বদলে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নীতি

বদলে যাচ্ছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের ঋণনীতি। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন তথা সরকারের অগ্রাধিকার খাতকে বিবেচনায় নিয়ে এ জন্য নতুন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত- এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে বিশ্বব্যাংক। ধাপে ধাপে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে বৈঠকও করবে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে সোমবার অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক দুটি লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য একটি কৌশলপত্র তৈরি করছে। এ লক্ষ্যমাত্রার একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে হতদরিদ্রের সংখ্যা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা। বর্তমানে প্রায় ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। অন্যটি হল- ৪০ শতাংশ নিুশ্রেণী মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টি করা। যেন পরবর্তী সময়ে তারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে আসতে পারে।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৫ সালে। ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রশিক্ষিত তথা দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিকে প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আসন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাদের কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক শীর্ষক কৌশলপত্র তৈরি করবে বলে জানা গেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, যেকোনো দেশের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে দাতা গোষ্ঠীর ঋণকৌশল নির্ধারণ করা উচিত। বিশ্বব্যাংকের এ উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। এটা পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।বিশ্ব ব্যাংকের উন্নয়ন তথা বাংলাদেশের জন্য ঋণদান কৌশল বা নীতিমালার মেয়াদও আগামী বছর শেষ হচ্ছে। এ জন্য ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ৪ থেকে ৫ বছরের জন্য নতুন কৌশল বা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে। চলমান কৌশলপত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী কৌশলপত্রে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্ধারণ করা হবে। এ জন্য অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, বণিক সংগঠন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করে এ দাতা সংস্থাটি।বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক অফিসের মিডিয়া কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব যুগান্তরকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ৪-৫ বছরের জন্য একটি দিকনির্দেশনামূলক দলিল তৈরি করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার ধরন কী হবে, কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নেয়া হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের উপকারভোগী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যা পরবর্তী কালে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত করা হতে পারে। এসব বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট, অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেবেন বলে তিনি জানান।সূত্রমতে, বিশ্বে অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় এশিয়াতে দরিদ্য লোকের বসবাস বেশি। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশে রয়েছে সর্বোচ্চ। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, হতদরিদ্রদের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে নানা অপপ্রচার ও বিরূপ ধারণা রয়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, বিশ্বব্যাংক গরিবকে গরিব বানায় আর ধনীকে করে আরও ধনী। সংস্থাটি এই ভাবমূর্তি সংকট থেকে বেরিয়ে আসত চাইছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য সংস্থাটি ঋণনীতি পরিবর্তন করার চিন্তা করছে। বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংক শুধু একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি নলেজ (জ্ঞান) ব্যাংক। অনেক দেশ তাদের পরবর্র্তী উন্নয়ন এজেন্ডা নির্ধারণে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেয়। এ জন্য তারা সম্মানীও প্রদান করে থাকে। যেমন- চীন তাদের ২০৩০ সালনাগাদ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বিশ্বব্যাংককে দিয়ে একটি কৌশলপত্র তৈরি করিয়েছে। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.