চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন-ভোট কিনতে টাকার ছড়াছড়ি

চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সমানতালে চলছে টাকার ছড়াছড়ি। প্রায় প্রত্যেক মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর পক্ষেই ভোট কেনার জন্য বিলানো হচ্ছে টাকা। পাশাপাশি চলছে যেন নির্বাচনী ব্যয়সীমা অতিক্রম করার প্রতিযোগিতা।
একজন মেয়র পদপ্রার্থীর ১৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করার বিধান না থাকলেও খুলনায় প্রধান দুই প্রার্থীর একেকজনের এই ব্যয় দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। আরো জানা গেছে, রাজশাহীতে চলছে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার- মোবাইল ফোনে ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে ভোট কেনা। সিলেটে উড়ছে লন্ডনি টাকা। আর তা ঠেকাতে বিপক্ষের লোকজন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। বরিশালেও ভোট কেনাবেচা ঠেকাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লায় বসিয়েছেন পাহারা। কালের কণ্ঠের সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরো তথ্য।
রাজশাহীতে ফ্লেক্সিবেড়ে গেছে
মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় গতকাল বুধবার দুপুর ১টার ঘটনা। হঠাৎ খায়রুন নেসার বাড়ির লোকজনের হৈচৈয়ের শব্দে ঘর থেকে বের হয়ে আসে প্রতিবেশীরা। এ অবস্থায় দুজন আরোহীসহ একটি মোটারসাইকেল দ্রুতবেগে পালিয়ে যায়। খায়রুন নেসাও ওদের ধাওয়া করে বলতে থাকেন, 'ওদের ধর, ওদের ধর। ওরা টাকা রেখে পালাচ্ছে। ওরা টাকা নিয়ে ভোট কিনতে আসছিল।' কিন্তু এলাকাবাসী আর ওই দুজনকে ধরতে পারেনি।
সরেজমিনে গেলে খায়রুন নেসা (৪৫) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান টিটোর হয়ে ভোট কিনতে এসেছিলেন সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক আকতার হোসেন ও মোহাম্মদ আলী। তাঁরা এসে টাকার বিনিময়ে নুরুজ্জামানকে হাতি মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে খুব চাপাচাপি করছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁদের কথায় সাড়া দিচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে আকতার ৫০০ টাকার একটি নোট পকেট থেকে বের করে খায়রুন নেসার হাতে জোর করে গুঁজে দেন। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে হৈচৈ শুরু করেন। এরপর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তাঁরা দুজন পালিয়ে যান।
এলাকাবাসীর মধ্যে মজিবুর, সাইদুর রহমানসহ আরো অনেকে জানান, ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া নগরীর একটি অনুন্নত এলাকা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। এই সুযোগে বিভিন্ন প্রার্থীর লোকজন এখানে ভোট টানার চেষ্টা করছে।
ওই ঘটনার পর স্থানীয়রা এলাকায় বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানায়। তারা দ্রুত নুরুজ্জামান টিটোর প্রার্থিতা বাতিলসহ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চায়।
এ ব্যাপারে নুরুজ্জামান টিটো বলেন, 'ঘটনাটি আমার কানেও এসেছে। আমি এ নিয়ে হাসছি। কারণ আমার অবস্থান এলাকায় ভালো। কাজেই টাকা ছিটানোর প্রশ্নই আসে না। বিরোধী পক্ষ আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।'
১৪ দল সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, 'বিএনপি নেতারা জোট সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের মাধ্যমে আয় করা টাকা এখন নির্বাচনে ছড়াচ্ছেন। এ ছাড়া আছে জামায়াতের টাকা। তারাও ১৮ দলের প্রার্থী বুলবুলের পরাজয় নিশ্চিত জেনে অগাধ টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
আমরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি।'
১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক মেয়র লিটন কোটি কোটি টাকা কামাই করেছেন। ওই কালো টাকা দিয়ে তিনি এখন ভোট কিনে বেড়াচ্ছেন।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সাধারণত রাতের আঁধারে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নিম্ন আয়ের ভোটারদের কাছে টাকা বিলানো হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে মহিলাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন বোরকা পরে। তাঁরা বোরকার আড়ালে টাকা নিয়ে ছুটছেন মহিলা ভোটারদের কাছে।
সেই সঙ্গে চলছে মোবাইল ফোনে ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে টাকার ছড়াছড়ি। প্রতিদিনই তরুণ ভোটারদের মোবাইলে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা ফ্লেক্সিকরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় টাকা বিতরণ করতে গিয়ে ধরা পড়া এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নওদাপাড়া এলাকার তরুণ ভোটার যুবায়ের আহমেদ, মো. আসলাম ও গিয়াসউদ্দিন বলেন, 'প্রার্থীরা ভোটের জন্য টাকা সাধলে আমরা রাজি না হলেও অনেক সময় মোবাইলে ফ্লেক্সিকরে দেন।' কোন কোন প্রার্থী এটা করছেন জানতে চাইলে তাঁরা জানান, 'মেয়র-কাউন্সিলর সব প্রার্থীই।'
মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, 'টাকার ছড়াছড়ির অভিযোগ আমাদের কাছেও আসছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা পদক্ষেপ নিতে পারছি না।'
ওদিকে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রবিউল আলম মিলুকে পিটিয়েছে অপর কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়াউল হক টুকুর সমর্থকরা। টুকুর সমর্থক মামুন জানান, রবিউল আলম মিলু ওই এলাকায় বসে ভোটারদের মাঝে টাকা ছড়াচ্ছিলেন। খবর পেয়ে তাঁকে হাতে-নাতে ধরে পেটানো হয়েছে। এ সময় আরো অন্তত চার-পাঁচজনকে পেটানো হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে রবিউল আলম মিলুর ভাই শফিকুল আলম ভুলু বলেন, তাঁর ভাই কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় টুকুর সমর্থকরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ৮ জুন নওদাপাড়া এলাকায় টাকা বিলানোর সময় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী আন্দি য় কর্মকার নামের এক তরুণকে ধরে এলাকাবাসী পুলিশে দেয়।
নগরীর রেলগেট এলাকার ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী নুপু বলেন, 'নির্বাচনকে কেন্দ করে গত কয়েক দিন হঠাৎ করে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা বেড়ে গেছে। এতেই প্রমাণ হয় ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে।' উপশহর এলাকার এক ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এখন ফ্লেক্সিলোডের সঙ্গে টাকার পরিমাণও বেড়েছে।'
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের দুই লেনের রাস্তাটির দুই পাশে মেয়র প্রার্থী লিটনের তালা প্রতীকের শুধু ডিজিটাল পিভিসি ব্যানারই ৮৩টি। রয়েছে শত শত পোস্টার। একই জায়গার মধ্যে মেয়র প্রার্থী বুলবুলেরই রয়েছে ৮৫টি। নগরীর সীমান্তের মধ্যে ১০ কিলোমিটারে প্রতি প্রার্থীর পিভিসি ব্যানার রয়েছে প্রায় ছয় শতাধিক করে, যার খরচ কমপক্ষে সোয়া লাখ টাকা করে।
মেয়র প্রার্থী লিটন ও বুলবুলের ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থীর প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে কম করে হলেও ১৫ লাখ টাকা করে। সেই সঙ্গে আছে লাখ লাখ টাকার নির্বাচনী প্রচারণার উপকরণ।
খায়রুজ্জামান লিটনের এজেন্ট নওসের আলী বলেন, 'নির্বাচনী আচরণবিধির বাইরে কোনো প্রচারণা উপকরণ তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে ব্যয় বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত যা হচ্ছে সেখানকার কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ থেকেই সেগুলো করা হচ্ছে।'
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, 'আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করেই প্রচারণা উপকরণ বিলি করছি। তবে স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ থেকেও অনেক উপকরণ টানানো হয়েছে, যার কারণে সংখ্যাটা হয়তো বেড়েছে।'
রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ সরকার বলেন, 'নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ব্যয়সীমা অনেকেই মানছেন না। ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ নির্বাচনী ক্যাম্প ও প্রচারণা উপকরণের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছে। মেয়র ও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্কও করা হয়েছে।'
খুলনায় ব্যয়সীমা মানছেন না কেউ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয়সীমা মানছেন না। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী সম্মিলিত নাগরিক কমিটির তালুকদার আবদুল খালেক ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের মো. মনিরুজ্জামান মনি নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘন করছেন। গত কয়েক দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ও প্রচারণা বাবদ ব্যয় হিসাব করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন প্রার্থী বা তাঁদের প্রতিনিধিরা।
প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার ১৬ দিনের মধ্যে দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক ও মনিরুজ্জামান মনি প্রত্যেকের খরচ হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি। অথচ নির্বাচনে সর্বোচ্চ খরচের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। আর কাউন্সিলরদের খরচ নির্ধারিত সীমার (পাঁচ লাখ টাকা, ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার হলে) সাত-আট গুণে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর ১৭০টি ছাপাখানা ঘুরে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১৬ দিনে ১০ লাখ পোস্টার ও ২০ লাখ হ্যান্ডবিল-লিফলেট ছাপানো হয়েছে। এক লাখ পোস্টারের দাম ২০ লাখ টাকা আর ২০ লাখ লিফলেট-হ্যান্ডবিলের দাম ১৪ লাখ টাকা। মূল দুই মেয়র প্রার্থীর প্রত্যেকের ৩২০টির বেশি গণসংযোগস্থলে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা করে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে এক কোটি ৫৩ লাখ টাকারও বেশি।
'প্রার্থীদের কেউ ব্যয়সীমা মানছেন না'- এ প্রসঙ্গ তুললে সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গতকাল বলেন, 'আমাদের একটি মনিটরিং সেল রয়েছে। তবে পোস্টার, লিফলেট-হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে কোনো প্রার্থী ব্যয়সীমা লঙ্ঘন করছেন কি না, তা নির্বাচন শেষে খতিয়ে দেখব।'
প্রার্থীরা ব্যয়সীমা লঙ্ঘন করলেও তাঁদের প্রতিনিধিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তালুকদার খালেকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, 'বিধি মেনেই আমরা কাজ করছি। বর্ষার কারণে পোস্টার নষ্ট হচ্ছে। ফলে পোস্টার বেশি ছাপতে হচ্ছে। অন্যান্য খরচ কমিয়ে আমরা পোস্টার চাপছি।'
মনিরুজ্জামান মনির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, 'বৃষ্টির কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বারবার পোস্টার ছাপতে হচ্ছে। তবে নির্বাচনী ব্যয়সীমা যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।'
নির্বাচন কমিশনে হলফনামা দেওয়ার সময় প্রেসের নাম উল্লেখ করতে হয়েছে সব প্রার্থীকেই। উলি্লখিত প্রেস ছাড়া পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ছাপানোর সুযোগ নেই। তবে এ নিয়মের ধার ধারছেন না কোনো প্রার্থী। সহকারী রিটার্নিং অফিসার প্রতিভা বিশ্বাস জানান, মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক তাঁর হলফনামায় নগরীর গ্লোরি আর্ট প্রেস এবং মো. মনিরুজ্জামান মনি নগরীর মধুমতী প্রেসের ঠিকানা উল্লেখ করেছেন।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালুকদার খালেক গ্লোরি আর্ট প্রেস ছাড়াও নগরীর কেডিএ মার্কেটের খানজাহান আলী প্রেস ও খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ে পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ছাপাচ্ছেন। আর মনি মধুমতী প্রেস ছাড়াও বেলিবাবু রোডের আহমদীয়া প্রেস, গ্লোরি আর্ট প্রেস ও স্থানীয় একটি দৈনিকের ছাপাখানায় পোস্টার, হ্যান্ডবিল ও লিফলেট ছাপছেন।
এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং অফিসার প্রতিভা বিশ্বাস বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে প্রেসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই ছাপতে হবে। অন্য জায়গায় ছাপালে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। কেউ আবেদন করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা নগরের পাঁচটি থানার প্রতিটিতে একটি করে মোট পাঁচটি অফিস করতে পারবেন। তাঁরা পাঁচ থানায় পাঁচটি অফিস বানিয়েছেন ঠিকই, তবে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ১২টি গণসংযোগস্থল (পোস্ট) বানিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন এগুলোকে পয়েন্ট বলে। তালুকদার খালেকের প্রায় ৩২৫টি ও মনির প্রায় ২২০টি পয়েন্ট রয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতি পয়েন্টে প্রচারণা বাবদ প্রতিদিনের বরাদ্দ তিন হাজার টাকা। নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি মূল কমিটি করা হলেও ওয়ার্ডগুলোতে প্রচারণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর। তাঁরা বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব পয়েন্টে এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রত্যেকের দিনে গড়ে খরচ হচ্ছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। গত ১৬ দিনে এসব পয়েন্টে এককজনের খরচ হয়েছে এক কোটি টাকার ওপরে।
সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম কেসিসি নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান।
গতকাল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী কাজী শফিকুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসারের কাছে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমিনুল ইসলাম মুন্নার বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার লিখিত অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মূল দুই মেয়র প্রার্থীর একাধিক কর্মী জানান, নগদ টাকা ছড়ানো আজ রাতে (বুধবার) শুরু হবে। মূল টার্গেট কেসিসির ৭০০ বস্তি। ভোটারপ্রতি ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হবে। টাকা নগদে বা বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।
বাড়তি আয়ের আশায় অনেকেই নেমে পড়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। এর জন্য দরিদ্র ঘরের নারীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে মেয়র প্রার্থীর প্রচারণার জন্য ২০০ টাকা আর কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণার জন্য ৫০ টাকা দৈনিক ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। গত দুই দিন সোনাডাঙ্গার ইউসেপ বস্তি, খোড়ার বস্তি, ফরিদ মোল্লার মোড়ের বস্তি, রেলওয়ের বস্তিসহ একাধিক বস্তিতে গিয়ে নারীদের দেখা মেলেনি। এলাকাবাসী জানায়, নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছে তারা। সন্ধ্যার আগে ফিরবে না। প্রতিটি পয়েন্টে গড়ে ১০ জন নারী কাজ করছে।
সিলেটে উড়ছে লন্ডনি টাকা
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে 'লন্ডনি টাকা' উড়ছে। সীমা লঙ্ঘন করে প্রধান দুই মেয়র পদপ্রার্থী ব্যয় করছেন অঢেল অর্থ। কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। ২৭টি ওয়ার্ডের কমপক্ষে ৯০ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী প্রত্যেকেই দিনে ব্যয় করছেন লাখ টাকার কম নয়।
চেষ্টা শুরু হয়েছে ভোট কেনাও। ভোটবাণিজ্য ঠেকাতে বিভিন্ন পাড়ায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন প্রার্থীদের কর্মীবাহিনী। সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে অধিকাংশ প্রার্থীর লন্ডন প্রবাসী স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা সিলেটে এসেছেন। তাঁরা গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিচ্ছেন।
সিলেটে একেকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীই ব্যয় করছেন দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে সহকারী রিটার্নিং অফিসার রাশেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি ধরা টাফ। আট সদস্যের একটি দল এ জন্য কাজ করছে।'
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। কামরান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমেরিকার প্রবাসীরা আমার সমর্থনে আজ একটি সভা করেছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমার বোন-মামাসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও শতাধিক প্রবাসী ভোটারদের কাছে আমার জন্য ভোট চাইছেন। আমি ব্যয়সীমা লঙ্ঘন করছি না। টাকা দিয়ে আমার ভোট কেনার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ আমার পুঁজি মানুষের ভালোবাসা। তবে আরিফ যেভাবে টাকা ব্যয় করছেন তাতে আমরা কষ্ট পাচ্ছি।'
এদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর জন্যও লন্ডন প্রবাসীদের অনেকে এখন সিলেটে অবস্থান করছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল লতিফ মাসুক মিয়া, যুক্তরাজ্য যুবদলের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব, যুক্তরাজ্য বিএনপির সদস্য সাবু নেওয়াজ ও পূর্ব লন্ডনের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ গাজী আরিফের জন্য মাঠে নেমেছেন।
আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি অঢেল টাকা ব্যয় করছি তা সত্য নয়। আমার সঙ্গে লন্ডন থেকে আসা আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা মাঠে আছেন। ১৮ বছর ক্ষমতায় থাকা কামরান ভোট কিনছেন বলে আমরা শুনতে পেয়েছি। তাঁর জনপ্রিয়তা থাকলে তিনি কেন ব্যয়ের সীমা লঙ্ঘন করবেন?'
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতি কাউন্সিলর দিনে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ জন কর্মীর যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া ও পকেট খরচ দিচ্ছেন। নগরীতে এখন পোস্টার আর পোস্টার।
নির্বাচনে ভোটার দুই লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন, ৩০ ভাগই বস্তিবাসী। আর শতাধিক বস্তিকে টার্গেট করে শুরু হয়েছে গোপনে ভোট কেনার তৎপরতা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই কালের কণ্ঠের কাছে ভোট কেনা-বেচার অভিযোগ তুলেছেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সাতজন। এই ওয়ার্ডে আছে ১০টি বড় বস্তি। বস্তিগুলোয় ভোট আছে ৪০ ভাগ। তাই বস্তিগুলোয় টাকা বিতরণ হচ্ছে গোপনে। এখানে ফ্যান প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। নলকূপ প্রতীক নিয়ে মহিউল ইসলাম চৌধুরী মনসুর। অভিযোগ রয়েছে, উজ্জ্বল ও মনসুর এলাকার বস্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। একাধিক বস্তিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁদের বস্তি থেকে উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দিতে বলা হচ্ছে।
সিলেট থেকে লন্ডনে নিয়মিতই আসা-যাওয়া করেন মো. সালমান চৌধুরী (শাম্মী)। দুপুরে নগরীর আগপাড়া থেকে রায়নগরের দিকে যেতে দেখা এই কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বাতাসে টাকার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরও ফাঁকে ফাঁকে টাকা ঢুকছে। টাকা ঠেকাতে শতাধিক কর্মী বাহিনীকে মঙ্গলবার রাত থেকে সতর্ক রেখেছি।'
বরিশালে পাড়া-মহল্লায় পাহারা
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করেই বরিশালের রিটার্নিং অফিসারের কাছে খবর আসে, ওই অফিসের কাছাকাছি ভোটারদের মধ্যে বিলানোর জন্য বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে আসার সময় এক প্রার্থীর কয়েক লোককে ধরা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার পুলিশকে খবর দিয়ে ওই বস্তাসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনকে ধরে নিয়ে আসেন তাঁর কার্যালয়ে। বস্তা খুলে দেখা যায় ভেতরে টাকা নয়, আছে একজন প্রার্থীর কর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র।
জানা যায়, একজন প্রার্থী ভোট কেনার টাকা দেওয়ার জন্য ওইসব পরিচয়পত্র আনাচ্ছিলেন।
রিটার্নিং অফিসার মজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের বিভিন্ন মনিটরিং টিম কাজ করছে। কেউ কোনো এলাকায় টাকার বস্তা নিয়ে ঢুকে টাকা বিলাবে- এখন সেই দিন নেই। এমন কিছু হলে ধরা পড়বেই। তবে অলিগলিতে চোরাগোপ্তাভাবে গোপনে কেউ কাউকে টাকা দিলে সেটা ধরা মুশকিল।'
রাত সাড়ে ১২টা। শহরের কুমিল্লা হোটেলে হঠাৎ করেই এসে ঢুকলেন নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। সঙ্গে ৮-৯ জন কর্মী সমর্থক। প্রার্থী হোটেল বয়কে ডেকে বললেন 'ওরা কে কী খাবে খাওয়া।' কিছুক্ষণের মধ্যেই কারো জন্য এলো বিরিয়ানি, কেউ চাইলেন গরুর মাংস-ভাত, কেউবা ডাল খাসি-রুটি। খাওয়ার ফাঁকে কর্মীদের উদ্দেশে ওই প্রার্থী বললেন ' তোরা খাইয়া তারাতারি এলাকায় চইল্যা যা, আবার ঘুমাইস না কিন্তু! কেউ টাকা লইয়্যা ঢুকলেই ধইর‌্যা হালাবি, আমারে খবর দিবি।'
'টাকা লইয়্যা ঢুকবে- মানে কী' জানতে চাইলে ওই প্রার্থী বলেন, 'আরে ভাই কইয়েন না, আমার এলাকার বড় একটি অংশ হইল বস্তি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী আমার তুলনায় অনেক বেশি মালদার পাট্টি। গত সাড়ে চার বছরে বহুত কামাইছে। এহন ঘোপে-ঘাপে বস্তির মাইনসের মইধ্যে টাকা বিলান শুরু করছে। কিন্তু ধরতে পারতেছি না। এই জন্য পাহারা লাগাইছি।'
ওই প্রার্থীর আশঙ্কার সূত্র ধরে বরিশাল নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সিটি করপোরেশনের অতীতের সব নির্বাচনেই কালো টাকার প্রকাশ্যে দৌরাত্ম্য ছিল। এবার দুই মেয়র পদপ্রার্থী এবং বেশ কিছু প্রভাবশালী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর পক্ষ থেকে টাকা ছড়ানোর আশঙ্কা করছে অনেকেই। বিশেষ করে নগরের বিভিন্ন বস্তি আর বর্ধিত এলাকায় বসবাসকারী নিম্ন আয়ের মানুষকে টাকার বিনিময়ে নিজের পক্ষে টানার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানায় কেউ কেউ। এ আশঙ্কার ফলে পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসিয়েছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। কে কখন বস্তিতে ঢুকছে, কারা যাতায়াত করছে, তা নজরদারি করছে পাহারায় থাকা কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। তবে কোনো কোনো এলাকায় মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই টাকা ছিটানোর ক্ষেত্রে বেশি তৎপর বলে জানা গেছে।
শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, 'নির্বাচনে কালো টাকার বিপক্ষে আমি। কয়েকজন প্রার্থী কালো টাকা ছিটানো শুরু করেছেন জানতে পেরে পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসিয়েছি।'
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মারিফ আহম্মেদ বাপ্পি বলেন, টাকা দিয়ে ভোট কেনার অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাই এলাকার যুবসমাজের দুই-তিনটি দল রাত জেগে এলাকা পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নারী ভোটারদের টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে অতীতের চেয়ে এবার নির্বাচনী প্রচারণা-কর্মীদের তৎপরতা, নির্বাচনী অফিস ব্যয় অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশন থেকে এসব বিষয়ে তেমন মনিটরিং চোখে পড়েনি।
নগরের প্রতিটি এলাকা ছেয়ে আছে ব্যয়বহুল ডিজিটাল প্রিন্টেড পিভিসি শিটের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে। একেক প্রার্থীর বহুসংখ্যক বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টারে শোভা পাচ্ছে নগরের বিভিন্ন সড়ক। এর মধ্যে কিছু বিলবোর্ডে কৌশলে কোনো প্রার্থীর নাম-পরিচয় ব্যবহার করা হয়নি। এসব বিলবোর্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবীব কামালসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
গতকাল বরিশালের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে বসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে বরিশালের সাবেক মেয়র ও সদর আসনের সংসদ সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বিভাগীয়) মজিবুর রহমান সরোয়ার রিটার্নিং অফিসারকে বলেন, 'আমি এই শহরে যতবার নির্বাচন করেছি, এত ব্যয়বহুল প্রচারণা ও বিলবোর্ড দেখিনি। বর্তমান সরকারদলীয় প্রার্থী গোটা শহর ঢেকে ফেলেছেন বিলবোর্ড দিয়ে।'
প্রচারণা ব্যয়ের পাশাপাশি খরচের আরেক ধাপ যাচ্ছে বহিরাগতদের থাকা-খাওয়া-পরিবহনের পেছনে। বরিশাল শহরে এই মুহূর্তে সবচেয়ে নামি-দামি আবাসিক হোটেল 'এরিনা' ইন্টারন্যাশনাল। এর পরেই এ্যাথেনার অবস্থান। কোনোটিতেই রুম খালি নেই। এরিনার বেশির ভাগ রুমই ভাড়া নিয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী কামালের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারণায় আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্যদিকে এ্যাথেনাসহ নগরের বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন হিরনের সমর্থনে আসা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা।
এরিনা ও এ্যাথেনার মালিক বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সফিকুল আলম গুলজার জানান, এরিনায় রুমের ভাড়া শ্রেণীভেদে এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা করে। হোটেল ভাড়ার টাকা কে পরিশোধ করছেন- জানতে চাইলে গুলজার বলেন, নিয়ম অনুসারে যিনি রুমে থাকেন তিনিই ভাড়া দেন।
তবে তাঁর হোটেলেরই একাধিক কর্মী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রার্থীদের নির্দিষ্ট লোক বেশির ভাগ রুম বুকিং দিয়েছেন, তাঁরাই বিল দিয়ে যান।
নগরের সাগরদী এলাকায় গতকাল কথা হয় এমন একদল কর্মীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারীকর্মী বলেন, 'আমি বিড়ি কারখানায় কাম করি। কয়েক দিন ধইর‌্যা ভোটের কাজ করি। মানুষের বাড়ি বাড়ি যাইয়া লিফলেট দেই আর, ভোট চাই। এই কামের লাইগ্যা আমাগো এক নেতা দিনে ২০০ টাকা কইরা দেয়।'
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের বরিশাল মহানগরের সভাপতি নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, 'আমরা নির্বাচনে ব্যয় বা টাকা খরচের বিষয়ে এবার কাজ না করলেও দৃশ্যত বেশির ভাগ প্রার্থীই আইন ভেঙে নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে যে অনেক বেশি খরচ করছেন, তা প্রতীয়মান হচ্ছে।'
১৪ দলীয় সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের প্রধান সমন্বয়কারী সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা নির্বাচনী আচরণ-বিধির আওতার বাইরে কোনো খরচ করছি না।'
১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী আহসান হাবীব কামালের নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু বলেন, 'আমাদের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধির বাইরে একটি টাকাও কোথাও ব্যয় করেননি এবং করবেনও না।'
(প্রতিবেদনের তথ্য পাঠিয়েছেন রাজশাহী থেকে হায়দার আলী, রফিকুল ইসলাম ও রোকন রাকিব; খুলনা থেকে আরিফুজ্জামান তুহিন ও কৌশিক দে; সিলেট থেকে পার্থ সারথি দাস ও ইয়াহইয়া ফজল এবং বরিশাল থেকে তৌফিক মারুফ ও রফিকুল ইসলাম)

No comments

Powered by Blogger.