পত্রমিতা

স্বজন যেহেতু তাকে পান্না বলেই শনাক্ত করতে চায়, আপনারাও তা-ই করুন, তাকে পান্না নামেই মনে রাখুন। এ যে এক পত্রমিতার কথা—সময় সময়কে ঝাঁঝরা করতে করতে এরই ভেতর সময় যে বয়ে যায়। ঘটনা ঘটনাকে টানলেও এখানে অনেক ঘটনা আছে। স্মৃতি দিয়ে স্মৃতি মেপে কি আর সময় বের করা যায় না? তাই তো স্মৃতির চিহ্ন দিয়েই তার নাম পান্না বলে সে কনফার্ম করে। তার দেশের বাড়ি গফরগাঁওই তো? তা-ই হতে পারে, অথবা নাও হতে পারে, কিংবা হতে পারে তা সেতাবগঞ্জ/ কুলাউড়া/ ভৈরব/ পাহাড়তলী। কিন্তু নামটি তার পান্নাই থাক। এ এক জীবন্ত স্মৃতি—এটা মনে করার কারণও আছে। কারণ, এ নাম স্মৃতি দিয়ে এভাবে গড়া যে তা আর সরানো যায় না, গহিন-গভীর নিঃশ্বাসের মতো নামটি স্বজনের কাছে জলজ্যান্ত এক সত্তা যেন। সময় যায়, কিন্তু নামের বয়স বাড়ে না! এ-ও একধরনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো এক বিষয় যেন। তা নাহয় হলো, আজ তবে আরেকটু হলেই তো চিঠিসমেত নোভার মার হাতে স্বজন ধরাই পড়ে যেত। ঘটনার বৃত্তান্তে প্রকাশ, তখন সে আসলে এসএসসির মূল সনদপত্র ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়ে তিন-চারটা চিঠি পেয়ে যায়। হায়, কত যে পুরোনো সেই পত্রগুলো, যা মুমূর্ষু হতে হতে ঝরে পড়ার দশা। আসলে তখন সে পান্না-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ই বউয়ের নজরে আনতে চায়নি। যাকে কোনো দিন সরেজমিনে দেখেইনি, সেই মানুষটাকে এভাবে কথনে আনার কী মানে হয়! কিন্তু তাকে আজ পুরোনো ঘায়ের মতো, রক্তচিহ্নের মতো, নতুন বাড়ি যাওয়ার রাস্তার মতো আবারও মনে পড়ে যায়। এটুকু তার মনে হচ্ছে, এই মানুষ তার স্মৃতি থেকে কোনো দিন মুছে যাবে না। ‘সেই তুমিই লিখো, যে আমার সোহনপুরকে চিহ্নিত করতে চায়।’ এই কথা কটি লিখেই পত্রমিতার সন্ধানে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চিঠি পাঠায় স্বজন। এখনো তার মনে পড়ে, এটা শুধু চিঠি ছিল না, ছিল একটা হাহাকারের লেখচিত্র!
এভাবেই সে আসলে সোহনপুরকে চিহ্নিত করতে চাচ্ছিল। তার হূদয় তখন এত রোদনমুখর ছিল যে এ ছাড়া তার আর কোনো পথও ছিল না। খসখসে হলুদে মাখামাখি একটা অতি নিম্নবর্গীয় কাগজে এমনই এক আরজি জানিয়ে তখনই পত্রমিতালির জন্য সে পাঠায়। সপ্তাহ খানেকও অপেক্ষা করতে হয়নি, প্রতিদিন দু-তিনটি চিঠি তার বরাবর আসা শুরু হয়, যেন ছাত্রদের ছোট্ট হোস্টেলটিতে হাস্যকোলাহলের একটা হাট বসে যায়। এত দিন পর আজ এমন কোমল দীর্ঘশ্বাসে ভরা তিন-চারটা চিঠি তার সামনে দেখা দেবে তা সে ভাবেনি। বহুদিন পর স্বজন তাকে স্মরণ করে। যখন সে, তার একদম জন্মস্বপ্ন অর্থাৎ সোহনপুরহীন হয়ে যায়, তখনই এ নারী ম্লান-জ্যোৎস্নায় ভিজে ভিজে, রোদে নেয়ে-ঘেমে তার চাক্ষুষে আসে। হঠাৎই তাকে আজ এত দিন পর এত করে মনে পড়ার কী কারণ! তাহলে কি স্বজনের সঙ্গেই কার্যত পান্নার জীবন কোনো না কোনোভাবে বাঁধা আছে! এত দিন তাহলে পান্না নামের পত্রমিতা কোথায় হারিয়ে ছিল? আসলেই কি সে নিজেকে কোথাও রেখেছিল? না না, তা নয়, বরং খোয়াবের ধান্দায় পড়ে আবার যেন সে আসে। এই এক চরিত্র, যা তার অন্তরে ঘন-দীর্ঘশ্বাসের মতো জ্যান্ত আছে! প্রায় ৩০ বছর আগের কথা, সত্যিই ৩০ বছর হয়ে গেল? মা চিঠিতে তখন জানিয়েছে, ‘তুইও পুলিশের হাত থেকে দূরে দূরেই থাক, এই সময়ে সোহনপুর আসার কোনো দরকারই নাই।’ এমনই একটা সংবাদের ভেতর পতিত হয়ে তার বাস্তবতা আরও কঠিন চাপের মুখে পড়ে। বরং বলা যায়, তার জীবন একেবারে গোধূলির ধূসরতা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে যেতে থাকে। তার বড় ভাইটার প্রতি তার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়, ভাইজানের সেই এক কথা, ‘বন্দুকের নলই রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।’
তখন ক্ষমতার মসনদ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ধনী-গরিব যুদ্ধ হয়, দিবানিশি জোতদার-মহাজনের রক্তে হাত রাঙানোর নেশায় তারা মত্ত হয় তখন। আর মেডিকেলের কঠিন পড়াশোনার চাপের ভেতর সোহনপুরহীন থাকার এ বার্তায় স্বজনের অস্তিত্ব এক কঠিন সংকটে পড়ে। অ্যানাটমির কঠিন-জটিল আইটেম-পরীক্ষা আর ফিজিওলজির পড়াশোনার চাপে তার সময় একেবারে বোবা পাহাড়ের স্তব্ধতার মতো স্থির হয়ে যায়। ‘এ’ ব্যাচের মুজিব রাহমানের সদাচঞ্চল বুদ্ধির মায়ায় পড়ে সে একদা একদিন মেডিকেল কলেজস্থ অগ্রণী ব্যাংকের পাশের পোস্ট অফিস থেকে বিচিত্রায় একটা চিঠি পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়—তার হবি হিসেবে সোহনপুরের স্বপ্নময়তার কথাই সে লেখে। তখন চিঠি যে কী হারে আসা শুরু করল, সেটাই এই ছোট্ট হোস্টেলের একটা ঘটনা! চিঠি আসা, তা পাঠ করা, হইহই-রইরই করা; আর তা নিয়ে চৌদ্দজাতের গবেষণা চলে। দুপুরের খাবারের পর প্রায় সবাই লম্বা ঘুম দেয় সেখানে। কেউ কেউ পরদিন অ্যানাটমির আইটেম বা ফিজিওলজির কোনো প্র্যাকটিক্যাল থাকলে তা নিয়েই সময় পার করে। কিন্তু স্বজন এখন অন্য জগতের মানুষ। চিঠি নিয়ে নানা ধরনের বেজায় টেনশনের ভেতর তার সময় পার হয়। সারাটা দুপুর, বিকেল, রাত সে থাকে এগুলো নিয়ে; বিকেলের দিকে কাশেম, ফারুক আর মুজিবকে নিয়ে পাহাড়ের দিকে খানেক ঘুরতে চলে যায়। সন্ধ্যার এই সময়টা হাতে আছে বলেই সে কিছুটা রিলিফ পায়। কিন্তু সেখানেও পত্রমিতাদের নিয়ে নানান কথার ভিড় জমে। মুজিব কথা বলে সবচেয়ে বেশি। একটা বিষয় স্বজন বুঝতে পারে না, এক হিসেবে তার পরামর্শেই সে পত্রমিতালী শুরু করে, আর এখন সে-ই তা নিয়ে হাসাহাসি করে বেশি। স্বজন খেয়াল করেছে, দুনিয়াতে এক পদের মানুষ থাকে, যাদের কাজই হলো অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা। সে সেদিন বলা শুরু করে, ‘দোস্ত, তারা বেবাকেই যে মাইয়া মানুষ তা তুই কেমনে বুঝলি,
তোর হাতে কোনো প্রমাণ আছে হা হা হা।’ স্বজন যতই বলে দুনিয়ার সবাই তো এক রকম হয় না। ‘তোর মতো কিসিঞ্জারি কি সবাই করে?’ তা শুনেও মুজিব হাসে। কাশেম ভরসা দেয়, ‘আরে বাদ দে, দোস্ত তোর লিস্টে কোনো চেয়ারম্যানের মাইয়া নাই।’ বুদ্ধিজীবীর গাম্ভীর্যে নিজেকে লালন করা ফারুকও হাসে, সম্মিলিত হাসির তোড়ে মুজিবের কথার ফ্লো আরও বাড়ে, ‘বুঝলি না, এইডা একটা ভাবের বিষয় তো! তুই কী মনে করছিস, মেয়েরা তোর সোহনপুরের জন্য কান্নাকাটি করছে? পাগল কারে কয়; আগে দেখ কজন নুনুওয়ালা হি হি হি, কজন মেয়ের গার্জেন। কজন বউ বউ খেলার প্লেয়ার!’ রঞ্জিতদা চিঠি আসার প্রথম দিন থেকেই বলা শুরু করেছে, ‘আরে তোমরা পোলাপান মানুষ, এসব কী বুঝবে, মেডিকেল হোস্টেলের ঠিকানাই তোমার কপালে অত চিঠি আসার কারণ।‘ কী জানি কী, তা স্বজন বুঝতে পারে না। একটা ঘোরের ভেতর তার সময় পার হয়, কারও চিঠিতে খুব কাব্যিকতা থাকে, এর প্রায় সবই বাংলা নোটবই থেকেই মেরে দেয় মনে হয়। সোনালী কাবিন, সাঁঝের মায়া, আর আমার পূর্ববাংলা কবিতা থেকেও উদ্ধৃতি দেখা যায়। সোহেলির চিঠিতে তার ভাষার চেয়ে কারুকাজ ছিল অনেক। মনামির চিঠিতে যত না কথা থাকত, তার বাপ-মা, ভাইবোন আত্মীয়স্বজনের ছবি থাকত বেশি। আরেকজন ছিল জুঁই, তার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটির শেষ থাকত না; সেকেন্ড ইয়ারে উঠেই তুমুল জ্বরে ভুগে ভাইটা নাকি তার মারাই যায়! তা নিয়েও মুজিব মশকরা করে, কয়, ‘আরে কিসের ভাই মরছে, সব ভংচং।’ তার বাদে ছিল এক লিপস্টিক-কন্যা রক্তবর্ণের টসটসা চুম্বনের চিহ্ন দিয়ে চিঠির মাথা থেকে পদযুগল পর্যন্ত কম্পিত করে রাখত! তবে এখানে যে আলাদা সে হচ্ছে পান্না। একটা চিঠি স্বজন যখন পাঠাত,
একেবারে গুনে গুনে আটটা দিন পর তার উত্তর আসতই। সেখানকার জলের গন্ধ, নদীর শব্দ, মাটির মাখো মাখো পরশ তাকে উন্মনা করে রাখত। এর উত্তর পাঠাতে দু-চারটা দিন দেরি করলে এর উত্তরে কোত্থেকে যে এত কান্নার ধারা বইত! পান্না তাকে যেন নদীর কিনারে, গাছগাছালির ভিড়ে নিয়ে যেত; মেঘ-রোদের জীবনকে সবার ভেতর বিলিয়ে দিতে পারত। ভালোবাসাই জীবন, সেই ভালোবাসামুখর জীবনের পরশ নিয়ে মানবলীলায় না পৌঁছালে কি আর চলে! সে জানায়, ‘তুমি মনে করবা, তোমার সোহনপুর সব মানুষের হূদয়ে গেঁথে যাওয়ার বিষয়, এবং তা যাবেই। ভালোবাসার যৌথ বুনন বিনে যে জীবন চলে না গো।’ যেন এমন এক জগতের ইশারা সে দেয়, যা ছাড়া এ জীবন, জীবনের এই যৌথতা, পূর্ণ হওয়ার নয়। কথায় কথা চলে। পান্না তো এসব জানায় না, যেন নিজের জীবনকে একেবারে প্রকাশ্য রূপে হাজির করায়। পরস্পরের জীবন পরস্পরের মাধ্যমে ক্রমাগত যেন দ্রবীভূত হয়। তবে তারা জীবনের চরম বাস্তবতা জীবন থেকে বাদ দিতে পারে না। কারণ, এখানে আরও একটা চরিত্র তাদের সম্পর্কের একেবারে গোড়ায় শ্বাস ফেলে ফেলে তাদের রক্তাক্ত করে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সেখানে যেন থাকে। পান্নার সৎ-মায়ের কর্মধারা চিঠির মাধ্যমেই বোঝা যেতে থাকে। একবার সে লিখল, ‘আচ্ছা, একবারও কি তোমার আসার সময় হবে না; মেডিকেলে কি আর কেউ পড়ে না! ঠিক আছে, আমাকে দাফন করতেই এসো। এভাবে মানুষ বাঁচে না, বুঝছ। একদিন খবর পাবে যে তোমার চিঠিগুলো শরীরে জড়িয়ে তাতে আগুন দিয়ে নিজেকেই শেষ করে দিয়েছি। আমার কপালে তা-ই আছে, দেখবা!’
বহুদিন পর এমন একটা চিরকুট দেখে স্বজন একেবারে কেঁপে ওঠে। এমনই অনেক চিঠি পান্না তাকে দিয়েছিল। সে এভাবে চিঠি লিখত, যেন তার পাশে বসে, তার নিঃশ্বাস দিয়ে তবে লিখছে। কিন্তু সেই চিঠি লেখালেখি হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়। কেন, তা যে কেন, তা আর জানা হলো না! সে এমন একটা পাগলামি কেন করছিল, হায়, তা যদি জানা যেত! সে কি আসলেই দুনিয়ায় নেই, নাকি তার বিয়ে হয়ে গেল, নাকি কোনো ছেলেই তার সঙ্গে এমন ফাজলামি করল? তা কী করে সম্ভব? তা-ও সম্ভব! এখনো যেন পান্নার শরীরের ঘ্রাণ, নদীর মায়াবী পরশ তার কাছে আসছে। তাকে সর্বস্ব সহযোগে চেনা যে গেল না! কেন যে তা হলোও না। এই নামটি আপন খেয়ালেই তার জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। পান্নার লেখা শেষ চিঠিটির বাম কোনায় পুনশ্চ দিয়ে লেখা ছিল: ‘এ চিঠির ভেজা ভেজা অংশ দেখছ, এ আমার কান্নার পরশ। তুমি এসো, আল্লার দোহাই, আমায় এসে দেখে যাও। সৎ-মায়ের জ্বালায়, বাপ আমার পাত্র দেখছে, আইএ-ও পাস করতে দেবে না। প্লিজ, একবার এসো, তোমায় আমি একবার দেখি।’ তারও পর অন্তত পাঁচটা চিঠিতে তার বাড়িতে যাওয়ার পথ বাতলে দেয়। ওগো অক্ষরা, ওগো সহজ বর্ণের মেয়ে, হায় মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া রমণী, কোথায় যে তুমি! অফিশিয়াল কারুকাজের কমা, কোলন, সেমিকোলন, দাঁড়ি ভেঙে স্বজন একসময় স্টেশন ম্যানেজারের দরজার পৌঁছায়। নাসিরাবাদ নামের ট্রেনটি যথাসময়ে ছাড়বে কি না, খবর নেওয়ার মাঝখান থেকেই তিনি স্বজনের দিকে তাকান এবং দৃষ্টি তিনি আর ফেরান না। তিনিই বারবার জিজ্ঞেস করছেন, ‘ভাই সাহেব, কোন ট্রেনের খবর নিচ্ছেন, নাসিরাবাদের?’ স্বজন কথাটিকে ইশারায় সমর্থনের পর স্টেশন ম্যানেজার আবার জানতে চান, ‘ওই ট্রেনে আপনি যাবেন কোথায়?’
তখনই স্বজন তার পকেটে রাখা প্রায় ৩০ বছর আগের একটা কাগজ বের করে, কাগজটি এত নরম যে মনে হয় এখন তার গা থেকে কবরের মাটির মতো ঝুরঝুর মাটি ঝরে পড়বে। ও তার বর্ণনায় মন দেয়, সোহনপুর স্টেশনে যদি ট্রেন রাত ১২টার দিকে পৌঁছায়, তবে সেখান থেকে ট্রেন ছাড়ারও ঘণ্টা চারেক পর তার সেই বাউলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে। সেই স্টেশন থেকে গ্রাম্যপথে আধা ঘণ্টার মতো সোজা পূর্ব দিকে যাওয়ার পর পড়বে শমরাকান্দা, সেখানে চেয়ারম্যান বাড়ির ১০ বাড়ি পরের বিশাল বটগাছওয়ালা বাড়িটাই তাদের। সেখানেই তার যাওয়া লাগবে! আচ্ছা, সেই গাড়িতে খাবার গাড়িটা আছে তো? ফার্স্ট ক্লাস লাগবে না। আমি খাবার গাড়িতেই যাব। স্বজনের চোখে আবারও ভাসে সেই মনারচর স্টেশন, সকালের মেইল ট্রেন, ছাত্রদের জন্য দেওয়া কনসেশন রেটের টিকিট, খাবার গাড়ির চকচকা বসার টেবিল, সামনের একটা হাতাওয়ালা টেবিলে খাবার রেখে খাওয়ার সেই স্পেস কী যে আনন্দময় ছিল। হঠাৎই তার চোখের কোনায় ভেজা ভেজা লাগে। রুমাল বের করে সে নিজের ভেজা চোখ সামলায়! সামনের সবকিছু কেমন কুয়াশাময় লাগছে। হঠাৎই প্ল্যাটফর্ম-স্টেশনমাস্টারের কথার দিকে তার নজর দিতে হয়; সে বলছে, ‘না স্যার, কিসের খাবার গাড়ি, কিসের ফার্স্ট ক্লাস, এখন তো কিচ্ছু নাই। পুরো গাড়িটাই কবে উঠায়ে দেয় হা হা হা। ঠিক আছে স্যার, বুঝলাম, কিন্তু ইন্টারসিটি চালু হওয়ার পর ওই দিকে অত দূর থাইকা কেউ এই ট্রেনে যায় না। এই যে নেন রেলের ডিজিটাল ফোন, এইখান থাইকা অক্ষনই বাউলাপুর স্টেশনের মাস্টারের সাথে কথা কন, দেখেন, কয়টায় গাড়ি পৌঁছে, জাইনা নেন! বটতলার বাড়ির কথাও জিগান।’ একে একে স্বজনের জানা হয় যে সেই দিকের কোনো ট্রেনেরই কোনো মা-বাপ নেই। বটতলার সেই বাড়ি বলেও কিছু নেই।! পাথরের মতো দাঁড়িয়ে সে ভাবে, যেন তার চারপাশের সময়সহ সবই হারিয়ে যাচ্ছে, যেন পত্রগুলোর ভেতর থেকে অগ্নির তাপে সবই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.