নাট্যচর্চা- শতবর্ষী নাট্য সংগঠন by শাহাবুল শাহীন

(ছবি-১ গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সম্প্রতি ছবিটি তোলা l ছবি-২ গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার কার্যালয় l প্রথম আলো) শীতের সকাল। চারদিকে ঘন কুয়াশা। এর মধ্যেই উড়িয়ে দেওয়া হলো সাদা পায়রা। কুয়াশার চাদর ভেদ করে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছিল পায়রাগুলো। এ সময় বেজে উঠল বাদ্যযন্ত্র। যন্ত্রের তালে তালে এগিয়ে চলল শোভাযাত্রা। এভাবেই ১২ ডিসেম্বর ‘১০০ বছর পূর্তি উৎসব’ উদ্যাপনের সূচনা করেছে গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন ‘গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা’। নাট্য সংগঠনটি এবার ১০৩ বছর পূর্ণ করেছে। তবে সময়মতো শতবর্ষপূর্তির আয়োজন করতে না পারায়, এবারই ‘১০০ বছর পূর্তি উৎসব’ উদ্যাপন করছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সাখাওয়াত হোসেন খান মঞ্চে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বরেণ্য শিল্পী ও সাংস্কৃতিক দল জারিগান, ভাটিয়ালি, লালনগীতি, কাওয়ালি পরিবেশন করছে। চলছে কবিতা আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশনা। গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস ও সংগঠনটির নানা প্রকাশনা থেকে জানা যায়, ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় ঘাঘট নদের তীরে গড়ে ওঠে এই নাট্য সংগঠনটি। এক একর নয় শতক জমিতে গড়ে ওঠা সংগঠনটির প্রথম নাম ছিল জর্জ করোনেশন ক্লাব। ১৯১৪ সালে সংস্থার কার্যালয় সরিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র ডিবি রোডে নেওয়া হয়। শুরুতে সংগঠন গড়তে অর্থ ও জমি দেন তৎকালীন জমিদার দৌলত ডাকুয়ার স্ত্রী পলকজান বিবি, রসুলপুরের জমিদার জ্ঞানেন্দ্র মোহন মণ্ডল, চণ্ডীপুরের জমিদার রহিমন্নেছা বিবি, ব্যবসায়ী জগৎ চন্দ্র সরকার, হাজি কাবিল মোহাম্মদ সরকার প্রমুখ। আর সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বসন্ত কুমার মুখার্জি, হেরেম্বনাথ মল্লিক, কিশোরী বল্লভ চৌধুরী, আহম্মদ উদ্দিন তালুকদার প্রমুখ। প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরে সংগঠনটির নাম বদলে জর্জ করোনেশন ড্রামাটিক অ্যাসোসিয়েশন (জিসিডিএ) করা হয়। পরে আরেক দফা নাম পরিবর্তন করে গাইবান্ধা কালচারাল অ্যান্ড ড্রামাটিক ক্লাব (জিসিডিসি) করা হয়। ১৯৮০ সালে সেই নামও বদলে গাইবান্ধা নাট্য সংস্থা রাখা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে নামকরণ করা হয় ‘গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা’।
প্রথম দিকে সংগঠনটি পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। বোর্ডের প্রধান ছিলেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক। সংগঠনের নির্বাহী পদটির নাম ছিল ‘ম্যানেজার’। প্রথম বোর্ডপ্রধান ছিলেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এ পি পিটার্স। প্রথম ‘ম্যানেজার’র দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা বেণীমাধব দাস।
১৯৫০ সালের দিকে ‘বোর্ডপ্রধান’ পদ বিলুপ্ত করে সভাপতি ও ‘ম্যানেজার’ পদটি বিলুপ্ত করে সাধারণ সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হয়। গাইবান্ধার সমাজসেবক সাখাওয়াত হোসেন খান (ছকু মিয়া) প্রথম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। শুরুর দিকে মহকুমা প্রশাসক ও পরে জেলা প্রশাসকেরা পদাধিকারবলে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
অসংখ্য নাটকের সফল মঞ্চায়নের কৃতিত্ব রয়েছে সংগঠনটির। এর মধ্যে ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত জাতীয় নাট্যোৎসবে নাটক মঞ্চায়ন করে পুরস্কৃত হয় এ সংগঠন।
গত কয়েক বছর নানা আইনি জটিলতায় সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে। গত মে মাসে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া রাগীব হাসান চৌধুরী বলেন, নানা কারণে শতবর্ষের অনুষ্ঠান হয়নি। এবার ১০০ বছর পূর্তি উৎসব করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সংগঠনের উদ্যোগে সংগীত, নৃত্য ও নাটক বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনার কথা জানালেন রাগীব হাসান।

No comments

Powered by Blogger.