টেকসই উন্নয়ন ও বাংলাদেশ by সালমা ইসলাম

প্রলম্বিত বিশ্বমন্দা সব ধরনের উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন সব দেশেই উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলো বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছে- সেসব বিষয়ে নতুন কোনো সুখবর নেই। গতানুগতিক মানের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে দ্রুত এগিয়ে যেতে হলে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যখন নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্মুখ হয় তখন উন্নয়নের গতিতে কাক্সিক্ষত মাত্রা আসে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের অভাব হলে উন্নয়নের গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। উন্নয়ন বিষয়ক উল্লিখিত শর্ত পূরণের পাশাপাশি আরও বহুসংখ্যক শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে টেকসই উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে যাত্রা শুরু হলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা কত কঠিন- সাম্প্র্রতিক বিশ্বমন্দার সময় তা স্পষ্ট হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে দেশে এত গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করার পরও মন্দা পরিস্থিতি এমন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ থেকে মোটামুটিভাবে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হল, আগামীতেও সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া বিশ্বমন্দা সফলভাবে মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন হবে এবং সব দেশের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিটি দেশকে আলাদাভাবেও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
যে কোনো দেশের উন্নয়নে দেশটির বিভিন্ন সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো অনেক দেশেই খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা সত্ত্বেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও জনগণের প্রচেষ্টায় উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। পৃথিবীতে খনিজ ও বেশিরভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ সীমিত। একমাত্র মানুষের কর্মদক্ষতাই অসীম। অর্থাৎ মানুষের সব সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশের উন্নয়নে বিশেষ গতি আসবে, যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। আগামী দিনের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিদেশী বিনোয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বর্তমানে যে প্রতিযোগিতা চলছে এ অবস্থায় সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়টি কী প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনায় নিয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে হারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ১০০ বছর পর পৃথিবীতে জ্বালানির কী সংকট দেখা দেবে- আইপিসিসির (The intergovernmental panel on climate change) পক্ষ থেকে এ বিষয়েও ইতিমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। কাজেই উল্লিখিত সংকট তীব্র আকার ধারণ করার আগেই আগাম সতর্কতামূলক বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ ১০০ বছর পর যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে না হয় সেজন্য বিকল্প জ্বালানির প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কেবল উচ্চতর গবেষণা অব্যাহত থাকলেই এ বিষয়ে সম্ভাব্য সুখবর মিলতে পারে। অন্যথায় ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। ১০০ বছর পর জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ না ফুরালেও গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা
না হলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই
বিশ্ববাসীকে দূষণবিষয়ক কী ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বিজ্ঞানীরা তা ইতিমধ্যে বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করেছেন- যা মিডিয়ায় বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
দুই.
আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রধান বাধাগুলোর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। যানজট, স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ না পাওয়া, জ্বালানির জন্য আমদানির ওপর নির্ভরতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার- এ রকম অনেক কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে নিত্যপণ্যের চহিদা মেটানোর জন্যও আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। কেবল ভয়াবহ যানজট সমস্যার কারণে বছরে হাজার কোটি টাকার তেল নষ্ট হয়। যানজটের কারণে সারা দেশের মানুষের যে কর্ম-ঘণ্টা জীবন থেকে হারিয়ে যায়- এ ক্ষতি পূরণের উপায় কী? রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে গণপরিবহনের সংখ্যা না বাড়ালে যানজট কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে- এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বহুবার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরমুখী মানুষের স্রোত বন্ধ না হলে আগামীতে আরও বহুমুখী সংকট দেখা দেবে। মানুষ যাতে মূল শহরের বাইরে বিভিন্ন জায়গা থেকে অল্প সময়ে শহরে নিজ কর্মস্থলে এসে পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করা হলে অনেকেই শহরের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। কারণ মূল শহরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষের আয়ের বড় অংশই ব্যয় হয় কেবল বাড়িভাড়ায়। গ্রামীণ জনপদে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না বাড়ালে মানুষের শহরমুখী স্রোত কমবে না।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সব দেশের উন্নয়নের অন্যতম বাধা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন দেশ নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উন্নত দেশগুলো যত সহজে অল্প সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ায়ও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণের জন্য অনেক আশ্বাস দিলেও বাস্তবে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্র“তি রক্ষা করছে না। এমনকি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণেও উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কিয়োটো প্রটোকলে বর্ণিত শর্তগুলো যথাযথভাবে মানলে তা সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যই স্বস্তির বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো। যেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর সহসা নির্ভরতা কমানোর লক্ষণ স্পষ্ট নয়, কাজেই ধরে নেয়া যায় বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বর্তমান ধারা আরও কয়েক দশক অব্যাহত থাকবে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন শাকসবজির নতুন জাত সময়মতো আবিষ্কার করতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এরকম আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় সফলভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিন.
বাংলাদেশের কৃষি খাতের উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের তুলনায় কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, কৃষিতে নানাবিধ অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকদের জীবনমানের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মিঠাপানির মাছের বিচরণভূমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ির পাশের সহজলভ্য মাছ একসময় দরিদ্র মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখত। মাছের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হতে হতে এখন অবস্থা এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, খাল-বিল দূরের কথা- অনেক নদীও এখন মৎস্যশূন্য। শুধু তাই নয় কোনো কোনো নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে- ওই পানিতে কোনো জলজ প্রাণীই দেখা যায় না। অনেক দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে এই দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এই দূষিত পানি কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে এসব দূষণ কৃষিপণ্যের মাধ্যমে মানবদেহে কী প্রভাব ফেলতে পারে- এ বিষয়ক গবেষণা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পানি দূষণ রোধে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পানি দূষিত হলে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের
ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এ বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা অব্যাহত রাখা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে যেভাবে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে এতে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ কতটা হুমকির মুখে পড়তে পারে এ নিয়ে সচেতন মানুষের উদ্বেগের অন্ত নেই।
চার.
যে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশের ওপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলে। যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিবেশের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেসব প্রকল্প সংকুচিত করে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প সম্প্রসারণে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ আমদানি করে তৈরিকৃত পণ্য রফতানি করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বটে কিন্তু এতে যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়- এ ব্যয় কী করে কমানো যায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশীয় পণ্য ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত না হলে বিদেশী পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমবে না। যেসব শিল্পোদ্যোক্তা ব্যাপক পরিসরে
বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করেন- তারা যাতে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারেন এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
অনেক বেকার তরুণ বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু যে কোনো সময় তারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থা কত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে- মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় আমরা তা লক্ষ্য করেছি। বর্তমানে স্বল্পদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে কোনো না কোনো কর্মে নিযুক্ত হচ্ছে। এ সুযোগ আগামী দিনগুলোতে কী হারে সংকুচিত হবে- তা বিবেচনায় রেখে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তরুণদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের সুব্যবস্থা করতে হবে। অনেক তরুণ ভিটেমাটি বিক্রি করে নিজের সর্বস্ব দালালের হাতে তুলে দিয়ে যে কোনো মূল্যে বিদেশে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। এসব তরুণের কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে অতি অল্প বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হয়। আবার অনেকে প্রতারণার শিকার হয়। বর্তমানে সরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি রফতানি হলেও বিপুলসংখ্যক তরুণকে এ প্রক্রিয়ায় উপকৃত হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষায় যাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে তাদের কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই অবৈধ পথে বিদেশ গমনের চেষ্টা করে। এসব তরুণের অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়। তরুণরা যাতে বিভ্রান্ত না হয় এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে হবে। অবৈধ পথে বিদেশে গমন করলে তরুণরা অচেনা পরিবেশে সম্ভাব্য কী ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে পারে তা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিভিন্ন দেশে আগামীতে কী ধরনের জনশক্তির চাহিদা বাড়বে এ ব্যাপারে সরকারিভাবে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাকর্ম অব্যাহত রাখতে হবে এবং আগামী দিনের চাহিদা অনুযায়ী তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত নির্ভরতা কাম্য নয়। তরুণদের বোঝাতে হবে বিদেশে শ্রমিক হিসেবে না গিয়ে গবেষক হিসেবে যেতে পারলে অসময়ে কর্মচ্যুত হওয়ার আশংকা কমে এবং একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ে।
পাঁচ.যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পকে লাভজনক করার জন্য প্রকল্পে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কোনো শিল্পকারখানায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে হঠাৎ বিপুলসংখ্যক কর্মী সাময়িকভাবে কর্মহীন হওয়ার আশংকা থেকেই যায়। এসব কর্মী পরবর্তী কর্মে যোগদানের আগে অন্তর্বর্তী সময়ে কর্মহীন থাকলে এদের কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এ ধরনের কর্মীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ অব্যাহত থাকাও জরুরি।
প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেলে যে কোনো বয়সী
কর্মীর কর্মদক্ষতার পরিধি বেড়ে যায়। ফলে অতি সহজে একজন কর্মী নিজের ও পরিবারের
অসচ্ছলতা দূর করতে সক্ষম হন। সাময়িক অসচ্ছলতা দূর করার পর নিজের কর্মপরিধির আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে যে কোনো কর্মী যাতে তার সর্বোচ্চ
দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ পায়, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহুমুখী কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
টেকসই উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বিভিন্ন দেশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামনেও তুলে ধরার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে একজন নাগরিকের কাছে স্পষ্ট হবে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতার জন্য কী ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কোনো তরুণ সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখার পরও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক দেরি হতে পারে যদি শিক্ষা খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেয়া না হয়।
ছয়.
বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় শ্রমনির্ভর শিল্পকারখানায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ধারা কতদিন অব্যাহত রাখা দরকার, এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় শ্রমনির্ভর শিল্পকারখানায় বিশেষ গুরুত্বারোপ বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পকারখানার যুগে প্রবেশের জন্য আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কাজেই আমাদের দ্রুত চলার গতি যাতে অব্যাহত থাকে এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রতিটি দেশেই বিদ্যমান চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আগামী দিনের চাহিদা পূরণের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এসব কর্মসূচির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়ানোর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো কতভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, এ বিষয়ে উচ্চতর পর্যায়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে।
সাত.
প্রলম্বিত বিশ্বমন্দার কারণে কম-বেশি প্রায় সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বমন্দার এই ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলো বাণিজ্য ও অন্যান্য খাতে কতভাবে লাভবান হতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে। দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতাসহ অন্য অভিন্ন সমস্যার সমাধানে এ অঞ্চলের দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ বাড়াতে হবে। বিশেষত স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান সমসাগুলো কত দ্রুত সমাধান করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উন্নত দেশগুলো যে কোনো সময় চিকিৎসা খাতে এককভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে পারে, যা এককভাবে বরাদ্দ করা এ অঞ্চলের অনেক দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ খাতে আগামী দিনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি না নিলে অর্র্থনীতিতে কী ধস নামতে পারে, সাম্প্রতিক ইবোলা আতংকের মাধ্যমেই তা বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়েছে। অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে ইবোলা আতংকের মতো যে কোনো চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এটা বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগে চিকিৎসাবিষয়ক উচ্চতর গবেষণা শুরু হলে এ অভিজ্ঞতা অন্য অনেক খাতে কাজে লাগানো যাবে, যা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবে।
আট.
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশ্বে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিও বাড়ছে। এতে আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি নিরাপত্তা কতটা হুমকির মুখে পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে উপকৃত হওয়ার যেসব সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রকল্পের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়া বিনিয়োগ ও বাণিজ্য খাতে এ ধরনের আর কী কী সম্ভাবনা আছে তা খুঁজে সেসব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে উপকৃত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কী কী উদ্যোগ অব্যাহত রাখা দরকার তা খুঁজে বের করা জরুরি। বিশেষ করে দুদেশের জনগণের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্যও বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা দরকার। দারিদ্র্য দূরীকরণে যে কোনো সফল মডেল এ অঞ্চলের সব দেশেরই কাজে লাগবে। তাই দ্রুততম সময়ে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের দেশগুলো যাতে উপকৃত হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
নয়.
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ অক্ষুণ্ন না থাকলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ সংকুচিত করার চিন্তা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই দেশে যাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ অক্ষুণ্ন থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বিভিন্ন খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেসব সুযোগ পাবেন, দেশী বিনিয়োগকারীরা যাতে তা পান, সেটি নিশ্চিত করা না হলে দেশী শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। দ্রুততম সময়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকার সম্পদ আহরণে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। কাজটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই আমাদের সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় সম্ভাব্য কী কী সম্পদের মজুদ রয়েছে, এ বিষয়ক জরিপটি দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় ইতিমধ্যে যেসব দেশ ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা শুরু করে দ্রুততম সময়ে যাতে স্বাধীনভাবে গবেষণার সক্ষমতা অর্জন করা যায়, তেমন কর্মসূচি নিতে হবে। একই সঙ্গে গভীর সমুদ্র থেকে বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ আহরণের সক্ষমতা অর্জনের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দশ.
আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সামুদ্রিক ঝড় বয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এতে আগামী দিনগুলোতে উপকূলীয় এলাকার জনগণের যে অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে তা মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের মহাকাশ গবেষণায় সাফল্য আমাদের যেমন আশাবাদী করে একই সঙ্গে দেশটির দরিদ্র মানুষের সংগ্রামের কথা শুনে আমরা উদ্বিগ্ন হই, নেপালের জলবিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্যাপক লোডশেডিংয়ে দেশটির উন্নয়নে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তায় নেপালের জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো হলে দেশটি প্রচুর বিদ্যুৎ রফতানিও করতে পারবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোকে আগামীতে সম্ভাব্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এ বিষয়ক গবেষণা অব্যাহত রাখা জরুরি। বিদ্যমান সমস্যা ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশের প্রয়োজনীয় সহায়তা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিতে দেরি করলে এ অঞ্চলের যে কোনো দেশে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ব্ল্যাক আউটের মতো বিপর্যয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
যেহেতু এ অঞ্চলের দেশগুলোর জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় একই রকম তাই পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উল্লিখিত দেশগুলোর জনগণ কতভাবে লাভবান হতে পারে- তা খুঁজে বের করতে বহুমুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম কেবল উচ্চতর পর্যায়ের গবেষণায় সীমাবদ্ধ না রেখে প্রান্তিক জনগণ যাতে সরাসরি উপকৃত হতে পারে, ওই ধরনের প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। এ অঞ্চলের কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিলে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অন্য দেশগুলোর ওপরও পড়বে। তাই প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে গঠিত বিদ্যমান সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড গতিশীল করার জন্যও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
এগার.
২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে ব্রিটেনের গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত তিন দশকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪২ কোটি পাখি কমেছে। ২৫টি দেশের ১৪৪ প্রজাতির পাখির ওপর পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষিজমির পরিমাণ দ্রুত বাড়ানোর ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে পাখির খাবার সংকট এবং আবাসস্থল সংকুচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বিপুলসংখ্যক পাখি কমেছে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। উল্লিখিত তথ্য থেকে এটাও স্পষ্ট হয়, প্রতিকূল পরিবেশে অন্য অনেক প্রাণীর সংখ্যায়ও ব্যাপক তারতম্য ঘটতে পারে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ মানুষের বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী তা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন উপকারী প্রাণীর উপস্থিতি থেকেও বোঝা যায়। যেহেতু ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পাখি কমেছে, তাই উল্লিখিত দেশগুলোর পরিবেশে প্রকৃতপক্ষে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে যথাযথ পর্যবেক্ষণে তা স্পষ্ট হবে। আমাদের এ অঞ্চলেও এ ধরনের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। সামুদ্রিক প্রাণীর ওপরও বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন যে আগামী দিনের কোনো বিপর্যয়ের সম্ভাবনাকে জোরালো করে, এ বিষয়ে গবেষকরা বারবার হুশিয়ার করে দিয়েছেন। কাজেই আমাদের চারপাশের উপকারী প্রাণীর সংখ্যায় কী পরিবর্তন এল সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
পাখিসহ বিভিন্ন উপকারী প্রাণী বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাণী ও উপাদান খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কোনো একটি উপকারী প্রাণীর স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থবির হয়ে পড়লে পরিবেশ মানুষের বসবাসের কতটা অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বারো.
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের প্রতি নয়জনে একজন দীর্ঘমেয়াদে অভুক্ত থাকে। এফএও (The Food and Agriculture Organization of the United Nations)-এর তথ্য উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- ১৯৯২ সালের তুলনায় বিশ্বে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও এখনও বিশ্বে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদে অভুক্ত থাকে। চরম দারিদ্র্যের শিকার এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অনেকেই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের জায়গা দখলের চেষ্টা করবে। এতে যে কোনো সময় বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যেতে পারে। জাপানের ফুকুশিমার দুর্যোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হারিকেন স্যান্ডি, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সিডর- এ ধরনের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি না নিলে যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়তে পারে। উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া সম্ভাব্য আর কী কী কারণে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়তে পারে- এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা অব্যাহত রাখা জরুরি।
কোনো বিবেকহীন মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের চারপাশের উপকারী প্রাণীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে। কাজেই যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের সামান্য ভুল বা অদূরদর্শিতার জন্য যাতে প্রকৃতি থেকে কোনো উপকারী প্রাণী হারিয়ে না যায়, সেদিকেও সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ হাজার বছরের চেষ্টার পরও পরিবেশের ক্ষতি পূরণের বিষয়টি অনিশ্চিত থেকে যায়।
ইবোলা বিস্তারের মতো কোনো কঠিন পরিস্থিতি উন্নয়নশীল কোনো দেশের একার পক্ষে মোকাবেলা করা কত কঠিন তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই যে কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণেও সব দেশকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে যে কোনো বড় চ্যালেঞ্জও স্বল্পতম সময়ে সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি : প্রকাশক, যুগান্তর

No comments

Powered by Blogger.