গাজীপুর সিটি নির্বাচন: আওয়ামী লীগ বলছে, হেফাজতের একটি অংশ তাদের সঙ্গেও আছে বিএনপির পাশে হেফাজত by শরিফুল হাসান ও মাসুদ রানা

চার সিটি করপোরেশনের চেয়ে গাজীপুরে অনেক বেশি সক্রিয় হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তাঁরা বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। তবে আওয়ামী লীগ দাবি করছে, হেফাজতের একটি অংশ তাদের সঙ্গেও আছে।
গাজীপুরের হেফাজতের নেতারা বলছেন, এই সিটি করপোরেশনে তাঁদের অন্তত দেড় লাখ ভোটার রয়েছেন। জয়-পরাজয়ে এই ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তবে দুই প্রধান দলের নেতারা বলছেন, এত ভোটার হেফাজতের নেই।
রাজনৈতিক দল না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভোটের রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে এসেছে হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই সংগঠনের ‘ভোটব্যাংক’ রয়েছে বলে দুই দলই কাছে টানতে চাইছে তাদের।
সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন, গাজীপুরে ধর্মভিত্তিক দল বা হেফাজতের যে এত কর্মী আছে, সেটা তাঁদের আগে জানা ছিল না। তবে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতের মহাসমাবেশের আগে টঙ্গীতেও তারা বিশাল একটি সমাবেশ করে। এরপর গত ৫ মে মতিঝিলে মহসমাবেশের দিন গাজীপুরের কোনাবাড়ি, টঙ্গী ও সদর থেকে হেফাজতের অসংখ্য নেতা-কর্মী চান্দনা চৌরাস্তায় জড়ো হন। সেখান থেকে তাঁরা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এই দুই ঘটনার পরেই গাজীপুরে হেফাজতের অবস্থানের কথা জানতে পারে নগরবাসী। এমনকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গাজীপুর জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান নিজেও মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
গতকাল গাজীপুর সদরের পোড়াবাড়ি এলাকায় এম এ মান্নানের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায় হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে। তাঁরা জানান, বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন তাঁরা।
হেফাজতের গাজীপুর জেলার যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মান্নান, জেলা কমিটির সদস্য শাহ আলম, বাসন ইউনিয়নের সভাপতি নিজামউদ্দিন, কাউলতিয়া ইউনিয়নের সহ-প্রচার সম্পাদক জহিরুল আমিন এই দলে ছিলেন। হেফাজতের পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে তাঁরা জড়িত।
ফয়েজুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে তাঁদের ৫৭টি দল আছে। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁরা প্রচারকাজে অংশ নিচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাজীপুরে আমাদের এক থেকে দেড় লাখ ভোট রয়েছে। আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর নেতা-কর্মীরা এম এ মান্নানের পক্ষে কাজ করছেন।’ তবে কারও নির্দেশে নয়, নিজেরাই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন বলে তিনি জানান।
হেফাজতকে টানছে আওয়ামী লীগও: ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানও প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, হেফাজতের অনেক কর্মী তাঁর সঙ্গে আছেন।
আজমত উল্লার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজীপুর জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে টঙ্গীর বোর্ডবাজার ও বড়বাড়ি এলাকায় আজমত উল্লা খানের সঙ্গে প্রচারণায় হেফাজতের জেলার সহসভাপতি কেরামত আলী, গাজীপুর বোর্ডবাজার জামে মসজিদের খতিব আজিজুর রহমান, হেফাজতের জেলা শাখার উপদেষ্টা আইনউদ্দিনসহ বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট, ওলামা-মাশায়েখ ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ ওলামা লীগের নেতারা তাঁদের সঙ্গে প্রচারণায় ছিলেন।
তবে হেফাজতের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজুল্লাহর মতে, যাঁরা হেফাজত দাবি করে আজমত উল্লা খানের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন, তাঁরা আসলে হেফাজতের কেউ নন। হেফাজতের জেলা শাখার সহসভাপতি কেরামত মাওলা তাহলে কেন আজমত উল্লার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়েজুল্লাহ বলেন, তিনি আজমত উল্লার পারিবারিক মসজিদের ইমাম। সে কারণেই প্রচারণায় সঙ্গে থাকতে পারেন।
তবে আজমত উল্লার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, হেফাজতের অনেক নেতা-কর্মী তাঁদের পক্ষে কাজ করছেন।

No comments

Powered by Blogger.