যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেবে বলে মনে করছে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুক্রবার দেয়া বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ আয়োজন করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়টি আবারও অস্বীকার করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে হয় না।
দেশের রাজনীতি কলুষিত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন এমন অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিরাচরিত ও স্বভাবসলুভ ভঙ্গিমায় রুচিহীন ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্য ছিল তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও দুই বারের বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক ও অবিশ্বাস্য নোংরামিতে পূর্ণ। উনার ওই বক্তব্য আমরা উচ্চারণ করতে ঘৃণাবোধ করছি।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত। আমাদের বক্তব্য হলÑ যদি মাটি শক্ত হয়ে থাকে, নির্বাচন দিন, তখন দেখা যাবে কার পায়ের নিচের মাটি কত শক্ত। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র দরকার হয় না। তিনি রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। গুলশানের কার্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের বৃহস্পতিবারের বৈঠক সম্পর্কে গণমাধ্যমের খবরের কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সেদিন গুলশানের কার্যালয়ে এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। পত্রপত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। ফুটেজের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, বৈঠকই হয়নি, কিসের ফুটেজ? ফুটেজ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। ফখরুল বলেন, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই বরাবর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে। দেশের জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে এরকম ষড়যন্ত্রের কথা বলে জনগণকে তারা বিভ্রান্ত করে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের বিষয়টিও তেমনি একটি।
দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়া হয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখা হবে বলে তিনি বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চান, টিআইবি এ ধরনের প্রতিবেদন আবার করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে দুর্নীতি শুরু- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুনে মানুষ হাসবে। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জনক। অতীতে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর এবার শেখ হাসিনা দুর্নীতিকে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বেধতা দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নামে আইন করে দুর্নীতিকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে।
সাম্প্র্রতিককালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানের কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, কারা এই সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছের লোকজনই এই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত রয়েছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারি সাজানো নির্বাচন ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা থলের বিড়াল এইচটি ইমামের বক্তব্যে বেরিয়ে গেছে। এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে, বংশবদ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ওই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেলে থাকতে হতো না। কেবল তা-ই নয়, অনেক সাংবাদিককে খুন ও নির্যাতন করা হয়েছে। চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু এক লাইন ফেসবুকে লেখার জন্য এক সেনা কর্মকর্তার বিচার চলছে। এক ছাত্র সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে ৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এ হচ্ছে দেশে বাক স্বাধীনতার নমুনা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য শুধু কূটনীতিক শিষ্ঠাচারবহির্ভূতই নয়, এখানে বর্ণবাদের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এরকম বক্তব্যের পর সরকার সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করেনি, কথা বলেনি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বর্ণবাদের পক্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। বর্তমান বিশ্বে দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও থাকে। সরকার প্রধানের এরকম বক্তব্যে দুদেশের সম্পর্ক অযাচিত ধাক্কা খেয়েছে।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে স্থলসীমান্ত চুক্তির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান তিনি। তবে তিনি বলেন, সীমান্ত চুক্তি হলেও তা বড় কিছু পাওয়া নয়। ২০০২ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে ছিটমহল হস্তান্তর, অপদখলকৃত ও বিরোধপূর্ণ ভূমির বিষয়াবলী এক সঙ্গে প্যাকেজ আকারে নিষ্পত্তি করার জন্য ভারতকে বলা হয়েছিল। এটা করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। অন্যথায় আমরা অসম্পূর্ণ থেকে যাব।
মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সফরের বিষয়ে তুলে ধরে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ায় সফরে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তারা অনেক চুক্তি করেছেন। কিন্তু তেমন কোনো গুরত্বপূর্ণ চুক্তি দেখছি না। আর পদ্মা সেতু করে দেবে বলে মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানি বলেছিল। এবার প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া সফরকালে ওই সেতুর বিষয়ে আলোচনা হল না কেন এ ব্যাপারে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চান তিনি। এ সময় দলের সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করীম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.