সাগরের তলদেশে থাকতে পারে নিখোঁজ এয়ার এশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার নিখোঁজ বিমানটি সাগরের তলদেশে থাকতে পারে। দেশটির অনুসন্ধান ও উদ্ধারবিষয়ক সংস্থার প্রধান বামবাং সোইলিসটিও এ কথা বলেছেন। তবে রোববার এয়ার এশিয়ার এয়ারবাস এ-৩২০-২০০ ইন্দোনেশিয়ার সুরাবাইয়া থেকে ১৬২ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর কেটে গেছে পুরো দুদিন। কিন্তু গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমানটি ও এর আরোহীদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কেউ কিছুই বলতে পারে নি। ধারণা করা হচ্ছে, আরোহীদের সবাই মারা গেছেন। অনেকে এ ঘটনাটিকে মালয়েশিয়ার এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এ বিষয়ে একমত নন। তিনি মনে করেন এমএইচ ৩৭০ এর মতো এটা কোন রহস্য নয়। এ বিমানটি খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে। ওদিকে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজ থেকে বর্ধিত এলাকায় শুরু হচ্ছে এ অভিযান। বিমানটি সুরাবায়া থেকে উড্ডয়নের ৪২ মিনিট পরেই এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি যাচ্ছিল সিঙ্গাপুর। সর্বশেষ বিমানটিকে দেখা গিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার বেলিতুং ও বোর্নিওর পোনতিয়ানাক দ্বীপের মধ্যবর্তী এলাকার আকাশে। ওদিকে এই ফ্লাইটের বেশির ভাগ আরোহীই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। ফলে পুরো দেশ যেন শোকে স্তব্ধ। আরোহীদের স্বজনরা শোকে কাতর। উদ্ধার অভিযানে বিভিন্ন দেশের ৩০টি জাহাজ ও বিমান অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় পদ্ধতিতে চলছে অভিযান। এতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় এয়ার এশিয়া কোম্পানি এখনই কোন ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত অস্ট্রেলিয়ান বিমান পি-৩ সি অরিয়ন পাংকালান বুন থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পানিতে ভাসমান কিছু দেখতে পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো এয়ার এশিয়ার কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটের ধ্বংসাবশেষ। তবে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তারা এখন নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন আসলে ওই ভাসমান বস্তু কিসের। ওদিকে উদ্ধার অভিযানে ‘আন্ডার ওয়াটার লোকেটর বিকন’ (ইউএলবি) নামে গভীর পানিতে উদ্ধার অভিযানে একটি ডাটা রেকর্ডার পাঠানো হচ্ছে। এটি পানির নিচে ডুবে প্রতি এক সেকেন্ডে ৩৭.৫ কিলোহার্টজের সিগন্যাল পাঠাবে। ওই সিগন্যাল পরীক্ষা করে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে চাইছে, পানির নিচে আসলে বিমানটির কোন ব্ল্যাকবক্স আছে কিনা। ওদিকে প্রিয়জন হারানো স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা শুধু জানতে চাইছেন বিমানটির কি হয়েছে? এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। গতকালের মতো অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বামবাং সোইলিসটি। তিনি বলেন, আজ আবার অভিযান শুরু হবে। উদ্ধার অভিযানের আওতায় আনা হবে পশ্চিম কালিমানতান এলাকা। গতকাল আবহাওয়া ভাল থাকলেও উদ্ধার অভিযানে লিপ্ত হেলিকপ্টারগুলো কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে নি। তবে একটি এলাকায় দেখা গেছে তেল ভাসতে। তবে তারা নিশ্চিত নন তা বিমান ধস থেকে সৃষ্ট কিনা। সেখানেও তারা আজ অভিযান চালাবেন। ওদিকে এয়ার এশিয়ার কর্মকর্তা টনি ফার্নান্দেজ বলেছেন, এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ। তারা এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন এয়ার এশিয়ার বিমান কখনও হারিয়ে যাবে না। কিন্তু তা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় ক্ষমা চেয়েছে এয়ার এশিয়া। তাদের ওই ঘোষণা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। বলা হয়, মালয়েশিয়ার এমএইচ ৩৭০ বিমান নিখোঁজ হওয়ার পরে তারা এই ঘোষণা দিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায় উন্নতি। তবে এয়ার এশিয়া বলেছে, তারা মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজ হওয়ার আগে ওই ঘোষণা দিয়েছিল একটি ম্যাগাজিনে। টনি ফার্নান্দেজ বলেছেন, প্রিয়জন হারানো স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। টুইটার বার্তায় তাদেরকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, ওই ফ্লাইটের ক্রু ও যাত্রীদের স্বজনদের জন্য আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশটির বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, উদ্ধার অভিযানে দুটি বিশেষজ্ঞ দল ও গভীর পানিতে ডিটেক্ট করতে পারে এমন লোকেটর দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সিঙ্গাপুর। সে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে ইন্দোনেশিয়া। এরপরই সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে সিঙ্গাপুরের উদ্ধারকারী দল। তারাই বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

No comments

Powered by Blogger.