যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে, শঙ্কার কিছু নেই -বিজিএমইএ by শুভংকর কর্মকার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। একই সময়ে প্রতিযোগী দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম এগিয়ে গেছে। অবশ্য এতে শঙ্কার তেমন কোনো কারণ নেই, এমনটাই বলছেন বিজিএমইএর নেতারা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। অবশ্য প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও পরিমাণে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম ও চীন আবার বাংলাদেশ থেকে বেশ এগিয়ে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় হাজার ১৯৬ কোটি ডলারের এক হাজার ৯৪৩ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১২৬ কোটি বর্গমিটার। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ১৩২ কোটি বর্গমিটার। সেই হিসাবে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
আবার অর্থমূল্য হিসাবে আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭৮ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৩৮৬ কোটি ডলারের। ফলে রপ্তানি মূল্য কমেছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ। অবশ্য চলতি বছরের আট মাস শেষেও প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, ১ দশমিক ৫১। তার মানে রপ্তানি পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে।
অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪ কোটি ৫০ লাখ বর্গমিটার সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে দেশটির রপ্তানি ছিল ৬৯ কোটি ২৬ লাখ বর্গমিটারের সমপরিমাণ। অর্থের হিসাবে ভারত রপ্তানি করেছে ২৬৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। গত বছরের প্রথম নয় মাসে ছিল ২৫০ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে এবার দেশটির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, চীনে উৎপাদন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনেক কার্যাদেশই ভারতে স্থানান্তর হয়েছে। এ জন্য ভারতের রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধস ও গত বছরের রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কিছুটা কমেছে, এটি সত্য। তবে ভীত হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ, ইতিমধ্যে কারখানা পরিদর্শন অনেকটাই শেষ হয়েছে। আর এতে মাত্র ২ শতাংশের কমসংখ্যক কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে। এই ইতিবাচক বার্তা সবার কাছে পৌঁছে গেছে।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবারও ফিরতে শুরু করেছে। মাঝে যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারড বিল্ডিংয়ে কাজ দেয়নি, তারাও কার্যাদেশ দিচ্ছে। ফলে এই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থাকবে না।’ আসছে বছরেই ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৮১০ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে চীন, প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৭৮০ কোটি বর্গমিটার। অবশ্য ভারত ও চীনের চেয়ে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো, ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পরিমাণের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির বিরাট অংশই আসে চীন থেকে, ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামের ১০ দশমিক ৫১, বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৪২, ইন্দোনেশিয়ার ৫ দশমিক ৯৬, ভারতের ৩ দশমিক ৬৯, কম্বোডিয়ার ৩ দশমিক শূন্য ৯ এবং তুরস্কের দখলে রয়েছে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.