মমতার পশ্চিমবঙ্গে আবার ‘দুঃস্বপ্ন’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতার এক ব্যবসায়ী একটি স্থাপনা নির্মাণকাজের অনুমতি চাইলে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) লোকজন তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। তিনি ওই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগের। ২০১১ সালের ওই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল বিজয় অর্জন করে।
এতে ওই রাজ্যে বামফ্রন্টের টানা ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের আস্থালাভে সমর্থ হয়েছিলেন ‘দিদি’। তাঁর জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ওই ব্যবসায়ী তখন সিপিএমের লোকজনকে বলেছিলেন, প্রয়োজনে তিনি নিজের ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন, কিন্তু চাঁদা দেবেন না। ওই ব্যবসায়ীর প্রত্যাশামতোই নির্বাচনে হেরেছিলেন বামফ্রন্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে মজার ব্যাপার হলো, কয়েক দিন পর সেই একই চাঁদাবাজের দল আবারও সেই নির্মাণ-ব্যবসায়ীর দরজায় কড়া নাড়ে। এবার তারা অবশ্য দল পাল্টে তৃণমূল কংগ্রেসের লোক হয়ে গেছে। মাধব নায়ার নামের একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী কলকাতায় কাজ করছেন আট বছর ধরে। তিনি ৫০ লাখ রুপি দামে সল্টলেক এলাকায় সম্প্রতি একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। নতুন বাড়িতে ওঠার তিন দিনের মাথায় একদল তরুণ নিজেদের তৃণমূলের লোক দাবি করে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে দলীয় তহবিলের জন্য ৫০ হাজার রুপি দাবি করে। মাধব জিজ্ঞেস করেন, কেন তাঁকে ওই অর্থ দিতে হবে? জবাবে তারা বাড়ির বাইরের রাস্তা দেখিয়ে বলেছিল, ‘ওই রাস্তাটি আপনাকে ব্যবহার করতে হবে, তাই না? তাই রাস্তার কর হিসেবেই আপনাকে চাঁদা দিতে হবে।’ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান চিত্র কী? সেখানে মানুষের কান কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়, চোখ উৎপাটন করা হয়, ধর্ষণের শিকার নারীরা যৌনকর্মী হিসেবে চিহ্নিত হয়, আর দলের প্রতি অনুগতদের স্বার্থ রক্ষায় সৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা এখন অন্ধকার ও আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের উপেক্ষা করেই তিনি ‘স্বৈরশাসন’ চালাচ্ছেন। চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ হচ্ছে, ব্যঙ্গচিত্র বন্ধ করে দিয়ে শিল্পীদের কারাবন্দী করা হচ্ছে।
কেউ ন্যায়বিচারের কথা বললেই তাঁকে ‘মাওবাদী’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে তুষ্ট করতে গান পর্যন্ত রচিত হচ্ছে। সুমন মুখোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র কাঙাল মালসাট আটকে দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কারণ, ছবিটিতে মমতার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন মহাশ্বেতা দেবী ও কবীর সুমনের মতো ব্যক্তিরা মমতার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। অথচ তাঁরাই একসময় সিপিএমকে উৎখাত করতে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। জনসাধারণের মধ্যেও এখন তৃণমূলবিরোধী মনোভাব ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। বিষয়টি সবখানেই নজরে পড়ছে। সরকারি নীতির পাশাপাশি তৃণমূলের লোকজনের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে মানুষ। মধ্যমগ্রামে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে খুন হওয়ার পর কলকাতার রাস্তায় নেমেছে জনতা। রাজ্যের নারী কমিশনের প্রধান সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলায় এখন একটি ‘সামাজিক বিপ্লব’ প্রয়োজন। কমিশনের সাবেক সদস্য ভারতী মুৎসুদ্দি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ধর্ষণকারীরা জানে, তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিলে পার পেয়ে যাবে। তৃণমূলে অনেক অপরাধী ঠাঁই নিয়েছে। এ অবস্থায় শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই। তাই আতঙ্কের মধ্যে বসবাসই এখন জনগণের নিয়তি। তবে কি তিন দশকের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভুল করেছিল? আর সেই ভুলের পরিণামেই এখন তারা দুঃস্বপ্নের মধ্যে বসবাস করছে? টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.