মেট্রোরেল আইন-২০১৪ অনুমোদন- বিনা টিকিটে চড়লে ১০ গুণ জরিমানা

বিনা টিকিটে মেট্রোরেলে চড়লে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদ- দেয়া হবে। এমন বিধান রেখে মেট্রোরেল আইন-২০১৪ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাত্রী পরিবহন সমস্যার সমাধানে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। মেট্রোরেলে থাকবে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে শুরু হয়ে মেট্রোরেল বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে শেষ হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পে সরকার দেবে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মেট্রোরেল ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। মেট্রোরেলের নকশা চূড়ান্ত করতে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জরিপ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এই রেলের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিশেষ বিধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) পরিচালিত হবে সরকারি ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে। এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) হাতে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো প্রকল্প হাতে নেয়া হলে তা এ আইনের আওতায় আসবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভবিষ্যতে অন্য কোন কোম্পানি (সরকারি/বেসরকারি) মেট্রোরেল পরিচালনা করতে চাইলে লাইসেন্স নিতে হবে। ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ লাইসেন্স দেবে। তবে সম্পূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান হলে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না। তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণ, পরিদর্শক নিয়োগ, দুর্ঘটনা ও আইন লঙ্ঘনের শাস্তির বিষয়গুলোও প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ডিটিসিএ একটি কমিটির মাধ্যমে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করবে। রেলের পরিদর্শকও তারা নিয়োগ দেবে। প্রস্তাবিত আইনে মেট্রোরেল ও যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ১০ বছর জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছর কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানা, পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করলে দুই বছর জেল ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এক বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, সংরক্ষিত স্থানে কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে এক বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে ৫ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিনা টিকিটে বা পাস ছাড়া কেউ ভ্রমণ করলে ভাড়ার ১০ গুণ জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাস জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলের টিকিট জাল করলে ১০ বছর কারাদ- এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন হয়। বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেইট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। এ প্রকল্পের ১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রতি চার মিনিট পর পর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে মেট্রোরেল, ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা উল্লেখ থাকে না। তাই এটি বলা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.