ইংলিশ লজ্জা!

মাইকেল ক্লার্ককে সিডনি টেস্টের টসে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন দু'জন অধিনায়ক ৫-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন? ক্লার্ক সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন_ ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং ও রিকি পন্টিং। এবার সেই ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ক্লার্ক লজ্জায় ডোবালেন ইংলিশদের। ব্যর্থতা নাকি সাফল্যের স্তম্ভ। কিন্তু এই সিরিজে ইংল্যান্ডের ধারাবাহিক ব্যর্থতা হয়েছে ব্যর্থতার স্তম্ভ। সবেধন নীলমণি ছিল পঞ্চম ও শেষ টেস্টটা। সেটাতে ইংল্যান্ড আরও বাজেভাবে হারল। তিন দিনেই শেষ সিডনি টেস্ট! ইংল্যান্ড হেরে গেল ২৮১ রানে। ভস্মাধার তো তৃতীয় টেস্টেই হাত থেকে ফসকে গেছে। এবার সম্ভ্রান্তের সম্মানটাও গেল! লজ্জার হোয়াইটওয়াশ হলো ইংল্যান্ড! অস্ট্রেলিয়ানরা সবক্ষেত্রেই ইংলিশদের চেয়ে এগিয়ে সিরিজে। ব্যাটিংয়ে তার প্রমাণ অস্ট্রেলিয়ার সেঞ্চুরি ১০টি, ইংল্যান্ডের মাত্র ১টি, বেন স্টোকসের! চতুর্থ টেস্ট বাদে প্রতিটি টেস্টেই অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাটিং করেছে, ব্যাপারটাকে প্রতীকীও ধরা যেতে পারে। সেই টেস্টগুলোতে ইংল্যান্ডকে অপেক্ষায় রাখতেন ক্লার্ক। ইনিংস ঘোষণার অপেক্ষা। বিশেষত দ্বিতীয় ইনিংসে। যখন দল নিরাপদ স্থানে পেঁৗছে যেত, তখনই আসত ইনিংস ঘোষণা। কিন্তু যে টেস্টটাতে ইংল্যান্ড প্রতিরোধ করতে না পারলে নিশ্চিত ধবলধোলাই হবে, সেই টেস্টে ক্লার্ক আর নিরাপদে পেঁৗছারই কোনো প্রয়োজন মনে করলেন না। সময় তো অফুরন্ত! তাই আর ইনিংস ঘোষণা দিলেন না। প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান করা স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশ বোলারদের কৃতিত্ব ও নিজেদের তাড়াহুড়ার কারণে করতে পারল ৪.৪৬ ওভাররেটে ২৭৬ রান। তারপরও টার্গেট ৪৪৮। এই সিরিজে ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে ওঠা ইংলিশ ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে অলআউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হলো আরও বাজেভাবে। রান হয়তো প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১১ বেশি হয়ে ১৬৬, কিন্তু সিরিজে ষষ্ঠবারের মতো ২০০ রানের নিচে অলআউট কুক বাহিনী! আর সিরিজটা তারা শেষ করল ৩১.৪ ওভারে অলআউট হয়ে!
সকালে সিরিজের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন ক্রিস রজার্স (১১৯)। সবাই ভালো বোলিং করলেও ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল স্টক বরউইক। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই ধস। তবে আবারও প্রথম ইনিংসের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে সফল হয়েছেন ৯ নম্বরে নামা স্টুয়ার্ট ব্রড (৪২)। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ ও সিরিজ প্রায় শেষ। আর শেষটা এত দ্রুত এনে দিয়েছেন রায়ান হ্যারিস ও মিচেল জনসন। হ্যারিস ২৫ রানে পঞ্চমবারের মতো নিয়েছেন ৫ উইকেট। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা। আর ইংলিশ-ত্রাস জনসন ৩ উইকেট নিয়ে সিরিজে শিকারসংখ্যা বাড়িয়ে করেছেন ৩৭। সিরিজটাকে চাইলে জনসন বনাম ইংল্যান্ডও বলা যায়! সিরিজসেরা জনসনেই তো সর্বাধিক ধরাশায়ী ইংলিশরা!
অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত এই অ্যাশেজটা আদতেই পরিণত হলো 'দ্য অসি অ্যাশেজে'। ২০০৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়া শুধু ভস্মাধার পুনরুদ্ধারই করেনি, একেবারে ভূপতিত করে ছেড়েছে ইংলিশদের। তার প্রমাণ হয়ে দেখা দিল এই টেস্ট। এই টেস্ট সিরিজ। পন্টিংয়ের ২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ জিততে লেগেছিল ২২ দিন। আর্মস্ট্রংয়ের ২৪ দিন। আর ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার সময় লাগল ২১ দিন। ইংল্যান্ড একেবারে ক্লিন বোল্ড! সেই ১৮৮২ সালের মতো ব্রিটিশ মিডিয়া না আবার লেখে বসে 'দ্য ইংলিশ ক্রিকেট ডাইড...'!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৩২৬ ও ২৭৬। রজার্স ১১৯; বরউইক ৩৩/৩
ইংল্যান্ড : ১৫৫ ও ১৬৬। কারবেরি ৩৩; হ্যারিস ২৫/৫, জনসন ৪০/৩
ফলাফল : অস্ট্রেলিয়া ২৮১ রান ও সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : রায়ান হ্যারিস। সিরিজসেরা : মিচেল জনসন।

No comments

Powered by Blogger.