প্যাপিরাস থেকে পেপার

সে অনেক আগেরই কথা। প্রথম যখন বর্ণ বা লিপি  আবিষ্কার হয় তখন কিসের ওপর লিখবে এ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয় মানুষ। গাছের পাতা, বাকল, চামড়া, পাথর, মাটি ইত্যাদির ওপর শুরু হলো মানুষের প্রথম লেখা। মিসরের নীল নদের তীরে জন্মাতো নল-খাগড়া জাতীয় একধরনের গাছ। নাম প্যাপিরাস। এই গাছের কাণ্ড থেকে প্রাচীন মিসরীয়রা একধরনের কাগজ উৎপাদন করত। তারা এই গাছের কাণ্ডকে লম্বা লম্বা পাতের মতো করে কেটে নিত। প্যাপিরাস গাছের একেবারে মাঝখানের পাতটি সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের। এসব পাতকে পাশাপাশি সাজিয়ে পানিতে ভিজিয়ে শুকিয়ে নিলে জোড়া লেগে পাতলা চাদর বা পাতের মতো হতো। এরপর পাত বা শিটগুলো হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করে রোদে ভালো করে শুকানো হতো। পরে লেখার জন্য ব্যবহৃত হতো এসব পাত বা শিট।  লেখা শেষে সংরক্ষণের জন্য গুটিয়ে রাখা হতো। প্যাপিরাস গাছ থেকে  তৈরী বলে এ পাত বা শিটকে  পেপার বলা  হতো। পেপারের চৈনিক প্রতিশব্দ কায়গদ আর  আরবি প্রতিশব্দ কাগজ।

প্যাপিরাস গাছ এক থেকে তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এ গাছের কাণ্ড অত্যন্ত নরম এবং গোড়ার দিকে মানুষের হাতের কবজির মতো মোটা। চূড়ার দিকে কাণ্ডটি ঝুঁকে থাকে। এ গাছের ডাল দেখতে অনেকটা কোঁকড়ানো খসখসে চুলের মতো। পাতা ছোট, মূল শক্ত ও সবল। মিসরীয়রা প্যাপিরাস গাছের সরু-লম্বা ডাঁটি দিয়ে মাদুর ও নৌকার পাল বানাত। কাণ্ডের ভেতরে অবস্থিত মজ্জা শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করত। গরিব মানুষ প্যাপিরাস গাছের মজ্জা সিদ্ধ করে ুধা নিবারণ করত। ইথিওপিয়া ও নীল নদের উজানে এখনো এই গাছ দেখা যায়। পূর্বে নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায় যত ব্যাপকভাবে এই গাছের চাষ হতো, তত এখন আর চাষ হয় না। আর প্রাচীন পদ্ধতিতে আজকাল কাগজও তৈরি করা হয় না।
গ্রন্থনা : সাহিদা শিল্পী

No comments

Powered by Blogger.