দেশপ্রেমিক, নাকি দেশদ্রোহী?

সাধারণ জনগণের টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করছে যুক্তরাষ্ট্র, নজর রাখছে ইন্টারনেট গতিবিধিতে এই তথ্য ফাঁস করে এডওয়ার্ড স্নোডেন তুমুল আলোচনায়৷
নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কেউ তাঁকে বলছেন দেশপ্রেমিক, কেউ বলছেন দেশদ্রোহী৷

শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য পাননি, রাখতে পারেননি মেধার তেমন কোনো পরিচয়৷ হাই স্কুল পেরোতে পারেননি, তাই প্রথাগত লেখাপড়ায় ব্যর্থ৷ সেনাবাহিনীর রিজার্ভ প্রশিক্ষণে যেতে চেয়েছিলেন, সফল হননি সেখানেও৷ হলেন এমন জায়গায়, যেখানে তাঁর সঙ্গে শুধু উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জেরই তুলনা চলে৷ আসাঞ্জের মতো তিনিও এখন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শত্রু৷ ২৯ বছরের তরুণ মনে করেন, তাঁর দেশ তাঁকে পেলে কঠিন শাস্তি দিতে পারে৷ এ আশঙ্কায় আইসল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন৷ এখন কোনো হদিস নেই তাঁর৷ বার্তাসংস্থাগুলোর দেয়া খবর অনুযায়ী, হংকংয়ের একটি হোটেল ছাড়ার পর থেকে আর খোঁজ নেই এডওয়ার্ড স্নোডেনের৷
শুরুর দিকের ব্যর্থতা স্নোডেন ভুলিয়ে দিতে পেরেছেন প্রযুক্তি বিশারদ হয়ে৷ সেখানে এতটাই মেধা যে সুযোগ পেয়ে যান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাজ করার৷ সেই সুবাদেই সাধারণ জনগণের টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করা এবং ইন্টারনেট গতিবিধিতে নজর রাখার বিষয়টি জেনে যাওয়া৷ জেনে তথ্যটা গোপন রাখেননি, জানিয়ে দেন ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টকে৷ গার্ডিয়ানের সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড জানিয়েছেন, যতটুকু তথ্য স্নোডেন তাঁদের দিয়েছেন, তার খুব সামান্যই প্রকাশ করা হয়েছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে৷ তাতে অবশ্য এডওয়ার্ড স্নোডেনের বিচলিত হওয়ার কথা নয়৷ গোপন তথ্য প্রকাশ করে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কাজটি যে তিনি করেছেন, এটা নিজে না বললে জানতে হয়তো সময় লাগতো অনেক৷ স্বেচ্ছায় কেন নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন? স্নোডেন জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নজরদারির ক্ষমতা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং সে কারণেই তাঁর মনে হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি স্বীকার করে হলেও এমন কাজের নিন্দা প্রকাশ্যেই জানানো উচিত৷

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই মনে করছেন, স্নোডেন যা করেছেন তা স্রেফ দেশদ্রোহীতা৷ তবে সরকারের ভুল ধরিয়ে দেয়া দেশের জন্যই কল্যাণকর – এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে দেশপ্রেমিকের মর্যাদাও দিচ্ছেন কেউ কেউ৷ স্নোডেনের জন্য এ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজন নিরাপদ আশ্রয় হতে পারে এমন একটি দেশ৷ তাঁর প্রথম পছন্দ আইসল্যান্ড৷ সেই দেশ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ এখনো কোনো আবেদন করেনি৷ রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে হলে তাঁকে আইসল্যান্ডে যেতে হবে বলেও জানিয়েছে দেশটি৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্নোডেন চাইলে তাঁকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে৷ তবে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ মনে করেন, এডওয়ার্ড স্নোডেনের আর কোথাও না গিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশে আশ্রয় নেয়া উচিত৷

সূত্র- ডয়চে ভেলে সংবাদ

No comments

Powered by Blogger.