ভোটের দিনে বর্জনের ঘোষণা ৩১ প্রার্থীর

ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্টদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের একজনসহ মোট ৩১ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণকালে বিভিন্ন সময়ে তারা নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোট গ্রহণের দিন এভাবে বর্জনের কোনো সুযোগ নেই। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পর ভোটে না থাকার কোনো সুযোগ নেই। আইনগতভাবে তারা প্রার্থী। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। বর্জন করা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন স্বতন্ত্র ১৯ জন, আওয়ামী লীগের ১ জন, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৪ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ৪ জন এবং জাসদের ৩ জন। ঢাকা অফিস, ব্যুরো অফিস ও জেলা প্রতিনিধিদের প্রতিবেদন :
ঢাকা :দুপুরে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন ঢাকা-১৫ (কাজীপাড়া, সেনপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলার একটি অংশ ও ইব্রাহীমপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা। সরকার সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েও তা করতে না পারা এবং সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন এখলাস।
এদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান শহীদ। তিনি জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কর্মীরা নির্বাচন প্রভাবিত করছে অভিযোগ করে এ বর্জনের ঘোষণা দেন শহীদ।
বরিশাল :জেলার তিনটি আসনের মধ্যে দুই আসনের দুই প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আখতার দুপুরে উজিরপুর
উপজেলা চত্বরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুসের সমর্থকদের বিরুদ্ধে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জাল ভোট প্রদান ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন। বিকেল ৩টায় একই অভিযোগ তুলে বাবুগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বরিশাল-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি।
গাইবান্ধা :স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভোট ছিনতাই ও সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন গাইবান্ধা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এদিকে ভোট কারচুপি ও আগেই সিল মেরে ভোট বাক্স ভর্তির অভিযোগ এনে গাইবান্ধা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাসদ নেতা এসএম খাদেমুল ইসলাম দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া :ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী ফরিদ আহমেদ সকাল ১০টার দিকে শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এর পরই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ভোট কারচুপির একটা সীমা আছে, এখন যেভাবে হচ্ছে, তা ভাবা যায় না।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের রেজোয়ান আহমেদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের কাজী মামুনুর রশিদ ভোট কারচুপি ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার একই ধরনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
মুন্সীগঞ্জ :মুন্সীগঞ্জের দুটি আসনে তিনজন প্রার্থী মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিকেল ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী নুর মোহাম্মদ এবং এর কিছুক্ষণ পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাসিরুজ্জামান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। দুপুর ১টার দিকে কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে জাসদের প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।
শেরপুর :শেরপুর-২ (নকলা ও নালিতাবাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে এজেন্টদের বের করে দিয়ে ৫০টি কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে দুপুরের দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তারই এক সময়ের সহযোগী স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদশা।
নারায়ণগঞ্জ :ভোট শুরু হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আলী। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকরা অর্ধশতাধিক কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর :ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ উদ্দিন। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহর সমর্থকরা ২৫টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। একই অভিযোগে অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সমর্থকদের নিয়ে রামগতি উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
সিরাজগঞ্জ :সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল মজিদ ম লের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান রতন। বেলকুচির সোহাগপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘোষণার সময় তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ এনেছেন তিনি।
বরগুনা :দুপুরে বরগুনা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন শিকদার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তার অভিযোগ, দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার সমর্থকরা পাথরঘাটা উপজেলার ৫১টি ও বামনা উপজেলার দুটি কেন্দ্র দখল করে তার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লালমনিরহাট :ভোট কারচুপি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা) আসনের জাসদের (ইনু) প্রার্থী সাদেকুল ইসলাম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
চট্টগ্রাম :দুপুর সোয়া ১টায় চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বিকেল ৩টায় জাল ভোটের অভিযোগে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদ হাসান নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দেন।
জামালপুর :আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে সিল মেরে ভোট নেওয়া ও এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন জামালপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজ আহমেদ হাসান, জামালপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান এবং জামালপুর-৫ আসনের জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী বাবর আলী খান। দুপুরের দিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এ বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
মানিকগঞ্জ :৬০ কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ৩০ মিনিট আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাসদের প্রার্থী আফজাল হোসেন খান জকি।
নোয়াখালী :দুপুরে ১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম।
ঝিনাইদহ :ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নায়েব আলী জোয়ার্দার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিকেল ৩টায়।
সিলেট :নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সিলেটের দুই আসনের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী। গতকাল দুপুরে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনের প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনের প্রার্থী ফারুক আহমদ।
খুলনা :বিকেল ৩টার দিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন খুলনা-২ আসনের জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী রাশিদা করিম ও খুলনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান খান খোকন।

No comments

Powered by Blogger.