আশার কথা শোনালেন প্রধান বিচারপতি

দল-মত নির্বিশেষে সব আইনজীবীর কাছ থেকেই সংবর্ধনা পেলেন নতুন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। রোববার কানায় কানায় পূর্ণ প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আশার কথা শোনালেন তিনি। জানালেন, তিনি কাজ করবেন বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য। মামলা জট কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে কিছু পথও বাতলিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন সব মহলের। সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। সংবর্ধনার জবাবে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে আমরা স্বাধীন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নিম্ন আদালতের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে পারবো, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া নিম্ন আদালতে বদলি ও বাধ্যতামূলক অবসর হতে দেবো না। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে নিয়োগ পরীক্ষার খাতা দেখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। সেখানে চুল পরিমাণ ফাঁক নেই।... বিচার বিভাগে প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, হবেও না। আমরা একটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছি। ভারতে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে ফেয়ার আরও কিছু করা যায় কি-না আলোচনার মাধ্যমে তা দেখা হবে। বেঞ্চ গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ একটি একক বৈশিষ্ট্যের, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাষ্ট্র হিসেবেও বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনার এই নিয়োগে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। বিচার বিভাগের এক মহাসঙ্কটকালে আপনি বিচার অঙ্গনের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আপনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিচার অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করে বিচার বিভাগের ওপর বিচার প্রার্থীদের আস্থা পুনর্জাগরণ হতে পারে বলে আমরা আশা করি। আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, দেশে আজ চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তাদের অতি আনুগত্য প্রদর্শন করার জন্য ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করছে। একেকটি মামলায় শত থেকে হাজার আসামি দেখানো হচ্ছে। আর এর সুযোগে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে অবাধে গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছে। গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঐ মামলায় আসামিগণ হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আসেন। কিন্তু ইদানীং আপিল বিভাগের আগাম জামিন সংক্রান্ত একটি রায় আপিল বিভাগের পূ্‌র্ববর্তী রায় থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এবং যে রায়টি লিভ প্রদান না করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের ব্যাপারে প্রদত্ত রায়। এর আলোকে হাইকোর্টে কোন কোন বেঞ্চ আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে। হাইকোর্ট বিভাগ অবশ্যই পুলিশের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন হতে রক্ষার জন্য আগাম জামিনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবেন বলে আমরা মনে করি। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার নিয়োগে আজ সংবিধানের একটি মূলস্তম্ভ অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটলো। অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে আমাদের এ বাংলাদেশের ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য আছে। পাকিস্তানে যখন বিচারপতি রানা ভগবান দাসকে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়, তখন সেখানে বহু সংখ্যক লোক আন্দোলন করেছিল এই বলে যে, মুসলিম অধ্যুষিত দেশের দেশে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেতে পারেন না। কিন্তু আপনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আপামর জনসাধারণ আজ আনন্দিত।

No comments

Powered by Blogger.