‘মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোন ভূমিকা নেই’ by তানজির আহমেদ রাসেল

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোন ভূমিকা নেই দাবি করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তা শেখ মুজিব নিজেও বিশ্বাস করতেন না। এখন আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের দল দাবি করে অথচ চোরের দল আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি না থাকায় লাখ লাখ মানুষ হত্যার জন্য মূলত তিনিই দায়ী। আর এসব কাজের জন্য শেখ মুজিবই বড় রাজাকার। পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম অডিটরিয়ামে বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, কখনওই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করেননি। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি শায়েস্ত্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী মীর নাসির এবং বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট রহুল কবীর রিজভী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহসভাপতি আক্তার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, প্রেস সেক্রেটারি এমএ কাইয়ুম প্রমুখ।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই  ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারদের আত্মসমর্পণ  অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান একে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তাকে এখন রাজাকার আখ্যা দিয়ে কি বাংলাদেশের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না? তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই, বাকস্বাধীনতা নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে এসব গুম-খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা জড়িয়ে পড়েছেন। দুর্নীতি লুটপাট এখন সর্বগ্রাসী। জনগণের হাজার হাজার টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। র‌্যাব নামের রক্ষীবাহিনীর বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন রংহেডেড শেখ হাসিনা।
তারেক রহমান বলেন, তাহলে শেখ মুজিবকে পাকবন্ধু বলায় কি ভুল হয়েছে? পাকবন্ধু বলায়   আওয়ামী লীগের নাকি সম্মানহানি হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় এক দুর্বৃত্ত ব্যাংক থেকে জনগণের প্রায় ৪০০০ কোট টাকা লুটে নিয়েছে। অথচ বর্তমান অবৈধ  সরকারের এক রাবিশ মন্ত্রী বলেন, এটা নাকি তেমন কিছুই না। অবৈধ হাসিনা সরকারের এক মন্ত্রীর এক জামাতা নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে নির্মমভাবে খুন করেছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা তুলে নিয়েছে। ৫ই জানুয়ারির  নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রে ভোটারের পরিবর্তে টেলিভিশনের পর্দায় কুকুর দেখা গেছে, বিশ্ব্বজিৎ নামে এক যুবককে ছাত্রলীগ রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ জ্বালিয়ে দিয়েছে। শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডে  প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িতদের শেখ হাসিনা অবৈধ মন্ত্রিসভায় তার পাশে বসিয়েছেন, শেখ মুজিব বিনাবিচারে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে চোরের দল বলে শেখ মুজিব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন, এসবের জন্য কি আওয়ামী লীগের কারও সম্মানহানি হয়নি?
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতা অন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য শেখ মুজিব নিজেও বা আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করেননি। আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল নয়। তিনি মহিউদ্দিন আহমদ লিখিত ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বই থেকে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সিরাজুল আলম খানের একটি মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছিল অ্যান্টি লিবারেশন ফোর্স। আওয়ামী লীগ তো ছয় দফা থেকে এক ইঞ্চিও আগে বাড়তে চায়নি। এদের সত্যিকার চেহারা জানতে পারলে মানুষ এদের গায়ে থুতু দেবে।’ মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকার, কলামনিস্ট বদরুদ্দিন উমরের লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে  তারেক রহমান বলেন, ৭ই মার্চ শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হতো না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার আগে কিংবা পরে কখনওই জনগণের ওপর ভরসা রাখেনি, জনগণের কাছে স্বীকৃতি না পেয়ে এরা এখন কথায় কথায় আদালতের মাধ্যমে শেখ মুজিবের স্বীকৃতি চায়।
প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়ের বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবের কোন সমালোচনা করা যাবে না কেন? তিনি শয়তানও না আবার ফেরেশতাও না। তিনি একজন মানুষ এবং একজন মুসলমান। এ কারণে আমি তাঁর কবরও জেয়ারত করেছি। একই সঙ্গে তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সমালোচনাও হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া টিক্কা খানের রুপি খেয়ে যারা ঢাকায় আয়েশে নয় মাস কাটিয়ে দিয়েছেন দেশ ও গণতন্ত্র এখন তাদের কাছে বন্দি। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। সভায় তারেক রহমানের বিশেষ রাজনৈতিক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, শিক্ষা ও গবেষণা উপদেষ্টা মাহদি আমিন, বিএনপির  আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.