অবৈধ শাহজালাল হাসপাতাল সিলগালা

বৈধতা না থাকায় এক সপ্তাহের মাথায় রাজধানীতে আরও একটি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। ভুয়া ডাক্তার, নার্স দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা, হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকা এবং চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগে শনিবার রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালটি র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে দেন। একই সঙ্গে মালিক সুজন দাসসহ ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী প্রতি দশ বেডের হাসপাতালে তিনজন ডাক্তার ও ছয়জন নার্স ও তিনজন সুইপার বাধ্যতামূলক হলেও এখানে পাওয়া যায় ৩ ভুয়া ডাক্তার, এক ভুয়া নার্স ও ২ ভুয়া টেকনিশিয়ান। হাসপাতালের মালিক অভিযুক্ত সুজন জানায় গত ৩ বছর ধরে হাসপাতালটি এভাবেই চলছে। এর আগে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রাজধানীর পান্থপথেও মোহনা হাসপাতালের চিকিৎসাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার।
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী ২৯ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সে অবস্থায় মোহনা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। এরপর মোহনা হাসপাতালের বিরুদ্ধে তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে।
৩ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মোহনা হাসপাতালের মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে গড়ে ওঠা অবৈধ হাসপাতালগুলো অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব-২। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. স্বপন কুমার তপাদার উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান প্রসঙ্গে আনোয়ার পাশা জানান, ভুয়া ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান দিয়ে হাসপাতালটি চালানো হচ্ছিল। এইচএসসি পাস করে এ হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছে মাসুম। সে রোগীদের অপারেশনসহ সব ধরনের প্রেসক্রিপশন করে। শনিবার ৮ রোগীকে অস্ত্রোপচার করার সময় আটক করা হয় অভিযুক্ত ৬ জনকে। এদের মধ্যে হাসপাতালের মালিক সুজন দাশকে ২ বছর কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের সাজা দেয়া হয়। ভুয়া ডাক্তার সুমন পাল ও মো. মাসুম মৃধাকে ২ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জারিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া মিতু জয় ধর, সুব্রত বালা এবং পংকজ চন্দ্রকে ৬ মাসের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২০১৩-এর জুন মাসে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অবৈধভাবে হাসপাতাল চালিয়ে আসছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি অত্যধিক পুরনো এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া টেকনিশিয়ান সুব্রত বালা এবং পংকজ চন্দ্রের কোনো ডিপ্লোমা নেই এবং নার্স পরিচয়ে মিতু জয় কাজ করলেও তার রেজিস্ট্রেশন নেই। মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করে নার্সিং ডিগ্রি ছাড়াই এখানে সে কাজ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. স্বপন কুমার তপাদার যুগান্তরকে জানান, হাসপাতালের হালনাগাদ লাইসেন্স নেই। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের কেউ চিকিৎসক, নার্স বা ডিপ্লোমাধারী নয়। হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন, যা চিকিৎসা সেবা প্রদানের একেবারেই অনুপযোগী। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়ে শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.