাকালে  ম্যাডাম কার্যালয়েই অবস্থান করবেন। রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। এদিকে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পাশাপাশি নতুন করে মোতায়ন করা হয়েছে র‌্যাব। প্রস্তুত রাখা হয় এপিসি কার, প্রিজন ভ্যান, সাঁজোয়া যান ও পুলিশ ভ্যান। গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর খালেদা জিয়া নয়াপল্টন যেতে পারেন এমন সংবাদ থেকেই নয়াপল্টনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয় বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
আপাতত কার্যালয়েই থাকছেন খালেদা
জলকামান ও পুলিশ ভ্যানের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়া হলেও আপাতত গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই থাকছেন বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া নিজেই সে ইঙ্গিত দেন। উল্লেখ্য, গত ৩রা জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এর পরপরই কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্ধশতাধিক নারী পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয় কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পথরোধ করে পুলিশ। প্রায় আধাঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ফের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। পূর্ব ঘোষিত ৫ই জানুয়ারির সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে শনিবার রাত ১২টার পর থেকেই একে একে কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুই পাশে এনে রাখা হয় ১১টি ইট ও বালুভর্তি ট্রাক। এরপর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ৫ই জানুয়ারি দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টায় কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নামেন তিনি। এ সময় বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি থেকে বের হয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ওই দিন সন্ধ্যার পর পেপার সেপ্রর গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতেই একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দল কার্যালয়ে প্রবেশ তাকে চিকিৎসা দেন। ৬ই জানুয়ারি কার্যালয়ের দুই পাশে বালু ও ইটের ট্রাক সরিয়ে নেয়া হয়। ৩রা জানুয়ারি থেকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আল-আমিন ডিউ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদসহ মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী।

No comments

Powered by Blogger.