ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

(বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনে ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধে ব্যবসায়ীদের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, 'আপনাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ দিন শেষে ক্ষতি আপনাদের। ক্ষতি দেশের মানুষের।' গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দেশের বৃহত্তম মাসব্যাপী এই বাণিজ্যমেলার আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ এবং এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বোসও বক্তৃতা করেন। বাসস।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের ভরাডুবি ভুলতে পারেননি। তিনি বলেন, 'বেগম জিয়া সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে পাশে নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।' তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে যা ঘটছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া এদেশের মানুষ আর কখনও তা দেখেনি। তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হার মানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া লাশ চান। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, 'আন্দোলনে কিছু লোক মারা যাবে এবং দেশবাসীকে তা মেনে নিতে হবে।' তিনি বলেন, দেশবাসী দেখেছে_ আন্দোলন করে বিএনপি জামায়াত কী পেয়েছে। তারা ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। তারা শুধু জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য বিএনপি নেত্রীকে দেশবাসীর কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। একমাত্র সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের এক ডজনেরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। তিনি বলেন, জনগণের দৃঢ় প্রত্যয়, কর্মক্ষমতা এবং অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে এ লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। শেখ হাসিনা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মানোন্নয়ন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও একে আকর্ষণীয় করার দিকে দৃষ্টি দিতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শ্রম পরিবেশ ও শ্রম নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং নিজস্ব ব্র্যান্ডের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সাফল্য কামনা এবং আশা প্রকাশ করে বলেন, এই প্রদর্শনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও বাণিজ্যিক সেতুবন্ধন তৈরিতে কার্যর্কর ভূমিকা রাখবে। পরে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে এবং বেলুন অবমুক্ত করে মেলার উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ ১২টি দেশের ২৭টি সংস্থা এই মেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলায় ৯৬টি প্যাভিলিয়ন, ৪৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ৩১৬টি স্টল স্থান পাচ্ছে। মেলার প্রবেশমূল্য বয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা খোলা থাকবে। এ বছরের বাণিজ্যমেলার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন ইকো-পার্ক, ই-শপ, চিকিৎসা ও রক্তদান কেন্দ্র এবং লোকসঙ্গীত পরিবেশনা। তরুণ সমাজের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিগত বছরগুলোর মতো 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি প্যাভিলিয়ন' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মেলায় খাদ্য এবং পণ্যের মান নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদফতরের একটি পৃথক বুথও খোলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.