ভৈরবে মাথা উদ্ধারের ঘটনায় সুমনা ও নজরুল রিমান্ডে

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরিবহন ব্যবসায়ী নবী হোসেন হত্যাকা‌ণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া সুমনা বেগম ও নজরুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-২–এ হাজির করে তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। বিচারক হামিদুল ইসলাম শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমনা ও নজরুল হত্যাকা‌ণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এখন জানা দরকার, কতজন লোক নিয়ে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁদের বিশ্বাস, লম্বা সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বাকি লোকজনের নাম ও পরিচয় পাওয়া যাবে এবং খুনের প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।
গত রোববার ভোরে পৌর শহরের চিজণ্ডবের দক্ষিণপাড়া মহল্লার শহীদ জিয়া তোরণ এলাকার একটি আস্তাকুঁড় থেকে নবীর মাথা ও পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়কসেতু এলাকা থেকে হাত ও পা উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পৌর শহরের মালাগুদাম এলাকা থেকে হাত-পা-মাথাবিহীন একটি খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভৈরব শহর থেকে রাসেল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গত রোববার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিজেশ্বর এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম (৩৮) ও সুমনা বেগম (৩০) নামে নবীর আরও দুই পূর্বপরিচিত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ খুন হওয়া ব্যবসায়ীর মাথা ও হাত-পা উদ্ধার করে।
সহকারী পুলিশ সুপার (বাজিতপুর সার্কেল) মৃত্যুঞ্জয় দে ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন নজরুল ও সুমনা। নজরুল ও সুমনার ভাষ্য অনুযায়ী সহকারী পুলিশ সুপার জানান, দুজনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা। দুজনের মধ্যে একসময় প্রেম ছিল।
পরে সুমনার অন্যত্র বিয়ে হয়। এরপর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে সুমনা তাঁর একটি কন্যাসন্তান নিয়ে ভৈরবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এর মধ্যে নবীর সঙ্গে সুমনার প্রেম হয়। তবে কিছুদিন ধরে নজরুল ও সুমনার মধ্যে আবার সম্পর্কের উন্নতি হয়। নবী তাঁদের সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুমনার বাসায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে হত্যার পর লাশ কয়েক টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে সেগুলো ফেলা হয়।
নবীর স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, সুমনা নামের নবীর দূর সম্পর্কের এক বোন আছে বলে তিনি জানেন। তবে তাঁদের দুজনের মধ্যে আর কোনো সম্পর্কের কথা তাঁর জানা নেই।
সুমনা যে বাসায় থাকতেন, সেই বাড়ির মালিক রওশন আরা বেগম বলেন, সুমনা চার বছর ওই বাসায় থাকতেন। স্বামী পরিচয়ে নবী প্রায়ই এখানে আসতেন। ভাড়া ও সংসার খরচ তিনিই দিতেন। তবে ইদানীং নবী আর ঠিকমতো সংসারের খরচ দিচ্ছেন না বলে জানিয়ে গত বুধবার বাসা ছেড়ে চলে যান সুমনা।

No comments

Powered by Blogger.