প্রতারণার নতুন নাম এইমওয়ে করপোরেশন by হকিকত জাহান হকি

ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউসহ অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির পর এবার এইমওয়ে করপোরেশনের আমলনামা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ৪০ হাজার গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে সংগ্রহ করা ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৩১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এইমওয়ে করপোরেশনের অধীনে আলোর দিশারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি গঠন করে প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এইমওয়ে করপোরেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রিদওয়ান বিন ইসহাকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে দুদক। এরই মধ্যে কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ মামলা দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়। অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন দুদকের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদার। অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। শিগগির রাজধানীর পল্টন থানায় অভিযুক্ত ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। আসামির তালিকায় অন্য চার জন হলেন_ এইমওয়ে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএম সালাউদ্দিন, পরিচালক (অর্থ) মশিউর রহমান ও মাসুদ রানা। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোট ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ টাকা জমা করা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রাজধানীর বিজয়নগর শাখায়। অর্থের উৎস গোপন করে এইমওয়ে করপোরেশনের নামে খোলা হিসাবে টাকাও জমা করা হয়েছিল। এর মধ্য থেকে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৩১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। অবশিষ্ট টাকা জব্দ করার পর ওই ব্যাংক হিসাবে জমা আছে। সূত্র জানায়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ওই হিসাব থেকে অধিকাংশ অর্থ নগদে জমা ও উত্তোলন করায় বাংলাদেশ ব্যাংক ওই লেনদেনকে সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদন্ত করে ওই লেনদেনকে মানি লন্ডারিং আইন পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনটি দুদকে পাঠানো হলে দুদক অনুসন্ধান করে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায়। জানা গেছে, আমদানি, রফতানি, উৎপাদন, বিতরণ ও নির্মাণ সংক্রান্ত ব্যবসার উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে এইমওয়ে করপোরেশনের নিবন্ধন গ্রহণ করা হলেও আইন ভঙ্গ করে এমএলএম পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
অন্যদিকে সমবায় অধিদফতর থেকে সমবায় সমিতি আইন-২০১১ ও সমবায় সমিতি বিধিমালা অনুযায়ী আলোর দিশারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নিবন্ধন গ্রহণ করা হয়। সমবায় সমিতি বিধিমালা অনুযায়ী কমিশনের ভিত্তিতে এমএলএম পদ্ধতিতে সমিতির শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। সমবায় অধিদফতরের এ বিধান লঙ্ঘন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা আলোর দিশারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নামে সংগ্রহ করা অর্থ এ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের স্বার্থে বিনিয়োগ করেননি। বরং সদস্যদের আড়াল করে মোট ৯ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৮৯ টাকায় সমিতির কর্মকর্তাদের স্বার্থে এইমওয়ে হারবাল লিমিটেড, এইমওয়ে করপোরেশনের নামে জমি ক্রয়, রাজধানীর ৫০/এ, পুরানা পল্টনে হাবিব সেন্টার নামে ভবন নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.