পুলিশের সামর্থ্য বাড়াতেই হবে

(সহিংসতা মোকাবেলা) সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশের 'হিমশিম' খাওয়ার বিষয়ে যে প্রতিবেদন শনিবারের সমকালে প্রকাশ হয়েছে, তার প্রমাণ বিরোধীদলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বারবারই পাওয়া গেছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বিক্ষিপ্ত ককটেল ও বোমাবাজি সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই থেকেছে। কিন্তু রাজধানীর বাইরে প্রায়ই উগ্রপন্থি রাজনৈতিক কর্মী বা দুর্বৃত্তের হামলা ও নাশকতার মুখে পিছিয়ে আসতে হয়েছে পুলিশকে। রাজশাহী ও সাতক্ষীরার মতো জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত কোনো কোনো এলাকায় পুলিশের সদস্যরা যে হারে হতাহত হয়েছেন, তা অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অভাবনীয়। সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, মফস্বল এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল, পরিবহন ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা সমকালের কাছে শহরের তুুলনায় মফস্বল এলাকায় সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতার যে কথা জানিয়েছেন, তাও বাস্তব। আমরা দেখেছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে 'আন্দোলনকারী' বা নাশকতাকারীরা মারমুখী হয়ে থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে। বিশেষত বগুড়ার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া থানা ও ৬টি ফাঁড়িতে যেভাবে সংঘবদ্ধ হামলা হয়েছিল, তাতে পুলিশের অসহায়ত্ব প্রকট হয়েছে। একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে দুর্বৃত্তদের হামলায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিন সহস্রাধিক আহত হয়েছেন। হতাহতের এই সংখ্যা প্রমাণ করে, আইন-শৃঙ্খলা অবনতিকারীদের তুুলনায় আমাদের পুলিশের সামর্থ্যে গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। একই ধরনের অসহায়ত্ব আমরা দেখেছি, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলার ক্ষেত্রেও। যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি ও দোকানে ভাংচুর, অগি্নসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে নির্বাচনবিরোধীরা। খড়ের গাদা, পানের বরজও রক্ষা পায়নি। প্রায় সবখানেই এ ধরনের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। গত বছর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং মন্দির ভাংচুরেও পুলিশের সক্রিয়তা কাজে আসেনি। আমরা চাই, পুলিশের জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ অবিলম্বে গ্রহণ করা হোক। সমকালের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, মফস্বলে থানাপ্রতি ওসি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ৩২ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অনেককে মামলা তদন্ত, ভিআইপিদের নিরাপত্তা, মামলার সাক্ষ্য দিতে বা সাক্ষী নিয়ে আদালতে যেতে হয়। অসুস্থতা বা ছুটির বিষয়টিও রয়েছে। সব মিলিয়ে তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ৭-৮ জনের বেশি পুলিশ থাকে না। থানার ওপর হামলা হলেও একই সংখ্যার বেশি মেলে না। বস্তুত গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা এবং অপরাধের মাত্রা যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় পুলিশের জনবল বাড়েনি। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ সংখ্যা অন্তত তিন লাখ হওয়া উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। থানা ও ফাঁড়ির সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে পরিবহন, অস্ত্রশস্ত্র এবং গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়াতে হবে। দেখতে হবে পুলিশের সুযোগ-সুবিধাও। উন্নত জীবনযাত্রা ছাড়া পুলিশের কাছে উন্নত সেবা আশা করা অর্থহীন। আমরা দেখতে চাই, পুনর্নির্বাচিত সরকার এসব দিকে নজর দিয়েছে। স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হলে পুলিশের সামর্থ্য বাড়ানো কতটা প্রয়োজন, গত এক বছরেই তা প্রমাণিত। এই চিত্র সংবাদমাধ্যমেও বহুবার এসেছে যে, পুলিশ সদস্যরা কী লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে ছোটাছুটি করেন। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ নিয়ে যেভাবে সহিংসতা মোকাবেলা করা হয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। জনসাধারণের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা তাদের সামর্থ্যে ঘাটতি রেখে আর যা-ই হোক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.