ছাত্রদলের বিদ্রোহী ৩ নেতা বহিষ্কার ৭ জনকে শোকজ

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে চলমান বিদ্রোহ আরও জটিল রূপ নিয়েছে। বিদ্রোহ নিরসনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। উল্টো বিদ্রোহী তিন ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এবং সাবেক সহ-সভাপতি আবু সাঈদকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জাভেদ হাসান স্বাধীন, তরুণ দে, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টিটু, ফেরদৌস আহমেদ মুন্না এবং সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রয়েলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সোমবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ানুল হক রিয়াজকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক আবদুস ছাত্তার পাটোয়ারি। তিনি জানান, একই অভিযোগে চকবাজার থানা ছাত্রদল সভাপতি নাহিদুল ইসলাম নাহিদ এবং সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে শোকজ করা হয়েছে।
এদিকে বহিষ্কারের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আজ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করবেন।
বিএনপি থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারণে খোকন ও আবু সাঈদকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত ওই দুজন সাবেক ছাত্র নেতার সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক যোগাযোগ বা সংশ্রব না রাখতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বলা হয়েছে। এদিকে ছাত্রদলের কোন্দলের কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পদবঞ্চিত তরিকুল ইসলাম টিটু বলেন, আমরা শোকজের জবাব দিতে কাল (মঙ্গলবার) নয়াপল্টনে যাব। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, টুকুর মতো সরকারি দালালকে যেখানে পাব, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। বহিষ্কার বা শোকজকে আমরা ভয় পাই না।
১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকে তা বাতিলের দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। সবশেষ ৭ নভেম্বর বিএনপির ছাত্রবিয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর হামলা চালায় পদবঞ্চিতরা। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্রোহীদের কয়েকজনকে বহিষ্কার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন এ্যানী-টুকু। তারা দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
এদিকে সোমবার রাতে ছাত্রদলের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অংশ নেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ছাত্রদলের অচলাবস্থা নিরসনে চেয়ারপারসনের কঠোর নির্দেশনা নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যে কোনো মূল্যে সংগঠনের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন সেখানে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকেও ভর্ৎসনা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.