যে কোন মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন খালেদা জিয়া: গয়েশ্বর

বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াকে যে কোন সময় গ্রেপ্তার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দেশনেত্রী পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই প্রস্তুতি নিন। যাতে সময় হলেই বেরিয়ে পড়তে পারেন। নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকবেন না। সরকার যেভাবে ছক আঁটছে যে কোন মুহূর্তে আমাদের নেত্রীকে আটক করতে পারে। তিনি বলেন, জনগণের কাছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এখন নর্দমার চেয়েও দুর্গন্ধময়। আওয়ামী লীগ দেখলেই জনগণ এখন নাকে রুমাল দেয়। কিন্তু তার মানে এই নয়, জনগণ বিএনপিকে খুব পছন্দ করে। বিএনপির কথা এবং কাজে ফাঁক থাকা ও নেতাদের কমিটমেন্ট না থাকায় জনগণ মাঠে নামছে না। নিজ দলের সমালোচনা করে গয়েশ্বর রায় বলেন, মানুষ আন্দোলন চায়, মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু আমাদের দলের নেতারা আন্দোলন বাদ দিয়ে মিডিয়ার সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত। গয়েশ্বর রায় বলেন, আন্দোলন করার সময় লোক পাওয়া যায়না। কমিটি দেওয়ার সময় নেতা কর্মীদের ভিড় লেগে যায়। দলের বড় বড় পদ নেয়ার ব্যাপারে আমরা আগ্রহ দেখাই, কিন্তু পদ নেয়ার পর আমাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বৈরাচার পতন দিবসের যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে গয়েশ্বর রায় বলেন, ১৭৫৭ সালের মীর জাফর, ১৯৭১ সালের রাজাকার, ১৯৭৫ সালের বাকশাল, ১৯৮১ সালের স্বৈরাচার এবং ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কার-এই পাঁচটি শব্দ আমাদের অভিধানে নিকৃষ্ট শব্দ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই মীর জাফর, রাজাকার, স্বৈরাচার, বাকশাল এবং সংস্কারপন্থিদের বুকে টেনে নিয়েছে, কোলাকুলি ও মোলাকাত করেছে। তিনি বলেন, ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত বিএনপির অবস্থা আজকের মতো এত শক্ত ছিল না। দেশব্যাপী এতো জনসমর্থনও ছিল না। কেবল খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব এবং যুব ও ছাত্রসংগঠনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে এরশাদের পতন হয়েছিল। কিন্তু কী এমন প্রয়োজন হলো যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) আমলে সেই এরশাদকে নিয়েই আমাদের আন্দোলন করতে হলো? তিনি বলেন, ওই সময় বিএনপির যেসব অনুষ্ঠানে এরশাদ উপস্থিত থেকেছেন সেসব অনুষ্ঠানের মঞ্চে তো দূরের কথা তার ধারের কাছেও আমি যাইনি। গশ্বের রায় বলেন, এ দেশে স্বৈরাচার এরশাদ এবং রাজাকার জামায়াতের সঙ্গে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলকেই বসতে হয়। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে মুখে যুদ্ধাপরাধী বলে। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করার জন্য তলে তলে জুতার তলা ক্ষয় করেছে। আবার ব্যক্তি স্বার্থের জন্যও কেউ কেউ স্বৈরাচারের দালাল হয়েছেন। ১৯৮১ সালের পর বিএনপির অনেক বাঘা বাঘা নেতা এরশাদের বুটের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্বৈরাচার এরশাদের প্রায় ৭৫ ভাগ এমপি-মন্ত্রী এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে অবস্থান করছেন। সুতরাং স্বৈরাচারের পরিষদবর্গকে দলে রেখে স্বৈরাচার পতন দিবস পালন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। দেশনেত্রী পরিষদের সভাপতি একেএম বশির উদ্দীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, বিএনপি নেতা লায়ন আনোয়ার, সংগঠনের সহ-সভাপতি তালুকদার বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও ফরিদ উদ্দিন ফরিদ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.