সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চাই

দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মসূচিতে হামলার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দাবি জানানো হয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহিংসতার বিরুদ্ধে হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সমাবেশে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ আইনে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একাত্তরে গণহত্যাকারীদের বশংবদেরাই এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সকল নাগরিক সমাজ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলতে পারি আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাহলে হামলাকারীরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। তাদের দমন করা সম্ভব হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। সমাবেশ শেষে রাজধানীতে একটি কালো পতাকা মিছিল বের করা হয়।
সনাতন ধর্মীয় সম্মিলিত পরিষদ : শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে 'সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন' প্রণয়নের দাবি জানায় বাংলাদেশ সনাতন ধর্মীয় সম্মিলিত পরিষদ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, নানা অজুহাতে সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন চলে আসছে, এ পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। ফলে এসব কাজে যারা জড়িত, তারা আরও উৎসাহ পাচ্ছে। আইন করে হামলা ও নির্যাতন বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার করা, হামলা-নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত এলাকা প্রধানমন্ত্রীকে পরিদর্শন করার দাবি জানানো হয়।
পরিষদের সভাপতি হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, সংগঠনের সদস্য সচিব দিলীপ ভদ্র, জে কে পাল, জিতেন্দ্রচন্দ্র বর্মণ, ডি এল চৌধুরী, নির্মল চৌধুরী, বিজন ভৌমিক প্রমুখ।
নাগরিক ঐক্য : সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, আর ক্ষমতাসীনরা এটাকে রাজনীতির উপজীব্য করছে। গত ৪২ বছরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কারণ খুঁজতে গভীরে যাওয়া হয়নি এবং এটাকে ভোটের উপজীব্য করা হয়েছে মন্তব্য করেন তিনি।
মান্না বলেন, অভয়নগরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়টি পুলিশ জানার পরও ব্যবস্থা নেয়নি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ তুলে ধরেন মান্না। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং তা নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন তিনি।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ : আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালঘুদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধন ও পেশাজীবী সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি : শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর শাখা। সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বহ্নিশিখা জামালী, ড. এম আকতারুজ্জামান, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, সেকেন্দার হোসেন, রাশিদা বেগম, মো. শাহজাহান, শাহাদাৎ হোসেন খোকন, ফায়জুর রহমান মুনীর, মীর রেজাউল আলম প্রমুখ।
আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ : সকালে শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রমনা কালী মন্দিরে গিয়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। সংগঠনের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দীন পাঠানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল কাইয়ুম প্রমুখ।
নাগরিক উদ্যোগ :দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম), মাইনোরিটি রাইটস ফোরাম ও মানবাধিকার সংগঠন নাগরিক উদ্যোগ। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে যৌথ মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
বিডিইআরএম সভাপতি মুকুল শিকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন দীপু, কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর ও অধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন।
বিবেকানন্দ গোস্বামী আন্তর্জাতিক সেবাশ্রম : ভাংচুর-অগি্নসংযোগ করা মন্দির সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছে আচার্য্য বিবেকানন্দ গোস্বামী আন্তর্জাতিক সেবাশ্রম। দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতীকী অনশনে এ দাবি জানায় তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আচার্য্য বিবেকানন্দ গোস্বামী আন্তর্জাতিক সেবাশ্রমের প্রধান মেজর (অব.) শ্যামলেন্দু, নিলয় রতন হাওলাদার, সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার, নিত্যরঞ্জন রায়, অধ্যাপক হীরেন বিশ্বাস প্রমুখ। সচেতন হিন্দু পরিষদ :বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রভাষ চন্দ্র তন্ত্রী, মুখপাত্র আর কে মজুমদার প্রমুখ। এ ছাড়া সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর।

No comments

Powered by Blogger.