উৎসবের চেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল বেশি

দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে রোববার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আবার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কুমিল্লার ৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। দাউদকান্দিতে একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। কোথাও ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চিত্র। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল সব জায়গাতেই তুলনামূলক কম। নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : নওগাঁ : নওগাঁর ৬ আসনের মধ্যে ৩টি নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী), নওগাঁ-৪ (মান্দা) ও নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন।
সকালের দিকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানান, এবার জেলার ৩টি আসনে মোট ভোটারের আনুমানিক ২৫ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
নাটোর :নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে সকাল ৮টা থেকে ১১৮ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে শুরুতেই ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা উন্নতি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা বেগম জানান, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে।
কুমিল্লা :কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৭টিতে রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাকি ৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়লাভ করে। কুমিল্লার ৭টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটকেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায়ও অনেক ভোটার কেন্দ্রে যাননি বলে জানান। দিনব্যাপী বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। জেলায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়।
কুমিল্লা-৬ সদর আসনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে হলেও মনোহরগঞ্জের ৪টি ও মুরাদনগরের ২টিসহ ৬টি ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ব্যালট পেপার ছিনতাই ও অগি্ন সংযোগের ঘটনায় এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি-মেঘনা আসনের একটি ভোটকেন্দ্রে ও ব্যালেট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে শুরু করেন। প্রচণ্ড শীতের কারণে সকালে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারসংখ্যা বাড়তে থাকে।
গোপালগঞ্জের ৩টি আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ৩ হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা, গোপালগঞ্জ ২ আসনে (গোপালগঞ্জ সদর-কাশিয়ানীর একাংশ) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল ( অব.) ফারুক খান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এ কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়েছে বলে নেতারা মনে করেন।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) :পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনে ৭৭টি ভোটকেন্দ্রে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. মতিয়ার রহমানকে ভোটবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর অবস্থায় সকালেই তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে সকাল ১১টায় পৌর শহরের কেএম লতিফ ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেন এমপি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আলমগীর হোসেন ও পুলিং অফিসার জয়নাল আবেদীনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. রুস্তম আলী ফরাজীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সেলিম মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তাদের ফিরিয়ে এনে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু করেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ফরাজীর সমর্থক মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।
চাটমোহর (পাবনা) :পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনের ১৬০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৮৪ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা থাকলেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। নির্বাচনে কোনো উত্তাপ ছিল না। কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি ভোটারদের মাঝে। পাবনা-৩ আসনে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একমাত্র নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ মো. মকবুল হোসেন ছাড়া আর কারও পোলিং এজেন্ট ছিল না।
বাগেরহাট :সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাট-৪ আসনে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কোনোরকম উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এদিকে মোরেলগঞ্জের হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের ৮০ নম্বর বি পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অদূরে ভোট গ্রহণ চলাকালে সকাল সাড়ে ১০টায় দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্টেম্ফারণ ঘটায়। তবে এতে কোনোরকম ক্ষতি হয়নি।
ফরিদপুর :ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনে ঘন কুয়াশার কারণে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে আসা শুরু করে। এর মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার দুটি সংসদীয় আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রই ভোটারশূন্য। প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্টরা অলস সময় পার করেছেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয় ।
জেলা নির্বাচন অফিসের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ২৩ দশমিক ৫ এবং চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ভোটের আগের দুই দিনের চেয়ে কম ছিল।
আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : শনিবার রাতে কয়েকটি কেন্দ্রের আশপাশে ককটেল বিস্টেম্ফারণ ও একটি কেন্দ্রে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হলেও রোববার সকাল থেকে ভোটগ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনের আশুগঞ্জ উপজেলার ৪৮টি কেন্দ্রে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভোটারদের মাঝে ভয় আতঙ্ক থাকায় উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম। এ ছাড়া পটুয়াখালীর গলাচিপা, নড়াইল, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, গফরগাঁও, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নরসিংদীতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.