মেঘনা থেকে এমভি কর্ণফুলীর চালকের লাশ উদ্ধার

লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা নদী থেকে এমভি কর্ণফুলী-৫ জাহাজের নিখোঁজ চালক নূর নেওয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার গভীর রাতে মেঘনা নদীর আলেকজান্ডার মাছঘাট থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদীয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ চালককে উদ্ধার করলেও এখনও জাহাজের দুজন কর্মচারী নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় শনিবার থেকে শুরু হওয়া নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট সোমবার রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। সোমবার বিকালে নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নৌপথের নিরাপত্তাসহ শ্রমিকদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয় মন্ত্রণালয়।
সমঝোতার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার : বৈঠক শেষে নৌমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, নৌযান শ্রমিকদের দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক সফল হয়েছে। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছেন। একই সঙ্গে তাদের দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, সমঝোতার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে সব জাহাজ চলবে।বৈঠক সূত্র জানায়, শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে, কর্ণফুলী-৫ জাহাজের নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা হবে এবং আগামী ৭ দিনের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। নিহত শ্রমিকদের অনুদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সারা দেশে নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধে এখন থেকেই নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড এবং জেলা পুলিশের টহল কার্যকরভাবে অব্যাহত রাখা হবে। নৌপথের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আগামীকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌযান মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি যৌথ সভা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া বালুমহালে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। বৈঠকে শ্রমিক নেতা ও বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।এর আগে গত শুক্রবার রামগতির কর আবদুল্লাহ এলাকায় কর্ণফুলী এমভি-৫ জাহাজে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে চালকের ওপর হামলা হয়। পরে ওই চালকসহ ৩ জন নিখোঁজ হন। শনিবার রাতে জাহাজের মালিক আবদুস সালাম বাদী হয়ে জাহাজের চার কর্মচারীসহ পাঁচজনকে আসামি করে কমলনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনাকে লাইটারেজ শ্রমিক তথা নৌযান শ্রমিকরা ডাকাতির ঘটনা অভিহিত করে এবং এর সঙ্গে আরও কিছু দাবি তুলে ধরে পরদিন শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে। সোমবার তৃতীয় দিনে চট্টগ্রাম, মংলা, বরিশাল, আশুগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর অচল হয়ে পড়ে। বন্ধ থাকে পণ্য ওঠা-নামা। রোববার নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে নৌযান শ্রমিক নেতাদের মধ্যে বৈঠকের পর শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও শ্রমিকদের একাংশ ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন রাতে চালক নুর নেওয়াজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।লক্ষ্মীপুর ও রামগতি থেকে প্রতিনিধি জানান, রোববার রাতে মেঘনা নদীর রামগতির আলেকজান্ডার মাছঘাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রাতে নদীতে লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে রামগতি থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কমলনগর থানায় প্রেরণ করে। কমলনগর থানা পুলিশ সোমবার সকালে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে মর্গে তার লাশ নিয়ে আসে। নিহত নুর নেওয়াজের লাশ শনাক্ত করেছেন তার ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম।চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখায় চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা কাটেনি। ১৫টি মাদার ভেসেলে ২০ লাখ টন এবং আরো প্রায় ৩শ লাইটারেজ জাহাজ ৭ লাখ টন পণ্য নিয়ে অলস বসে থাকে।শাহজাদপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার উত্তরবঙ্গের একমাত্র নদীবন্দর বাঘাবাড়ী দিয়ে কোনো পণ্য ওঠা-নামা করেনি। বাঘাবাড়ী বন্দরের ইজারাদারের প্রতিনিধি আবুল হোসেন জানান, ধর্মঘটের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বন্দরে থাকা ৩০টি সার ও তেলবাহী জাহাজ থেকে নৌযান শ্রমিকদের বাধার কারণে মালামাল খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।আশুগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় আটকা পড়েছে দেড়শতাধিক পণ্যবাহী কার্গো। এতে পণ্য সরবরাহ ও লোড-আনলোড ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নৌযান ধর্মঘট তৃতীয় দিনে জাহাজ থেকে মালামাল খালাস বন্ধ থাকায় আশুগঞ্জ বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী তীরে লাইটারেজ জাহাজের পাশাপাশি বালুবাহী কার্গো ট্রলারগুলোকে নদীতে অলস বসে থাকতে দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.