মার্কিন ইতিহাসে নয়বার

দেশের শত্রুদের কাছে তথ্য ফাঁস করা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৭ সালে একটি আইন করা হয়। প্রচারমাধ্যমের কাছে সরকারি গোপন তথ্য প্রকাশ করার জন্য মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে ওই আইনটির প্রয়োগ ক্রমেই বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ পর্যন্ত নয়বার (সবগুলো ১৯৭১ সাল থেকে) কেন্দ্রীয় সরকার সংবাদপত্র, ব্লগ, বই বা অন্য কোনো প্রচারমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তি আইনে অভিযুক্ত করেছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলাই হয়েছে গত আট বছরে। গোপন তথ্য প্রকাশের দায়ে এডওয়ার্ড স্নোডেনও একই ঝুঁকির সম্মুখীন। আগের নয়টি ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো:

পেন্টাগন পেপার্স: ১৯৭১ সালে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড্যানিয়েল এলসবার্গ ও তাঁর সহকর্মী অ্যান্টরি রাসো নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্য কয়েকটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে গোপন সামরিক নথিপত্র ফাঁস করেন। ওই নথিপত্র পেন্টাগন পেপার্স নামে পরিচিতি পায়। ওই গোপন নথিতে ভিয়েতনামে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার মাত্রা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সরকার এলসবার্গের বিরুদ্ধে গোপনে (সম্ভবত অবৈধভাবে) আড়ি পেতেছিল এটি প্রমাণ হওয়ার পর বিচারক তথ্য ফাঁসের অভিযোগ খারিজ করে দেন।

সোভিয়েত আলোকচিত্র: মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক স্যামুয়েল মরিসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালে জেনস ডিফেন্স উইকলি সাময়িকীকে সোভিয়েত রণতরীর ছবি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও জুরি মরিসনকে দোষী সাব্যস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই প্রচারমাধ্যমকে গোপন তথ্য দেওয়ায় গুপ্তচরবৃত্তি আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। মরিসনের দুই বছর জেল হলেও প্যারোলে মুক্তি পান প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাঁকে ক্ষমা করেছিলেন।

ইরান নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য: ২০০৫ সালে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মী লরেন্স ফ্র্যাংকলিনকে দুই ইসরায়েল সমর্থক লবিস্টকে ইরান বিষয়ে গোপন তথ্য দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ফ্র্যাংকলিন দোষ স্বীকার করেন এবং তাঁর ১২ বছর কারাদণ্ড হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ওই মামলা টেকেনি। ফ্র্যাংকলিনের সাজা কমে ১০ মাস হয়।

এফবিআই অনুবাদক: এফবিআইয়ের অনুবাদক শামাই লাইবোইটজ্ কাজ করার সময় শুনেছিলেন এমন তথ্য একদিন ব্লগে দেখা যায়। ২০০৯ সালে দোষ স্বীকার করেন তিনি। বিচারে তাঁর ২০ মাস কারাদণ্ড হয়।

এনএসএর অপচয়: এনএসএর সাবেক কর্মকর্তা টমাস ড্রেকের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে অভিযোগ ওঠে তিনি সংস্থাটির আড়িপাতা কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে ড্রেক দাবি করেন, তিনি বাল্টিমোর সান পত্রিকার কাছে শুধু এনএসএর একটি কর্মসূচিতে অপচয়ের তথ্য প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের ১০টি অভিযোগ খারিজ করা হয়। কোনো কারাদণ্ড হয়নি।

উইকিলিকস : সাত লাখেরও বেশি গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে সামরিক আদালতে মার্কিন সেনাসদস্য ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের বিচার চলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গোপন দলিল ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। ম্যানিং গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০টি অপেক্ষাকৃত হালকা অভিযোগে অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করাসহ আরও ২১টি অভিযোগ রয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আগামী কয়েক মাস তাঁর বিচার চলার কথা।

উত্তর কোরিয়া গোয়েন্দা তথ্য: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষক স্টিফেন কিম ফক্স নিউজ চ্যানেলের এক প্রতিবেদকের কাছে কিছু তথ্য ফাঁস করেন। তথ্যগুলো ছিল নতুন মার্কিন অবরোধের জবাবে উত্তর কোরিয়া কী করতে পারে সে ব্যাপারে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন নিয়ে। গ্র্যান্ড জুরি ২০১০ সালে কিমকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য ফাঁস ও মিথ্যা ভাষণের দায়ে অভিযুক্ত করেন। কিম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বিচার শুরু হবে।

বইয়ের জন্য তথ্য: সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা জেফ্রি স্টার্লিংয়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমস -এর প্রতিবেদক জেমস রাইজেনকে অবৈধভাবে ইরান সম্পর্কে গোপন তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। রাইজেন তাঁর বই স্টেট অব ওয়ার এর জন্য ওই তথ্য নিয়েছিলেন। সরকার প্রতিবেদক রাইজেনকে তাঁর তথ্যের সূত্রের পরিচয় প্রকাশের জন্য চাপ দিয়েও সফল হয়নি। এ কারণে মামলাটি থমকে আছে।

জেরাবিষয়ক তথ্য: সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকুর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে সাংবাদিকদের কাছে সিআইএর জেরা কর্মসূচির বিষয়ে গোপন তথ্য প্রকাশের অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি একটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন এবং তাঁর আড়াই বছর কারাদণ্ড হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাজা ভোগ শুরু করেছেন কিরিয়াকু।
সূত্র: রয়টার্স
 ভাষান্তর: মিজান মল্লিক

No comments

Powered by Blogger.