‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় চীন’

সঙ্কট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং ঐক্যের তাগিদ দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী- এমন খবর সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা মন্ত্রীর বৈঠক সূত্রে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রতিনিধির বিদায়ের অল্প পরে তার সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ আলী এ দাবি করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আমাদের অতিথি। দেশের যে কোন নাগরিকের সঙ্গে তিনি দেখা করতে পারেন। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের জানানো হয়েছে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে এমন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চায় চীন। মাহমুদ আলীর কাছে প্রশ্ন ছিল ‘সমস্যা’ বলতে চীনের মন্ত্রী চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন কিনা? সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে যে সমস্যা আসবে সেটি সমাধানে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। যে কোন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চীন দেখতে চায় বলেও পুনরুল্লেখ করেন মাহমুদ আলী। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেত্রীর সঙ্গে চীনা প্রতিনিধির বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ৫ই জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। সমপ্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চীনের অবস্থানের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্রে প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক কোন ইস্যু এসেছে কিনা- এমন একাধিক প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন- না, রাজনৈতিক কোন ইস্যু আলোচনায় আাসেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্রবন্দরে চীনের বিনিয়োগের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে মর্মে গতকাল চীনা এক টেলিভিশন খবর প্রচার করে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন। বাংলাদেশের যে কোন প্রয়োজনে চীন পাশে থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যে আশ্বাস দিয়েছেন সেটি উল্লেখ করে এক সাংবাদিক জানতে চান ‘জরুরি প্রয়োজন’ বলতে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজন হল ‘উন্নয়ন’। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে উচ্চ ফলনশীল ধানের প্রযুক্তি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে প্রচুর চাল উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার পর সরকার ভারতের ত্রিপুরায় চাল রপ্তানির চিন্তা করছে। চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপনের প্রাক্কালে (২৭-২৯শে ডিসেম্বর) বাংলাদেশে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেন মাহমুদ আলী। ওই সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি আলোচনায় স্থান পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছরের আয়োজন উপলক্ষ্যে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোন ঐতিহাসিক বিবেদ নেই: এদিকে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক বিবাদ ও সংঘাত ছিল না বলে জানিয়েছেন সফর করে যাওয়া চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার ঢাকা সফরের বিষয়ে সোমবার চীনা এক টেলিভিশনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত রোববার বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে ওয়াং ই বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার। তিন দিনের সফর শেষে গতকাল ঢাকা ছাড়েন ওয়াং ই। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।
রাজনৈতিক ঐক্যের তাগিদ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর: বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্যের তাগিদ দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই। বলেছেন যত তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপিত হবে তত তাড়াতাড়ি দেশটির উন্নয়ন ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। এ জন্য  বিরোধীদলীয় নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বড় বড় রাজনৈতিক দল নিয়ে তাকে কাজ করার আহ্বান জানান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল সকালে প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে রওশন এরশাদ বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন সেক্টরে চীনকে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান  জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের ফলে এক দিকে যেমন দেশের উন্নয়ন হবে পাশপাশি  কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। বৈঠক শেষে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বা কোন দেশের অভ্যন্তরীর বিষয় নিয়ে আগ্রহ নেই  চীনের। তারা  বাংলাদেশে অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায়। চায় বিনিয়োগ বাড়াতে। বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন যত তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপিত হবে তত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ উন্নয়ন ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। এ জন্য বিরোধীদলীয় নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফখরুল ইমাম এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কু জুয়ান ঝু।

No comments

Powered by Blogger.