এরশাদের তাড়া

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের তাড়া দিয়েছেন। বলেছেন, হাতে সময় নেই। দল গোছাতে হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় পার্টির দিকে মানুষ তাকিয়ে আছে। তবে কেন, কি কারণে এত তাড়া তা স্পষ্ট করেননি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। গত কয়েক দিন ধরেই এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের এমন তাড়া দিচ্ছেন। তবে ঠিক কি কারণে এরশাদ এমন তাড়া দিচ্ছেন, যে নির্বাচনের কথা বলছেন সেই নির্বাচন কবে হবে এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই ব্যাপক জিজ্ঞাসা রয়েছে। রোববার দলের বনানীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এরশাদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি মিনিট আমাদের জন্য মূল্যবান। গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন। বাংলাদেশে একদলীয় শাসন চলছে। আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরে পাবো। মানুষ সুবিচার পাবে। তোমরা কাজ করো। এখন বিশ্রামের সময় নেই। আমাদের প্রতিশ্রুতি। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা, মৃত্যু এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সেদিন ৩৪ জন মারা গেল। আমরা শুধু দুঃখ প্রকাশ করি। কারা মারা গেল, কেন মারা গেল- সে খবর রাখি না। কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সারাক্ষণ সেই চিন্তা করি। আশা করি দেশে সুদিন আসবে। সেদিন আমরা পরিবর্তন আনবো। নেতাকর্মীদের সংগঠন  গোছানোর তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন এরশাদ। বলেন, আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন জনসংখ্যা সীমিত রাখার জন্য পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্প শুরু করেছিলাম। জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে, আমাদের এই সীমিত আয়তনের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা কত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসংখ্যা বেশি হলেও সমস্যা নেই, একে জনশক্তিতে পরিণত করা হবে। ঘরে ঘরে আজ বেকারত্বের মহোৎসব চলছে, লাখ লাখ যুবক বেকার। চাকরির খোঁজে বিদেশ যাওয়ার সময় প্রতারণার শিকার হচ্ছে, হতাশ হয়ে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এরশাদ প্রশ্ন রেখে বলেন, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে হাজার হাজার বাঙালি পড়ে আছে- এই কি জনশক্তি রপ্তানির নমুনা! শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের মাঝ সমুদ্রে ফেলা দেয়া হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর  উদ্দেশে বলেন, আপনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনুন। এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলছি। শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলছি। সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের রাজনীতিতে। শুধু চিন্তা কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়। ক্ষমতায় যাওয়া যায়। মানুষের প্রতি কোন ভালবাসা নেই। এরশাদ বলেন, ঘরে ঘরে চাকরির কথা বলা হয়েছিল, এখন ঘরে ঘরে বেকার। বেকারত্বের অভিশাপ দেশকে গ্রাস করছে। একটা চাকরির জন্য হাজার হাজার আবেদন। চাকরি না পেয়ে অনেকে মাদক গ্রহণ করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। এরশাদ বলেন, জাপা আঞ্চলিক দল নয়। আমি জেলে থেকে এমপি হয়েছি। ঢাকা থেকে এমপি হয়েছি। পরিবর্তন আসবে। দুই দল থাকবে না। জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ মন থেকে পরিবর্তন চায়। এসময় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন- দুই নেত্রীর দিন শেষ, এরশাদের বাংলাদেশ। এরশাদ নেতাকর্মীদের স্লোগান শুনে বলেন, এজন্য তোমাদের কাজ করতে হবে। জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি শাহ আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়শল চিশতী, দলটির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রেজাউল ইসলাম, নুরুল ইসলাম নুরু, শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.