স্তনক্যান্সার : প্রয়োজন সচেতনতা by বদরুন নেসা নিপা

আমাদের দেশে এখনো স্তনক্যান্সারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পর থেরাপি, ওষুধপত্র, ইনজেকশন নিতে বলা হয়। যদি রোগী মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন, তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে। দেশে কত শতাংশ নারী স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, মোট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর দুই-শতাংশ স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত। আর গ্রামাঞ্চলে তো অনেকেই ডাক্তারের কাছেই যায় না। লিখেছেন বদরুন নেসা নিপা
ক্যান্সার ধরা পড়ায় দুই বছর আগে অপারেশন করে আরিফা হোসেনের একটি স্তন ফেলে দেয়া হয়। এখন আবার তার অপর স্তনেও ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তিন বছর ধরে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মধ্যবিত্ত আরিফা হোসেনের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন কিভাবে এত টাকা জোগাড় করবেন, সে চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন আরিফা হোসেন। এমন পরিস্থিতির শিকার অনেকেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার রোখসানা বলেন, স্তনক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয় দু’টি পদ্ধতিতে। একটি কেমোথেরাপি, অপরটি রেডিও থেরাপি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তুলনামূলকভাবে কম। ঢাকা মেডিক্যাল, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল এবং ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা মেডিক্যালে স্তনক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ক্যান্সারের অপারেশন পদ্ধতি অন্য অপারেশন পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। ফলে সাধারণ সার্জনের পক্ষে এ ধরনের অপারেশন করা কঠিন। ক্যান্সার অপারেশনের জন্য চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে অনেকেই সাধারণ সার্জন দ্বারা অপারেশন করে থাকেন, যার ফলে অপারেশন অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না। সরকারি হাসপাতালে আবার স্তনক্যান্সারের সব চিকিৎসা পদ্ধতি থাকে না। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক সব পদ্ধতিতে স্তনক্যান্সারের চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। তবে তা ব্যয়বহুল।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, স্তনক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ রোগী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ কম এবং সরবরাহ করা ওষুধ বেশির ভাগ সময় স্টোররুমে পড়ে থাকে বা বাইরে ওষুধের দোকানে চলে যায়। এসব ওষুধ বিদেশ থেকে আনা হয়। ফলে রোগীদের চড়া দামে ওষুধ কিনতে হয়। যদি দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে তাহলে ওইসব ওষুধের দাম এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। রোগীরাও উপকৃত হবে।
সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা: কানিজ ফাতেমা বলেন, ৪০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের স্তনক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে ইদানীং অল্প বয়সী মেয়েরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জেনেটিক কারণে, খাবারের কারণে, শিশুকে বুকের দুধ পান না করানোয় এবং নিঃসন্তান মহিলার স্তনক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
তিনি আরো বলেন, দিন দিন স্তনক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য মেয়েদের মাসে অন্তত একবার স্তন পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আমাদের দেশে স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত বেশির ভাগ নারী দেরি করে চিকিৎসকের কাছে আসেন। ফলে অনেক সময় আক্রান্ত স্তনটি কেটে বাদ দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না; কিন্তু রোগের শুরুতেই ডাক্তারের কাছে এলে এমন আশঙ্কা কম থাকে।
২০ বছর বয়স থেকেই প্রতিটি নারীর মাসে একবার নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা এবং বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করানো উচিত। এ ছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের বছরে একবার স্তন এক্স-রে করানো উচিত বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। কেননা প্রাথমিকভাবে যদি ক্যান্সার রোগ নির্ণয় করা যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করানো হয় তাহলে তা শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.