ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান সবাই ভুয়া!

কর্তব্যরত তিন ডাক্তারের দু’জন মাসুম ও সুজন এইচএসসি পাস, সুমন নামের একজন এসএসসি পাস করেছেন। নার্স হিসেবে কর্মরত তরুণী মিতু জয়ধরেরও নার্সিং বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ নেই। একই অবস্থা দুই টেকনিশিয়ান সুব্রত বালা ও পঙ্কজ চন্দ্র দাসের। তার পরেও দিব্যি তারা চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন হাড়ভাঙা রোগীদের। গতকাল এমন একটি  ক্লিনিকে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ক্লিনিকটির নাম শাহজালাল জেনারেল হাসপাতাল। খোদ রাজধানীর ২৭/২ নম্বর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে চলছিল এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনহীন ক্লিনিকটি। গতকাল অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়। একই সঙ্গে ভুয়া তিন ডাক্তারকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়। আর এক নার্স ও দুই টেকনিশিয়ানকে দেয়া হয় ছয় মাসের কারাদণ্ড। তাদেরও করা হয় এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, তাদের নিয়োগকৃত একদল দালাল রয়েছে। তাদের কাজ হলো পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে থেকে রোগী ধরে আনা। এজন্য তারা কমিশন পায়। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা জানান, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান সবাই ভুয়া। এমনকি হাসপাতালে রাখা এক্স-রে মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিরও কোন অনুমোদন নেই। হাসপাতাল চালানোর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন গত বছরের জুলাই মাসে শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর কোন অনুমোদনও নেয়া হয়নি। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের শাহজালাল জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রামমাণ আদালত। এ সময় ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালতকে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, মাসুম নামে যে তরুণ মূল ডাক্তার হিসেবে এ ক্লিনিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি এইচএসসি পাস। ডাক্তারি কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি অপারেশনসহ সব ধরনের রোগী দেখা ও প্রেসক্রিপশন লেখার কাজ করছিলেন। অভিযানের সময় ক্লিনিকে ৮ জন রোগী ছিল। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় অপারেশন থিয়েটারে ফজলুল হক নামে এক যুবকের পায়ের অপারেশন চলছিল। এ সময় হাসপাতালে কোন চিকিৎসক ছিলেন না। ক্লিনিকের মালিক সুজন এবং তার চাচাতো ভাই সুমন মিলে ফজলুল হকের পায়ের ব্যান্ডেজ কেটে প্লাস্টার করছিলেন। প্রাইভেট কারের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় ফজলুলের। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে দালালরা তাকে এ ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অভিযানের সময় হাসপাতালে দিঘি নামে দুই বছরের এক শিশুর পায়ে প্লাস্টার করা হচ্ছিল। বিক্রমপুর থেকে আসা ওই শিশুর পা ফুলে গিয়েছিল। পায়ের এক্স-রে ফিল্ম দেখে প্লাস্টার করার কোন কারণ না থাকলেও টাকার জন্য পায়ে অকারণ প্লাস্টার করা হচ্ছিল। মিলন মোল্লা নামে আরেক রোগী জানান, ফরিদপুরে নসিমন দুর্ঘটনায় তার পায়ের হাড় ভাঙে। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে এক লোক ৬০ হাজার টাকার চুক্তিতে তাকে এ ক্লিনিকে নিয়ে আসে। কিন্তু ১৫ দিন পার হলেও তার পায়ের ব্যথা কমেনি। এমনকি ভাঙা স্থানে ইনফেকশন হয়ে গেছে বলে ডাক্তাররাই তাকে জানিয়েছেন। অভিযুক্ত সুজন র‌্যাবকে জানিয়েছে, তিন বছর ধরে এ হাসপাতালটি এভাবেই চালছিল। র‌্যাব ২-এর মেজর নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, এমন সব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডা. স্বপন কুমার তপাদার উপস্থিত ছিলেন। কারাদণ্ড ও জরিমানাপ্রাপ্ত সুজন দাসের পিতার নাম নিতাই চন্দ্র দাস। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায়। সুমন পালের পিতার নাম রবীন্দ্র পাল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার আউধাতা এলাকায়। মাসুম মৃধার পিতার নাম মজনু মৃধা। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানার বৈলাবো এলাকায়। মিতু জয়ধরের পিতার নাম অতুল চন্দ্র জয়ধর। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনী থানার পূর্বনবগ্রাম এলাকায়। সুব্রত বালার পিতার নাম নিত্যানন্দ বালা। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনী থানার চলবল এলাকায়। পঙ্কজ চন্দ্রের দাসের পিতার নাম লাল চন্দ্র দাস। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার চরদুকিয়া এলাকায়।

No comments

Powered by Blogger.