শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশী ছাত্রীকে ধর্ষণ

শান্তিনিকেতন পাঠভবনের বাংলাদেশের বাসিন্দা এক দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর যিনি ছিলেন রক্ষক, তিনিই ভক্ষক হয়ে দিনের পর দিন ওই পড়ুয়াকে ধর্ষণ করলেন নিজের ঘরে। এমনই অমানবিক ঘটনার অভিযোগে বিশ্বভারতির এক পিএইচডি পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে শনিবারই আদালতে পাঠায় বোলপুর থানা। বিচারক অভিযুক্ত যুবককে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। নির্যাতিত ছাত্রী ও অভিযুক্ত যুবক, দুজনেরই বাড়ি বাংলাদেশে। ছাত্রীটির ভর্তির সময় স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে অভিযুক্ত সফিকুল ইসলামের নামই বিশ্বভারতীতে নথিভুক্ত করেছিলেন ছাত্রীর বাবা। কলাভবনের পর একই ধরনের কলংকজনক ঘটনা পাঠভবনে হওয়ায় এদিন বিকালে চাপে পড়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে। সন্ধ্যায় অভিযক্ত পিএইচডি পড়ুয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রীটির বাড়ি ঢাকা লাগোয়া খালিগঞ্জ থানা এলাকায়। অভিযুক্ত ছাত্রের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জের দাদপুর গ্রামে। দুজনেরই পরিবার পূর্বপরিচিত। অভিযুক্ত সফিকুল শ্রীনিকেতনের রুরাল এক্সটেনশন সেন্টারে গবেষণা করে। একাদশ শ্রেণীতে ছাত্রীটি যখন ভর্তি হয় তখন সফিকুলকে বিদেশে মেয়ের রক্ষক হিসেবে ভরসা করে স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে বিশ্বভারতীতে পরিচয় নথিভুক্ত করেছিলেন ধর্ষিতার বাবা। কিন্তু তার সেই বিশ্বাস ও আস্থা যে মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করবে তা তিনি ভাবতে পারেননি। এদিন দুপুরে বোলপুর আদালতে দাঁড়িয়ে ছাত্রীর বাবা বলেন, সফিকুল শুধু আমার মেয়ের সর্বনাশ করেনি, বাংলাদেশের মান-সম্মান ডুবিয়ে দিল। ওপার বাংলা থেকে যারাই পড়তে এসেছে তাদেরও বদনাম করে দিল সফিকুল।
পুলিশের কাছে শুক্রবার রাতে ছাত্রীটি অভিযোগ করেছে, মাসপাঁচেক আগে একদিন সফিকুলের পূর্বগুরুপল্লীর ভাড়া বাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানেই প্রথম জোর করে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় গোপনে পুরো ঘটনাটির ভিডিও রেকর্ডিং করে। ঘটনার পর ছাত্রীটি যখন কান্নাকাটি শুরু করে তখন ওই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেলিং শুরু করে সফিকুল। একই দিনে ফের দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে। ছাত্রীটি মাধবী ছাত্রীনিবাসে থাকত। পুলিশে ছাত্রীটির অভিযোগ, ওই ছবি দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে অভিযুক্ত। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হোস্টেলে ফিরে আসার কথা থাকলেও ছাত্রীটি মাঝে মধ্যেই রাত সাড়ে আটটার পরে ফিরত। প্রশ্ন উঠেছে, কেন হোস্টেল সুপার ফিরে আসার ক্ষেত্রে দেরি করার কড়া ব্যবস্থা নিলেন না? ইদানীং সহবাসে সম্মতি না দিলেও ঘরে ডেকে নিয়ে নির্যাতিতাকে বেধড়ক মারধর করত সফিকুল। সহবাস না করলে বিশ্বভারতীতে সিডি করে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করারও হুমকি দিয়েছিল অভিযুক্ত। অত্যাচারের মাত্রা সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দিন কয়েক আগে বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানায় নির্যাতিতা। ৩ ডিসেম্বর ছাত্রীর বাবা শান্তিনিকেতনে আসেন। পরদিন মেয়ের কাছে পুরো বিষয়টি জেনে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাঠভবনের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। রাত ১১টা নাগাদ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ও তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশে এফআইআর করেন। রাত একটা নাগাদ পূর্বগুরুপল্লীর বাড়ি থেকে সফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বোলপুর আদালতে সফিকুল জানিয়েছে, পুরোপুরি চক্রান্ত করে ফাঁসানো হল আমাকে। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বাবা সম্পর্ক মানতে পারেননি বলেই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ অবশ্য এদিন ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষা করেছে। সফিকুলকে গ্রেফতারের সময় তার ঘর থেকে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি পেনড্রাইভ, বেশ কিছু সিডি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী উদ্ধার করেছে। পুলিশ এখন ল্যাপটপে কী আছে এবং ছাত্রীটির অশ্লীল ভিডিও সিডি করে বিক্রি করে দিয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে। প্রচুর পরিমাণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী উদ্ধার হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, ওই ছাত্রী ছাড়াও অন্য কেউ কি তার ঘরে আসত? নাকি গোটা বিষয়টিতে কোনো চক্র জড়িয়ে আছে? কলাভবন কেলেংকারির ভিডিও-চক্র সফিকুলের পরিচিত কিনা তাও তদন্ত করে দেখছে বোলপুর পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.