ডেথ স্কোয়াড পরিচালনা করতেন রাজাপাকসের ছোট ভাই

শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের ছোটভাই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাভায়া রাজাপাকসে পরিচালনা করতেন একটি ‘ডেথ স্কোয়াড’। তিনিই সানডে লিডার নামের সুপরিচিত সংবাদপত্রের সম্পাদক লাসান্থা বিক্রমাসিংকে খুন করিয়েছেন। গোটাভায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে গতকাল এসব কথা বলেছে পুলিশের মুখপাত্র অজিত রোহানা। রাজধানী কলম্বো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অজিত রোহানা বলেছেন- সাবেক জন সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী মারভিন সিলভা শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে লাসান্থা বিক্রমাসিংয়েকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক গোটাভায়া।  সম্পাদক লাসান্থার পত্রিকায় রাজাপাকসের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। এ পত্রিকায় রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক অনেক লেখা প্রকাশ করা হতো। তাতে গোটাভায়া তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে তাকে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়। পুলিশের মুখপাত্র অজিত রোহানা বলেন, আমরা গোটাভায়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ গ্রহণ করেছি। তাতে তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অপহরণ, হামলা ও হত্যার অভিযোগ। এতে সুস্পষ্টভাবে তিনটি হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি হলো লাসান্থা বিক্রমাসিংয়ে হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া গোটাভায়ার বিরুদ্ধে ডেথ স্কোয়াড পরিচালনার অভিযোগও আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে, তার ভাই গোটাভায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যরা শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এসব দুর্নীতি, বিশেষ করে পুরনো বিমান কেনা ও সামরিক বাহিনীর অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে তার কড়া সমালোচনা করা হয় ‘সানডে লিডার’ পত্রিকায়। এতে সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেন লাসান্থা বিক্রমাসিংয়ে। তাকে হত্যার পর সন্দেহের আঙ্গুল তোলা হয়েছিল তৎকালীন সরকারের দিকে। কিন্তু সরকার তা অস্বীকার করে। কিন্তু শনিবার ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে অভিযোগ করা হলো পুলিশে তাতে তা নতুন মোড় নিতে পারে। ৮ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হন মাহিন্দ রাজাপাকসে। তারপর থেকেই তার বিরুদ্ধে দেশটির দুর্নীতি বিরোধী কমিশনে অভিযোগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ। এমনকি ক্ষমতা হারানোর পর পরই মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে গুরুতর এক অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনে পরাজয় আঁচ করতে পেরে তিনি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি সেনারা। এরপরই তিনি স্বীকার করে নেন পরাজয়। গত এক দশকে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে। এ নিয়ে বাইরের বিশ্ব সোচ্চার। কিন্তু বার বারই সরকার তা অস্বীকার করেছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করে দেয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছে। মারভিন সিলভা তার অভিযোগে বলেছেন, হোয়াইট ভ্যান অপহরণের মূল হোতা ছিলেন গোটাভায়া। একটি সাদা ভ্যানে করে বহু সংখ্যক মানুষকে অপহরণ করা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। পরে ওইসব মানুষের মৃতদেহ ফেলে রাখা হয় একটি সড়কের পাশে। এরপর থেকেই ওই ঘটনার নাম হয়ে যায় ‘হোয়াইট ভ্যান’। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বলা হয়, ২০০৯ সালের মে মাসের শেষের দিকে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে। তারই ফলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। এখনও স্বেচ্ছায় নির্বাসনে বসবাস করেন নিরপেক্ষ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীরা। রাজাপাকসের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, তার বাহিনী তামিল যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে কমপক্ষে ৪০ হাজার বেসামরিক তামিলকে হত্যা করেছে। এখন দেশটিতে ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি ঐকমত্যের কথা বলেছেন। বলেছেন, যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যে নৃসংশতা চালিয়েছে তার তদন্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.