২০১৫ সালও থাকবে অস্থির

ইরাকের বাগদাদে ভারী অস্ত্র হাতে এক শিয়া মিলিশিয়া। রয়টার্স
রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট কিংবা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সাইবার যুদ্ধ-২০১৪-এর শেষ দিনগুলোর এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এ বছরের মতো ২০১৫ সালও অস্থির থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যুদ্ধ, ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা অবরোধ কিংবা ভয়াবহ ইবোলা ভাইরাসের দাপট আসছে বছরেও চলবে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নতুন কোনো সমস্যা যে মাথাচাড়া দেবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। খবর রয়টার্সের। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউয়ের সাবেক কর্মকর্তা জন ব্যাসেট এ বিষয়ে বলেছেন, এমন একটি গোলযোগপূর্ণ বছরের পর স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করে যে নতুন বছরটি শান্ত হবে। তবে এ বছর যেসব সমস্যার শুরু হয়েছে, তার একটিরও শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়নি। এই অশান্তির কারণ কয়েকটি। এর মধ্যে আছে পশ্চিমা বিশ্বের হাত থেকে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া, নতুন প্রযুক্তি, আঞ্চলিক বৈরিতা আর দিন দিন বাড়তে থাকা ধনবৈষম্য। বিদায়ী বছরের জুন মাসে ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০০৭ সালের পর সপ্তম বছরের মতো এবার বিশ্ব শান্তি পরিস্থিতির ক্রমাবনতি অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠানটি গত নভেম্বরে জানায়, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় জঙ্গি হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ঠিক এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা তাদের সামরিক বাজেটে কাটছাঁট করায় এসব ঘটনাকে সামরিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতাও কমে গেছে। পশ্চিমা নীতিনির্ধারকেরা ভাবছেন, নিষেধাজ্ঞাজনিত অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উচ্চাশা পূরণ ব্যাহত হবে। তবে অনেকে আবার মনে করেন,
এতে বরং পুতিন আরও বেপরোয়া হয়ে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সাবেক পাইলট এবং বর্তমানে ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অব ওয়ারের জ্যেষ্ঠ ফেলো ক্রিস্টোফার হারমার বলেন, এর ফলে রাশিয়ার আচরণের কোনো পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না। এদিকে চীনও তার সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। দেশটি তেল ও গ্যাস সম্পদে পূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের পূর্ণ মালিকানা দাবি করে। এখানে অংশীদারত্বের দাবিদার আরও আছে ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান। আবার পূর্ব চীন সাগরে এক দ্বীপ নিয়ে চীন-জাপান উভয়ের মালিকানার দাবি দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে ব্যাপকভাবে। ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে দূরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কৌশল ইসরায়েলকে বেশি দিন সন্তুষ্ট রাখতে পারবে না বলেই মনে করা হয়। পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে একটি চুক্তির সময় পিছিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এর পরে ইসরায়েলকে তার সামরিক অভিযান থেকে বিরত রাখা অসম্ভব হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬-এর সাবেক সহকারী প্রধান নাইজেল ইঙ্কস্টার বলেন, ‘ইরান সমঝোতায় পৌঁছবে কি না, তা সতি৵ই একটি ‘যদি’র ওপর নির্ভর করছে। আর এর ফলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।’ পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য এবং তুরস্ক ও রাশিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করা। আবার আইএসবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল-আসাদের সঙ্গে তারা আদৌ কোনো দূরত্ব রাখতে পারবে কি না, সেটিও বড় প্রশ্ন। এসব প্রকৃত যুদ্ধের পাশাপাশি আগামী বছর বিশ্বকে ইবোলা নামের এক ভয়াবহ ব্যাধির সঙ্গেও যুঝতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.