সুবিধা নিতে পারল না বাংলাদেশ by মাসউদুর রহমান

টেস্ট মেজাজের এখনো বড্ড অভাব। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের চেয়ে এখনো ওই দিকটাতে যে পিছিয়ে বাংলাদেশ তা দুই দলের শেষ হওয়া দু’টি ইনিংসের দিকে তাকালেই স্পষ্ট। হোম দল বরাবরই কিছু বাড়তি সুবিধা নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ অন্তত প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তা নিতে পুরাপুরি ব্যর্থ। জিম্বাবুয়ের ২৪০ রানের জবাবে ২৫৪/১০। যার অর্থ খুব সহজ। যেহেতু চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করে টার্গেট চেজ করে জিততে হবে বাংলাদেশকে। ফলে কত চাপে থেকে সে কাজ করতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে সমানে সমান থাকতে পেরে এগিয়ে গেছে। কারণ বোলিং সহায়ক উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে যে ব্যাটিং করতে হচ্ছে না তাদের। আর ১৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে যদি ২৫০ রানও করে ফেলতে পারেন তারা, তাহলে ঢাকা টেস্ট নিয়ে ভোগান্তির আর অন্ত থাকবে না। কথাগুলো একটু আগেভাগে বলা হলেও অমন কথা বলার পরিবেশ যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই। এত ক্যাজুয়াল তারা থাকবেন ব্যাট হাতে, সত্যিই তা কল্পনাতীত। দ্বিতীয় ইনিংস শেষে টিম মিটিংও হলো দীর্ঘÑ হাতুরাসিংহ ও হিথ স্ট্রিকদের। সেখানেও এ বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? মাস্ট উইন ম্যাচ, মাস্ট উইন সিরিজে অমন ‘ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ’ কিভাবে থাকে টিম বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের তা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড়। তিন তিনটি রানআউট, প্রতিপক্ষের সাজানো ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে ফিরে আসা। চিরাচরিত এ ধারার অবসান যে কবে হবে তা কে জানে!
দিন শুরু করেছিলেন জিম্বাবুয়ের করা ২৪০ রানের জবাবে প্রথম দিনের ২৭/১ নিয়ে। শামসুর ও মুমিনুল করেন সূচনা। শামসুর কখনো দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেন না এবার তা-ই হলো। ৮ রানে পানিয়েঙ্গারার বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার মাধ্যমে শুরু। এরপর মুমিনুল ও মাহামুদুল্লাহ খেলেন দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। দলীয় রান ৯২-এ নিয়ে আউট হন চমৎকার খেলতে থাকা মুমিনুল। তাও আবার রানআউট। ব্যাট যদি সিরিয়াসভাবে প্লেস করতেন তাহলে আউট হতেন না। কিন্তু ওই যে ক্যাজুয়াল থেকেই হয়ে গেলেন রানআউট ৫৩ রান করে। এরপর সাকিব এসেছিলেন। কিন্তু মাহামুদুল্লাহর সাথে বোঝাপড়াটা ঠিক না হয়ে রানআউট। ৫ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন এ অলরাউন্ডার। ১১৪/৪ দলের রান। এর পর থেকেই শুরু হয় চাপ। এর মধ্যেই মাহামুদুল্লাহ ও মুশফিক মিলে অবস্থার উন্নতিতে চেষ্টা করে যান। তারা দেখেশুনে ৬৪ রানের এক ইনিংস খেলে চা বিরতির ঠিক পূর্বমুহূর্তে সিকান্দার রাজার বলটি সুইপ করার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যাটে বলে হয়নি। জোরাল আবেদন, আম্পায়ারও নাকচ করেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ে রিভিউ নিয়ে সফল। ৬৩ করেছিলেন তিনি। এতেই বড় ক্ষতি হয়ে যায়। পরে মুশফিক ও শুভাগত চা বিরতির পর চেষ্টা করেও শুভাগত হোম যেন ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন। বল একেবারে মিড অনে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে তুলে দিয়ে আউট হলে লিড হবে কি না তা নিয়েই শঙ্কা শুরু। মুশফিকও সেই একই কাজ করেন। পানিয়েঙ্গারার অফ সাইডে পিচ করা শট বল পুল করতে গেলে স্কয়ারলেগে আরভিন সহজে ক্যাচ নেন। ইনিংস সেরা ৬৪ রান করেন তিনি। দলের রান ২২৬। পরে রাজিবও ক্যাজুয়াল থেকে রানআউট হলে পরে তাইজুল ও আলআমিন ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি শট খেলে শেষ পর্যন্ত দলকে লিড এনে দেন। সাকিবের মতো শৃঙ্খলা ভঙের শাস্তিভোগ করে ফিরে জিম্বাবুয়ের পেস বোলার পানিয়েঙ্গারা লাভ করেন ৫ উইকেট। এটা তার ক্যারিয়ার সেরাও। এর আগে ৩৮ রানে তিন উইকেট ছিল সেরা। কাল মিরপুরের উইকেটে সফল হলেন এ পেসার। ৫৯ রানে উইকেটগুলো নিয়েছেন তিনি।
এরপর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিন শেষে দুই ওভারে ৫ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। ভুসি সিবন্দা ও চাকাবা করেন ইনিংস ওপেন। কারণ ফিল্ডিংয়ে ব্যথা পাওয়ার জন্য সিকান্দার রাজা নামেননি ইনিংস ওপেন করতে। আজ ম্যাচের তৃতীয় দিন।

No comments

Powered by Blogger.