ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি অবরোধে অচল চবি

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ কর্মী মিঠুনের ওপর হামলাকারী ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের দাবিতে শাটল ট্রেন অবরোধ করেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। সোমবার ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুমন মামুন ও সহসভাপতি অমিত কুমার বসুর অনুসারীরা এ অবরোধ পালন করে। এ সময় তারা শাটল ট্রেনের লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের কর্মীদের ওপর সুমন মামুন গ্র“পের কর্মীদের হামলার পাল্টা অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা দুঘণ্টা প্রধান ফটক অবরোধ করে রাখে এবং কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করে। উভয় গ্রুপের কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।
গ্র“প দুটি নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। দুপক্ষের অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। অবরোধ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসও।জানা গেছে, সোমবার সকাল পৌনে আটটার দিকে ষোলশহর রেলস্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী প্রথম শাটল ট্রেনটি প্রথমে অবরোধ করে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুমন মামুন ও সহসভাপতি অমিত কুমার বসুর অনুসারীরা। এ সময় তারা শাটল ট্রেন না চালাতে স্টেশন মাস্টার ও লোকোমাস্টারকে হুমকি দিলে লোকোমাস্টার ট্রেনের ইঞ্জিন ষোলশহর থেকে বটতলী স্টেশনে নিয়ে যায়।এরপর ছয় দফা দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। ফলে ষোলশহর স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী দিনের কোনো ট্রেন চলাচল করেনি।অবরোধের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা এসএম আলাউদ্দিন আলম যুগান্তরকে জানান, আমাদের দুজন নেতাকর্মী রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে ছাত্রলীগ ক্যাডার জালাল-রবিন-রূপমের নেতৃত্বে কয়েকজন তাদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে নামব।এ বিষয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনের পুলিশ ইনচার্জ আরব আলী জানান, সকাল পৌনে আটটার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী শাটল ট্রেন চালাতে নিষেধ করলে ট্রেন বটতলী স্টেশনে ফেরত যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বা পুলিশ প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। উনারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।এদিকে ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর সুমন গ্র“পের কর্মীদের হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দুঘণ্টা অবরোধ পালন করেছে ভিএক্স গ্র“পের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অবরোধ করে তারা। এ সময় মূল ফটকে তালা লাগিয়ে তারা সড়কে অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলার ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়া হলে তারা ফটকের তালা খুলে দেয়। বগিভিত্তিক ভিএক্স গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক জালাল আহমেদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রূপম বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান রবিনসহ কয়েকজন নেতা।ভিএক্স গ্র“পের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, রোববার রাত ১০টা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত দুই দফা হামলায় তাদের পাঁচ কর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের গোলাম রব্বানি, গণিত বিভাগের অনুপম বড়ুয়া, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সায়মন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কায়সার শাকিল এবং ফলিত ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের নাজিম হোসেন পলাশ।এদের মধ্যে প্রথম চারজনকে রাত ১০টায় এবং পলাশকে সকাল আটটার দিকে ষোলশহর স্টেশনে হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিএক্স গ্র“পের নেতা সরোয়ার পারভেজ জনি।প্রধান ফটকে তালা ঝুলানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির দফতর সম্পাদক জালাল আহমেদ জানান, অমিত-সুমনের নেতাকর্মীরা আমাদের পাঁচ নেতাকর্মীর ওপর হামলা করেছে। হামলার মধ্য দিয়ে তারা শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের শাস্তির আওতায় না আনলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।তবে ভিএক্স কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা অমিত কুমার বসু। তিনি জানান, আমাদের এক কর্মীর ওপর হামলার ঘটনায় চলমান প্রতিবাদী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এ মিথ্যা নাটক সাজানো হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সিরাজ উদদৌলাহ জানান, রোববারের ঘটনায় জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবুও শাটল ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক খান তৌহিদ ওসমানকে প্রধান করে দুসদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.