তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী

যানজটের কষ্টে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঢাকার নগরজীবন। দিন নেই, রাত নেই- যখন তখন ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, শাহবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, গাবতলী, সায়েদাবাদ- কোথায় নেই যানজট। পুরো রাজধানী যানজটে আটকে যায় প্রায় প্রতিদিন। রাজধানীর ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, নালা নর্দমা, পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অভাব, মশার উপদ্রবসহ নানা সমস্যা আছে। তবে যানজট সমস্যা সব কিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। নগরবাসীর সবচেয়ে বেশি আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি হয় এই যানজটে। মানুষের চলার গতি কমিয়ে দেয়, দেহের শক্তি কমিয়ে দেয় যানজট। সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে যানজটের কারণে। বায়ু বিষাক্ত করে তোলার পেছনেও আছে যানজটের ভূমিকা। এক কথায় মেগা সিটি ঢাকার মহা সঙ্কট যানজট। রাজধানীর যানজট নিরসনে অনেক কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই নগরজীবনের এই নিত্য দুর্ভোগ লাগবে সহায়ক হয়নি। ফলে বরাবরের মতো গতকাল ঢাকার নগর জীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে আসে। জামায়াতের ডাকে পাঁচ দিনের হরতাল, পবিত্র আশুরা, সাপ্তাহিক ছুটি সহ প্রায় দুই সপ্তাহ রাজধানীর রাজপথ ছিল অনেকটা ফাঁকা। গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে হঠাৎ দৃশ্য পাল্টে যায়। দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে কর্মজীবী শ্রমজীবী শিক্ষার্থী সবাই বিপাকে পড়ে। তবে জেএসসি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে অনেক শিক্ষার্থীকে গলদগর্ম হতে হয়েছে। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরতে গিয়েও একই কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি সর্বত্র যানজটের তীব্রতা দেখা গেছে। পল্টন, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামটর, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর এলাকার এক একটি সিগন্যাল পার হতে সময় লেগেছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ওদিকে গতকাল আবহাওয়া ছিল অন্য দিনের তুলনায় উষ্ণ। ফলে দীর্ঘ যানজটের কারণে পথিমধ্যে আটকা পড়া নারী শিশু বয়স্কদের কষ্টের সীমা ছিল না। সারা দিনের যানজটে ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। যানজটের এমন করুণ অবস্থার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায়। এতে হঠাৎ গণপরিবহনে সঙ্কট দেখা দেয়। শুরু হয় নতুন কষ্ট, নতুন যন্ত্রণা। গাড়ির অভাবে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও রিকশা-অটোরিকশা পাওয়া যায়নি। পায়ে হেঁটে বাসে গাদাগাদি করে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। ট্রাফিক পূর্বাঞ্চলের ডিসি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাজধানীর এক এক অঞ্চলে এক একটা কারণে যানজট হয়। যেমন মতিঝিল এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। চলমান জেএসসি পরীক্ষার কারণে সকাল এবং দুপুরে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে গুলিস্তান এলাকার অবস্থা ভিন্ন। এখানে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অফিস আছে। ওই দলের সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সময় যানজট সৃষ্টি হয়। তবে গতকাল গুলিস্তান এলাকার যানজট ছিল শহীদ নূর হোসেন দিবসের কারণে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিবসটি পালন উপলক্ষে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি পালন করে। এতে কিছু সময়ের জন্য ওই এলাকায় যানজট লেগে যায়। যার প্রভাব সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন কারণে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। এর সমাধান একভাবে করা যাবে না। স্থান কাল অবস্থা ভেদে করতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই ট্রাফিক কর্মকর্তা। তবে ভুক্তভোগীর অভিযোগ ভিন্ন। তারা বলেন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী ওঠানামা, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা, চাঁদাবাজি, ভুল সিগন্যাল ইত্যাদি কারণে যানজট দেখা দেয়। ট্রাফিক বিভাগ আন্তরিক হলে রাজধানীর যানজট নিরসন না হোক অন্তত কমিয়ে আনা যায়।

No comments

Powered by Blogger.