অপরাধী চক্র ভয়ঙ্কর

(সাইবার ক্রাইম) আন্তর্জাতিক 'সাইবার ক্রাইম' চক্র বাংলাদেশকে মৃগয়া ক্ষেত্র বানিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে চেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ প্রতিরোধে এ দেশ অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভেবেই তারা তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করে। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরার একটি বাসায় ৩৯ সাইবার অপরাধী ধরা পড়ার পর গোয়েন্দাসহ অনেকের চোখ কপালে ওঠার কথা। আর এটাই দেশে এ ধরনের জালিয়াত চক্র ধরা পড়ার প্রথম ঘটনা। অপরাধীরা এখানে বসেই চীন ও তাইওয়ানে বিভিন্ন ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ড ও অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জালিয়াতি করে ইতিমধ্যেই ২০০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে স্বীকার করেছে। তারা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে শনিবার সমকালে 'ভয়ঙ্কর জালিয়াত চক্র' শিরোনামের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। প্রশ্ন হলো, তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সাইবার ক্রাইম শনাক্তকরণ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারল কী করে? তাছাড়া তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কারা কারা জড়িত সেটা এখনও অজ্ঞাতই থেকে গেছে। অপরাধী চক্রের কাজকর্ম যেমন ছায়াছন্ন, তেমনি সূত্রগুলোকে জোড়া দিয়ে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন এখনও অধরাই থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি কেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কালক্ষেপণ করছে, সেটাও প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। বাংলাদেশে গত বছর সংশোধিত আকারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন বলবৎ হয়েছে। দেশি হোক আর বিদেশি হোক, অনলাইন ব্যাংকিং জালিয়াতিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইম শনাক্ত করা, অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আটক করা এবং জেল-জরিমানা করার ব্যবস্থা রয়েছে বিদ্যমান আইনে। তবে সার্বক্ষণিকভাবে এ ধরনের অপরাধ শনাক্ত করার মতো তাগিদ থাকা চাই এর সঙ্গে জড়িত সংস্থার। তা না হলে দেশি-বিদেশি সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যুক্তরা উৎসাহিত হবে। অপরাধ ধরার মতো প্রযুক্তিগত কোনো ঘাটতি থেকে থাকলে সেটা অনতিবিলম্বে দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদেশি অপরাধী চক্র ধরা পড়ায় অন্যরা হুঁশিয়ার হবে। বিদেশি অন্য কোনো চক্র এখানে অপরাধে যুক্ত থেকে থাকলে তারা গা-ঢাকা দিতে পারে, এমনকি কিছুদিন নিষ্ক্রিয়ও হতে পারে। কিন্তু সুযোগ বুঝে তারা নিত্যনতুন পন্থায় নতুন অপরাধ মিশনে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দেশি অপরাধীদের আয়ত্তের মধ্যে, সে বিষয়টিও বিশেষজ্ঞদের খেয়াল রাখতে হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন দেশি অপরাধী গ্রেফতারও হয়েছে। তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করতে হবে। ধৃত আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের বাংলাদেশি সহায়তাকারীদের সম্পর্কে জেনে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রাইম চক্র বাংলাদেশকে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানোর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে দেশের নিরাপত্তা, সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.