বিজয় দিবসে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ

বিজয়ের ৪৩তম বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় বীর শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি। বিজয়ের দিনে দেশজুড়ে উচ্চারিত হয়েছে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিও উচ্চারিত হয়েছে মুখে মুখে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি পালন করেছে মহান বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বিজয় দিবসের কর্মসূচি চলে দিনভর। সব বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন বিজয়ের আনন্দ উৎসবে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেখানে ঢল নামে লাখো মানুষের। মাথায় বাধা লাল সবুজের পতাকা। হাতে হাতে ফুল আর গায়ে জাতীয় পতাকার রঙে রঙিন পোশাকে সব বয়সী মানুষ দিনভর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের। শ্রদ্ধা আর ভালবাসার শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ছেয়ে যায় স্মৃতিসৌধের বেদি। এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি। জাতীয় প্যারেডে হয়েছে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ। রাজধানীতে হয়েছে বিজয় র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সৌজন্যে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনার।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, ভোর থেকেই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। হাতে লাল-সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে লাখো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধে ফুল  দিয়ে মুক্তিসেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিন বাহিনীর একটি  চৌকস দল সালাম জানায়। তখন শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারও ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, তিন বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,  বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে লাল-সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একাত্তরে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এরশাদ বলেন, তিনি ও তার দল যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। এদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার তারা চান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। দেশের জনগণ যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ চায়, আমরাও সমর্থন দেবো।
পর্যায়ক্রমে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদসহ বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডার ও দলীয় নেতাকর্মীরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। এলডিপি’র সভাপতি অলি আহমেদ বলেন, ’৭১ এ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের সমস্যার সমাধান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও মানুষ এখন গৃহবন্দি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন জাতির দাবি, এটা নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পতাকা পেলাম, স্বাধীনতা পেলাম তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকতে হবে। বিকল্প ধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেন, জনগণ একটি স্বাধীন দেশের মালিক। কিন্তু গত ৪৩ বছরেও তা অর্জন হয়নি। দেশে স্বৈরাচারী শাসন চলছে। আমরা স্বৈরাচার, গণতন্ত্র বিরোধী এবং রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শহীদদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, যে প্রত্যাশায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তা এখনও পূরণ হয়নি।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নাশকতার আশঙ্কায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। পুরো স্মৃতিসৌধে স্থাপন করা হয় সিসি ক্যামেরা। স্মৃতিসৌধের মূল ফটকসহ নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তৈরি করা হয় সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন: গতকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষার্থী, সরকারি কর্ম কমিশন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি) সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাবি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বিমান শ্রমিক লীগ, খেলাঘর আসর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত: এদিকে বিজয় দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গায় লাখো মানুষ। পুরো উদ্যানজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই জাতীয় সংগীতে অংশ নেন। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিজয় র‌্যালি বের করে আওয়ামী লীগ- যা ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা: সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষপস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের নেতারা। সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু  ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এ সময় দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আমির  হোসেন আমুসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে।
কিন্তু বাংলার মানুষ বিজয় দিবসে শপথ নিয়েছে, ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে  গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম  বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.)  ফারুক খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সদস্য আবদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তিনি নেতা কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাহ্‌জাহান ওমর, আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ। খালেদা জিয়া শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ওলামাদলের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বিজয় দিবসে রঙিন ঢাবি
রাত ১২টা ১ মিনিট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও টিএসসিতে হাজারো মানুষের ভিড়। আতশবাজি আর ফানুসে রঙিন আকাশ। কনসার্টে গানের তালে তালে নৃত্য। গানে গানে দেশের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। গালে, হাতে জাতীয় পতাকা একে আনন্দ উল্লাস। সব মিলিয়ে বিজয় উৎসবে এমনই রঙিন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। শিক্ষার্থীদের বাধনহারা আনন্দের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ক্যাম্পাসের বাইরের হাজারও মানুষ। সোমবার রাতে সরজমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। গতকাল রাত অবধি চলে এ উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সৃষ্টির সূতিকাগার। আঁতুড়ঘর। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রথম পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। এরপর ’৫৬ সালে সংবিধান প্রণয়ন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভুত্থান, ৭০’র নির্বাচন সর্বশেষ ৭১’র সালের স্বাধীনযুদ্ধ সব স্থানেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ছিল সামনের সারিতে। তাই আনন্দ উদযাপনেও পিছিয়ে ছিল না তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি পালন করেছে। ১৪ই ডিসেম্বর থেকে ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার-২০১৪’ শিরোনামে তিনদিনব্যাপী এসব অনুষ্ঠান উদযাপন করে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) কেন্দ্রিক সংগঠনগুলো।
অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কনসার্ট, আতশবাজি, ফানুস উড্ডয়ন, মাইম শো, মুক্তিযুদ্ধের বায়োস্কোপ, সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ, আতশবাজি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সাইকেল র?্যালি, অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ডিবেট। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে আলোচনা সভার। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিজয় উৎসবে যোগ দিতে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজারো মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও ছিলেন এসব ভিড়ে।
মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ: মহান বিজয় দিবস উদযাপনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বীর  মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্রবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে  কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় এ অনুষ্ঠান হয়। এ সময় মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ, কুচকাওয়াজের যান্ত্রিক বহর  ও বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাই পাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে মুগ্ধ করে উপস্থিত সবাইকে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অংশগ্রহণ করে। কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো ভবিষ্যৎ পদাতিক বাহিনীর সজ্জায় একটি বিশেষ কন্টিনজেন্ট অংশগ্রহণ করে। বিজয় দিবসের এ কুচকাওয়াজে ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করা  হয়। এবারের কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনীতে নতুন সংযোজিত মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, অত্যাধুনিক এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, সেলফ প্রোপেল্ড  গান, আর্মার্ড লাইট ভেহিক্যেল ও উইপন লোকেটিং রাডার এসএলসি-২,  নৌ-বাহিনীতে নতুন সংযোজিত ডিফেন্ডার ক্লাস বোর্ড এবং  বিমানবাহিনীতে নতুনভাবে সংযোজিত সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল  সিস্টেম প্রদর্শিত হয়।
বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে গতকাল এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে কেক কাটেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং  শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের খোঁজখবর নেন। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ,  প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, কূটনীতিক,  সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত শিল্পী সুবীর নন্দী, শাকিলা জাফর,  মলয় কুমার গাঙ্গুলি, চন্দনা মজুমদার এবং শ্যামা রহমান দেশাত্মবোধক  গান পরিবেশন করেন।

No comments

Powered by Blogger.