সিলেটে শ্বশুরবাড়ির ভোটই ফ্যাক্টর!

ময়মনসিংহের দুই জামাইয়ের লড়াই বেশ জমে উঠেছে সিলেটে। বড় জামাই বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর ছোট জামাই আরিফুল হক চৌধুরী।
নির্বাচনে দুই জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ির ভোটই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা আগেই জানা ছিলো। তাই শুরু থেকে শ্বশুরবাড়ির কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য দুই প্রার্থীর অবিরাম চেষ্টা। সেই চেষ্টায় যোগ হয়েছেন ময়মনসিংহের কন্যা কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান ও আরিফুলের স্ত্রী শ্যামা হক।

জানা গেছে, সিলেট নগরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রায় ৬৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। বাপের বাড়ি ময়মনসিংহের ভোট টানতে তাই সিলেট শহরে এখন ব্যস্ত প্রচারণায় সিলেটের দুই বধূ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের ভোট নিজ স্বামীর ঘরে টানতে এই দুই নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে অনেকের ধারণা। এছাড়া নগরীর নারী ভোটারদের মধ্যেও আসমা-শ্যামা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন বলে মনে করেন তারা।

১৫ জুন শনিবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চূড়ান্ত লড়াই পর্বে শেষে জানা যাবে কোন জামাই হবেন সিলেটের নগরপিতা। বড় জামাই না ছোট জামাই ? ময়মনসিংহের কোন মেয়ে ভোট আনতে পেরেছেন স্বামীর ঘরে!

সদ্য সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ময়মনসিংহের বড় জামাই। কামরান পত্নী আসমা কামরানের বাবার বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে। আবার অপর মেয়র পদপ্রার্থী নগর উন্নয়ন কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল হক চৌধুরীর পত্নী শ্যামা হক চৌধুরী। তারও বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ শহরেই।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের জামাই হিসেবে সিলেটে অবস্থানকারী ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধিবাসী ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন আসমা কামরান এবং শ্যামা হক। দু’জনই ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে কামরান ও আরিফের জন্য ভোট কামনা করে।

কামরান পত্নী আসমা কামরান জানালেন তার বাবার বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার ময়তা গ্রামে। নানার বাড়িতে জন্ম হলেও বাবার চাকরি সূত্রে দুই মাস বয়স থেকে সিলেটে অবস্থান করছেন। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। তিনি ছাতক থানা থেকে অবসরে গিয়ে সিলেটেই স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে সিলেটবাসী।

আসমা জানান, তিনি সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা। তিনি অতীতের মতোই ময়মনসিংহসহ অন্যান্য জেলার লোকজন কামরানকে ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

আরিফ পত্নী শ্যামা হক জানান, তার বেড়ে উঠা ময়মনসিংহ শহরের নওমহালে। বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আনন্দ মোহন কলেজে পড়াশোনা। এরপর ১৯৯১ সালে বিবাহ সুত্রে সিলেটে আসা।

তিনি জানান, তার বাবা হাজী এম এস হাসান ছিলেন ময়মনসিংহ বিসিকের চেয়ারম্যান। দাদাও ছিলেন পাকিস্তান আমলে পৌরসভার সচিব। শ্যামা জানান, তিনি সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির উপদেষ্টা। এর আগে কখনো তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের কারো কাছে ভোট চাইতে যাননি।

এবার প্রথম গিয়েছেন এলাকার লোকজন তাকে খালি হাতে ফেরাবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন শ্যামা হক চৌধুরী।

স্বামীর পাশাপাশি প্রচারণায় পিছিয়ে নেই প্রধান কামরান-আরিফের স্ত্রীরা। কামরানের আনারস প্রতীকের পক্ষে তার স্ত্রী আসমা কামরান ও আরিফের টেলিভিশন প্রতীকের পক্ষে স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী নিজ নিজ অঞ্চলের ভোট ছাড়াও সাধারণের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। এক ঝাঁক নারী কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন নগরীর পাড়ায়-পাড়ায়। যাচ্ছেন বাসায় বাসায়।

শ্যামা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার সাইফুর রহমানের সেই উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে আরিফুল হকের মাধ্যমে সিলেটের গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন জেলে। কামরানের পক্ষে সে সময় নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালান তার মা ও স্ত্রী। সেবার এই দুই নারীর আবেগময়ী ভোট প্রার্থনা, একটি ভোটের বিনিময়ে নিজেদের প্রিয়জনকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার আকূতি স্পর্শ করে নগরবাসীকে। ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে উপচে পড়ে কামরানের ভোটের বাক্স। গত নির্বাচনে মা ও স্ত্রীর কাঁধে ভর করেই কামরান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে।
তবে এবার মুক্ত কামরানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। উন্নয়ন বঞ্চনার অভিযোগ, নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা, এমসি ছাত্রাবাস পোড়ানোর নায়কদের আশ্রয় ও মদদদানসহ অস্ত্রবাজদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা করার নানা অভিযোগে বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। এর আগে হারিয়েছেন তার প্রিয় মাকেও।

এ অবস্থায় এবার শাশুড়ি ছাড়া একাই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন কামরান পত্মী আসমা কামরান। আসমা কামরান নিজে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজপথে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।

অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুল হক। তার স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী একজন গৃহিণী। স্বামীর পক্ষে এবার দ্বিতীয়বারের মতো গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে তিনি ২০০৩ সালে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আরিফুল হক চৌধুরী যখন কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হন তখনো তার ওয়ার্ডে স্বামীর পক্ষে গণসংযোগ করেছেন।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির পদবীধারী সিলেটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, “আসমা আপু বারবার আমাদের কাছে ছুটে এসেছেন। সমিতির অনেকেই তার ভক্ত। কামরানই সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন।” তার দাবি, সিলেটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬০ হাজার ভোট রয়েছে।

ওই সমিতির পদবীধারী অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আসমা কামরানকে বার বার দেখেছি। এবার শ্যামা আপুকে দেবো। তিনি এর আগে কখনো আমাদের কাছে হাত পাতেননি।”

তবে সুত্র জানিয়েছে, ওই সমিতির নেতারা ভেতরে ভেতরে অনেকটা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বৃহত্তর বরিশাল সমিতিসহ সিলেটে অবস্থানরত প্রায় সব সমিতিতে আগের মতো একক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সমিতির নেতারা। ফলে ভোট ভাগাভাগি হচ্ছে সবখানে।

No comments

Powered by Blogger.