প্রেরণা এখনো আরাফাত

ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত তরুণ প্রজন্মের
কাছেও পেয়েছেন নায়কের আসন। পশ্চিম তীরের রামাল্লা
শহরের এই তরুণীর মুঠোফোনে আরাফাতের ছবি যেন
সেটাই জানান দিচ্ছে। কাল ১১ ডিসেম্বর আরাফাতের
দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ছবি: এএফপি
মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে ১০ বছর। কিন্তু এখনো জাতীয় নেতা হিসেবে রয়ে গেছেন জাতির হৃদয়ে। তিনি ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত। দশকের পর দশক ধরে আরাফাতই ছিলেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিমূর্তি। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাত ছিলেন ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের’ প্রেসিডেন্ট। পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র না হওয়ায় সেটাই এখনো ফিলিস্তিনের পরিচিতি। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মুখপাত্র জাভিয়ার আবু ইদ বলেন, ১৯৬৭ সালের সীমান্তকে স্বীকৃতি দেওয়া ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশ ভূখণ্ড পরিত্যাগ করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত আরাফাতই প্রথম নিয়েছিলেন। পিএলও নরওয়েসহ পাশ্চাত্যের মধ্যস্থতায় ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে ঐতিহাসিক অসলো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু স্থায়ী কোনো চুক্তি ছাড়াই অন্তর্বর্তী পর্যায়টি শেষ হয়। পরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় এবং দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি গণ-আন্দোলন (২০০০-২০০৫) শুরু হয়। ইসরায়েল তখন ব্যক্তি আরাফাতকেই শান্তির পথে একমাত্র বাধা আখ্যা দেয়।
আবু ইদ বলেন, ২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যুর পর ইসরায়েল বলেছিল, শান্তির প্রধান বাধা দূর হয়েছে এবং ফিলিস্তিনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে চায় তারা। তবে ইসরায়েলের কাছে নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণে হিমশিম খেতে হয়েছে মাহমুদ আব্বাসকে। পিএলও, এর অন্তর্ভুক্ত সংগঠন ফাতাহ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ ন্যাথান ব্রাউনের মতে, সংগঠনগুলো এখন আরাফাতের সময়ের তুলনায় অনেক কম প্রভাবশালী। ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনসের গবেষক করিম বিতার বলেন, ‘আবু আমর নামে জনসাধারণের কাছে পরিচিত আরাফাতের ছিল নেতৃত্বের সহজাত গুণ। তবে তিনি প্রতিনিধি নিয়োগ করা, কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়ার মতো কাজগুলো জানতেন না। তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন, কূটনীতিতে দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক নন।’ জীবনের শেষ দিনগুলোতে আরাফাতের আকর্ষণ অনেকটাই কমে যায় বলে মনে করেন ন্যাথান ব্রাউন। তাঁর মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, দুর্নীতির প্রতি সহনশীলতা ইত্যাদিই এর কারণ। স্মরণানুষ্ঠান বাতিল: বিবিসি জানায়, আরাফাতের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজায় পরিকল্পিত স্মরণ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ফাতাহ জানায়, বর্তমানে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় তারা স্মরণ অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চ ও ফাতাহ ভবনে গত শুক্রবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.